ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ৬নং রাজগাতী ইউনিয়নের কাশিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে সনদপত্র ছাড়াই কর্মরত আছেন দুই শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় একজন এনটিআরসিএর নিবন্ধন সদনপত্রবিহীন ১৭ বছর যাবৎ এবং অন্যজন ভুয়া নিবন্ধন সনদপত্র দাখিলের মাধ্যমে ১০ বছর যাবৎ চাকরি করে আসছেন। শিক্ষকদের এ রকম অসৎ উপায়ে চাকরিতে যোগদানের বিষয়টি ভালো চোখে দেখছে না সুশীল সমাজ।
জানা গেছে, ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর সিলেটের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের পাঁছদরিল্লা গ্রামের মো. হারুন অর রশিদ। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই ক্রীড়া শিক্ষক পদে কাশিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন তিনি। বর্তমানেও ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। কিন্তু তিনি ওই চাকরিতে যোগদানের সময় ভুয়া (এনটিআরসিএ নিবন্ধন) সনদপত্র দাখিল করেন। যা পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
অন্যদিকে ২০০৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর কাশিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের কাম-কম্পিউটার পদে যোগদান করেন স্থানীয় শামীম ভূঁইয়া নামে এক শিক্ষক। কিন্তু তিনিও এনটিআরসিএর নিবন্ধন সনদপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিবন্ধন সনদপত্র না পাওয়ায় ভুয়া সনদপত্রের তালিকায় তার নাম প্রদর্শন করেন।
শিক্ষক শামীম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার সময় সনদপত্র প্রদর্শন করতে হয় নাই। অর্থাৎ অনলাইনে আসার পূর্বেই আমার নিয়োগ হয়। ফলে আমার এনটিআরসিএ নিবন্ধন সনদ প্রদর্শন করার প্রয়োজন নাই।’ এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওই বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক হারুন অর রশিদের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তা রিসিভ করেননি তিনি। কাশিনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিউর রহমান বলেন, ‘এনটিআরসিএ নিবন্ধন সনদ সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি জানতে পেরেছি। কিন্তু চাকরিতে যোগদানকালীন শিক্ষকের সনদপত্র যাচাইবাছাইয়ের কাজ তো আমাদের নয়। এখন এটা কর্তৃপক্ষের বিষয়।’ তবে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানান তিনি।
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘প্রতিষ্ঠান প্রধান যাবতীয় কাগজপত্র যাচাইবাছাই না করেই নিয়োগ দিয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে তা যাচাইবাছাইয়ের জন্য পাঠান। এখানে আমরা (এনটিআরসিএ) কেউ সনদ যাছাই করতে চাইলে তা করে থাকি। তবে জাল সনদের বিষয়টি দেখভাল করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) নিরীক্ষা বোর্ড।’এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোফাক্কারুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি আমাদের জানা নেই। আর এটা মাউশির দেখার বিষয়।’
ময়মনসিংহের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। তবে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) মুকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জাল সনদ দিয়ে যারা চাকরি নিয়েছেন তাদের তালিকা করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।