দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে চাঁদপুরের শিক্ষা কর্মকর্তারা

চাঁদপুর প্রতিনিধি |

চাঁদপুর জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিভাগে আট উপজেলায় আটজন শিক্ষা কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব উপজেলায় ৫২ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার স্থলে বর্তমানে কর্মরত আছেন ২৭ জন। এখনো শূন্য পদ রয়েছে ২৫ জনের। এ কারণে এই অর্ধেক সংখ্যক বিভিন্ন উপজেলা ও সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বছরের পর বছর একই কর্মস্থলে চাকরির কারণে অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে। নিয়মানুসারে তিন বছর পরপর বদলি বা কর্মস্থল পরিবর্তনের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তা এই জেলায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কারণ হিসাবে জানা গেছে, উপজেলা শিক্ষা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধা ভোগ করার জন্যই মূলত একই কর্মস্থলে অবস্থান করছেন বছরের পর বছর। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমা বেগম অদৃশ্য ক্ষমতা বলে প্রায় আট বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। তার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা মাঝে মাঝে বদলি হলেও তিনি বদলি হচ্ছেন না।

  

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র বলছে, কোনো কোনো উপজেলায় আবার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত হিসাবে। ওই সব কর্মকর্তা ৩-৪ বছরের অধিক সময় ধরে চলতি দায়িত্ব পালন করলেও বদলি হচ্ছেন না। ফরিদগঞ্জের শিক্ষা কর্মকর্তা চলতি দায়িত্বে চার বছরের বেশি সময় আছেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মনির হোসেন। জানা গেছে, সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের অনেকের সঙ্গে রয়েছে কতিপয় শিক্ষক নেতার বন্ধুত্ব সম্পর্ক। এসব কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে গিয়ে নানা ছলছুতোয় অন্য শিক্ষকদের ওপর খড়গহস্ত হলেও ওইসব শিক্ষক নেতারা অনুপস্থিত কিংবা দেরি করে বিদ্যালয়ে এলেও সখ্যতার কারণে তাদের কিছুই হয় না। আবার কোনো কোনো উপজেলায় সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা স্ত্রীও একই উপজেলায় শিক্ষকতা করছেন।  

কেন তারা একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর অবস্থান করছেন জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে প্রাথমিকের এক শিক্ষক নেতা জানান, মূলত বদলি বাণিজ্য করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই তারা একই কর্মস্থলে অবস্থান করেন দীর্ঘদিন। এমন দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি মধ্যস্বত্বভোগী হিসাবে কতিপয় শিক্ষক নেতা কাজ করে আসছেন।

বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর প্রাথমিকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক বদলি হয়। একটি বদলি হয় সমন্বয় বদলি। আরেকটি হয় প্রার্থির চাহিদার বিপরীতে শূন্য পদে। তখনই শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট মধ্যস্বত্ব চক্রটি অনৈতিকভাবে বদলি বাণিজ্যে তৎপর হয়ে ওঠেন। এই সময়ে শিক্ষক নেতাদের ঢাল বানিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তারা নিরীহ শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা বদলি বাণিজ্যের মিশনে নামেন। সমন্বয় বদলিতে সিনিয়র শিক্ষকদের নব্য জাতীয়করণকৃত রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না জেলার কোথায়ও। জানা যায়, সিনিয়র শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে জুনিয়র শিক্ষকদের বদলি করে কাগজে-কলমে সমন্বয় দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা অফিসগুলোর বিরুদ্ধে। এতে করে সিনিয়র শিক্ষকরা একই কর্মস্থলে যুগের পর যুগ শিক্ষকতা করে আসছেন। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার অর্জিত মানসম্পন্ন শিক্ষা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন সিনিয়র শিক্ষকরা। পাশাপাাশি তারা ক্লাস ও কর্মস্থল ফাঁকির মতো কর্মকাণ্ড চালিয়ে যান হরহামেশেই।

এসব বিষয় নিয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাহাবউদ্দিন বলেন ইতোমধ্যে এ জেলায় অনেক শিক্ষা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেছেন। দেশের কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর হয়তো এ সময় বদলি করছেন না। আবার এটাও ঠিক কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট উপজেলায় থাকতেও চাচ্ছেন বলে তিনি স্বীকার করেন। তবে বর্তমানে বদলি শুরু হয়েছে বলে এ কর্মকর্তা জানান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003026008605957