দুর্গম এলাকার স্কুলগুলো খুলে দেয়া হোক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত বছর মার্চ মাস থেকে দেশের সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ আছে। এ সময়ে শহরের ছেলেমেয়েরা কোনো না কোনোভাবে পড়ালেখা ধরে রেখেছে। শহরাঞ্চলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো টিকে থাকার স্বার্থে হলেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু গ্রামের ছেলেমেয়েরা এমন সুযোগ পাচ্ছে না। ২০২০ সালে যে শিশু শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন বই পড়তে শুরু করেছিল, সে এখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়ে প্রায় অর্ধেক শিক্ষাবর্ষ অতিবাহিত করছে। প্রথম শ্রেণিতে মূলত শব্দ তৈরি, পড়তে ও লিখতে শেখে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে এসে শিক্ষার্থী নিজে নিজে পড়তে এবং বাক্য গঠন করে লিখতে শুরু করে। স্কুল বন্ধ থাকায় গ্রামের স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অক্ষর ঠিকমতো চিনবে কিনা, সন্দেহ থেকেই যায়। মঙ্গলবার (১৫ জুন) সমকাল পত্রিকায় পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, কভিড-১৯ সারাবিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থাকে দারুণভাবে ক্ষতি করলেও আমাদের মতো খুব কম দেশ পাওয়া যাবে যেখানে একটানা দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। আমেরিকা প্রবাসী বিজ্ঞানী ড. মংসানু মারমা জানিয়েছেন, আমেরিকায় স্কুলগুলো বন্ধ ছিল না; কেউ ১০০% অনলাইন, কেউ অনলাইন ও ইন-পারসন মিশ্রণ করে স্কুল করেছে। এখন সবাই স্কুলে যাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সেন্টি চাকমা জানিয়েছেন, অ্যাডিলেড শহরে মাত্র ৪৫ দিনের মতো স্কুল বন্ধ ছিল। ওই সময় অনলাইনে পাঠদান চালু ছিল। ইন্দোনেশিয়া প্রবাসী ড. সৈয়দ আজিজুর রহমান বলেন, সেদেশের কিছু প্রদেশে স্কুল বন্ধ থাকলেও ১০০% অনলাইনে পাঠদান চলছে। কিছু প্রদেশে সপ্তাহে তিন দিন স্কুলে আর বাকি দিনগুলোতে অনলাইনে পাঠদান হচ্ছে। রাজধানী জাকার্তায় ১০০% শিশু অনলাইনে স্কুল করছে। দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর অনেক দেশ শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পারলেও আমরা পারিনি।

করোনাকালে দেশে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে গুটিকয়েক সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ী, আর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছাত্রছাত্রীরা; বিশেষ করে দুর্গম পার্বত্যাঞ্চলের শিশুসহ চরাঞ্চলের ছেলেমেয়েরা। কে না জানে, দুর্গম ও চরাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়ার হার সবচেয়ে বেশি! সরকারিভাবে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে সংসদ টিভি, অনলাইন প্রোগ্রাম অব্যাহত রেখেছে সত্য, কিন্তু দুর্গম এলাকার ছেলেমেয়ে, অভিভাবকরা সে খবর রাখেন কতজন?

করোনাকালে শিশুদের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া একটি চ্যালেঞ্জিং সিদ্ধান্ত হলেও দুর্গম, চরাঞ্চল এবং কিছুটা বিচ্ছিন্ন এমন শত শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে, যে স্কুলগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। দেশের অনেক পাড়া বা গ্রাম পাওয়া যাবে যেখানে বাইরের লোকজন খুব কমই যাওয়া-আসা করে। এ ছাড়া গ্রামগুলোতে শিশুরা আগে যেমন দল বেঁধে খেলাধুলা, চলাফেরা করত, এখনও তেমনটি করছে। ফলে তাদের জন্য স্কুল খুলে দিলে খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

আমাদের সমাজব্যবস্থার বিচারে শিক্ষক সমাজ (বেসরকারি স্কুল বাদে) থেকে স্কুল খুলে দেওয়ার দাবি চিন্তা করতে পারি না। শিক্ষকদের বেতন, পদমর্যাদা নিয়ে যতটা সচেতনতা দেখা যায়, দেশের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার ব্যাপারে বিকল্প অপশনগুলো নিয়ে তাদের কথা বলতে দেখা যায় না। তাই সরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার ভাবনা সরকার বা সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়কেই করতে হবে। শিক্ষা কার্যক্রম যতটা সম্ভব চালু রাখার অপশনগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, শহরের সমাজ এবং পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনা করে সমগ্র দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে তাতে দূরবর্তী স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের প্রতি অন্যায় করা হবে। শহরের স্কুল খুলে দেওয়া মানে স্কুলের সামনে মেলা বসানো। ছাত্রছাত্রীদের চেয়ে অভিভাবকরা অতিউৎসাহিত হয়ে স্কুলের সামনে বসে আড্ডা দেন, গল্প করেন। অভিভাবকদের সমাগমকে কেন্দ্র করে ফেরিওয়ালা, ভ্যানওয়ালারাও জড়ো হয়। কিন্তু গ্রামের স্কুলের পরিবেশ ভিন্ন। এসব স্কুলে ছাত্রছাত্রী ছাড়া অভিভাবকদের দেখা যায় না বললেই চলে। গ্রামের স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এক থেকে দুটি পাড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। বর্তমানে দূর-দূরান্ত থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পরিস্থিতি খুব একটা বেশি নেই। তাই দুর্গম এলাকার স্কুলগুলো আশু খোলার উদ্যোগ নেওয়া দরকার।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

পাশাপাশি শিক্ষক সমাজকেও গ্রামের এই দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। তবেই আমরা আমাদের ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়া রোধ করতে কিছুটা হলেও সক্ষম হবো। এ ছাড়া এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দুর্গম অঞ্চলের ছাত্রছাত্রীদের বিশেষ মনোযোগ দিয়েই গড়ে তুলতে হবে। নয়তো করোনার এই ধাক্কায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ নীরবে ঝরে পড়বে।

লেখক : ঞ্যোহ্লা মং, উন্নয়নকর্মী


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.018306970596313