দুর্নীতির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান খুবই নাজুক বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, শুনেছি রক্ত পরীক্ষা করে নাকি খুনি শনাক্ত করা যায়। এমন একটি পরীক্ষা করে যদি দুর্নীতিবাজ ধরার ক্ষেত্রে আবিষ্কার হতো তবে জাতি উপকৃত হতো। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুনীতি দমন কমিশন (দুদক) জোরালো অভিযান ও জনমত গঠন করে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, কিন্তু চোর না শোনে ধর্মের কাহিনী।
গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত দিনব্যাপী গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মো. মোজাম্মেল হক খান।
দুদক কমিশনার আরো বলেন, দুর্নীতি একটি প্রচীনতম রোগ। সৃষ্টির পর থেকে ছিলো। ভবিষ্যাতেও থাকবে। দুর্নীতি বিরোধীরা বলেন, দেশ রসাতলে গেছে। আর সরকারি দলের লোকজন বলেন, দেশে কোনো দুর্নীতি নেই। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। দেশে এখন লাখ লাখ বা কোটি নয়, হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, নিজে দুর্নীতি করে আমরা অপরকে দুর্নীতি না করার ছবক দিচ্ছি। এই প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। দুর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে হবে। দুদকের একার পক্ষে দুর্নীতি নিমুর্ল করা সম্ভব নয়। দুনিয়া ও আখেরাতে ভালো চাইলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের দাঁড়াতেই হবে।
জানা গেছে, গণশুনানিতে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে বিআরটিএ অফিসের বিরুদ্ধে। এই অফিসের ঘুষ বাণিজ্য ও গণহয়রানী নিয়ে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করলে দুদক কর্মকর্তারা তিরস্কারের জড়িতদের দ্রুত সেবা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
দিনব্যাপী গনশুনানিতে সেবাগ্রহীতারা বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি অফিসের অনিয়ম, ভোগান্তি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন। বিভিন্ন অফিসের দুর্নীতি, হয়রানী ও ঘুষ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ১২৩ ব্যক্তি অভিযোগ করেন। এদিকে অভিযোগ দিয়ে অনেকের অভিযোগ তালিকাভুক্ত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। গণশুনানিতে ঝিনাইদহ পৌরসভা, এসিল্যান্ড অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি বিভাগ, বিএডিসি, পাসপোর্ট অফিস ও সেটেলমেন্টসহ ২১টি অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। এর মধ্যে দুইটি অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় দুদক।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন দুদক মহাপরিচালক (অনুসন্ধান) জাকির হোসেন, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন, খুলনার পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ, ঝিনাইদহ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার সাঈদ, ঝিনাইদহ জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এন শাহজালাল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ঝিনাইদহ সমন্বিত জেলা দুর্নীতি দমন অফিসের সহকারী পরিচালক তরুণ কান্তি ঘোষ।