নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত ভাবে এ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার (২৯ এপ্রিল) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে স্কুল- কলেজের এবং বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ থেকে কারিগরি ও মাদরাসার চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। গত বছরের অক্টোবর মাসের ঘোষণায় মোট ২ হাজার ৭৩০ টি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হলেও চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছে ২ হাজার ৬৫০টি প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে ১ হাজার ৬৩৩টি স্কুল-কলেজ ও ৯৮২টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও মাদরাসা রয়েছে। ১১৫টি প্রতিষ্ঠান তথ্য গোপন করে, ভুয়া তথ্য দিয়ে, অনিয়ম করে, ব্যানবেইসের দুইজন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে তথ্য জালিয়াতি করে, ম্যানেজিং কমিটিকে না জানিয়ে ও ঘুষ দিয়ে এমপিওভুক্তির প্রাথমিক তালিকায় ঠাঁই নিয়েছিলেন। কিন্তু দৈনিক শিক্ষাডটকমসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ও সংসদ সদস্যদের ডিও লেটারের ভিত্তিতে ফের দুটি কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১১৫টি স্কুল-কলেজ-মাদরাসা ও কারিগরি এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়। এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধীদের নামে, প্রায় অস্তিত্বহীন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান ছিলো।
জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১ হাজার ৬৫১ টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্তভাবে ১ হাজার ৬৩৩টি স্কুল ও কলেজের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এমপিওভুক্তির চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৮টি স্কুল ওকলেজ বাদ পড়েছে।
এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯৯১ টি মাধ্যমিক স্কুল, ৪৩০টি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ৬৮টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৯২টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৫২ টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। মোট ১ হাজার ৬৩৩ টি স্কুল-কলেজ চূড়ান্ত তালিকায় স্থান পেয়েছেন। যদিও গত২৩ অক্টোবর প্রকাশিত প্রাথমিক তালিকায় ১ হাজার ৬৫১টি স্কুল-কলেজ স্থান পেয়েছিল।
জানা গেছে, ৯টি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ৪টি মাধ্যমিক স্কুল, ১টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৪ টি ডিগ্রি কলেজ চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
এমপিওভুক্তির জন্য চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছে ২৬৩টি বিএম কলেজ, ৬০ টি কৃষি ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান এবং ১৬০ টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান।
আর তালিকা থেকে ২০ টি বিএম কলেজ, ১৭টি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠান ও ২টি কৃষি ডিপ্লোমা প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে।
৪৯৯ মাদরাসার মধ্যে ৩২৪টি দাখিল মাদরাসা, ১১৯ টি আলিম মাদরাসা, ৩৪টি ফাযিল মাদরাসা ও ২২টি কামিল মাদরাসা চূড়ান্ত তালিকায় আছে।আর তালিকা থেকে ৩৪ টি দাখিল মাদরাসা, ৯ টি আলিম মাদরাসা, ৮টি ফাযিল মাদরাসা এবং ৭টি কামিল মাদরাসা চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানায়, তথ্য যাচাই বাছাইয়ের প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ২;হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েছে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিও কোড এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর৷,মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও জানায়, শিক্ষকরা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১ জুলাই থেকে বেতন ভাতা পাবেন বলেও জানানো হয়েছে। আর কোন প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে তার এমপিও স্থগিত করা হবে বলেও জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা চলতি অর্থবছর থেকে বেতন ভাতা পাবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে গত ২২ এপ্রিল মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, 'কেন নয়। আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। আপনি জানেন কয়েকটি ধাপে প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির কাজ চলছে। প্রতিষ্ঠান তথ্য যাচাই বাছাই হচ্ছে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। এরপর আরও কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সে কাজ শেষ হলেই শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন। চলতি অর্থবছরেই নতুন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতন ভাতা পাবেন বলে আশা করছি।'
গত বছরের ২৩ অক্টোবর দুই হাজার সাতশ ত্রিশটি নতুন এমপিওভুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা ১ হাজার ৬৫১টি, মাদরাসা ৫৫৭টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৫২২টি। ২ হাজার ৭৩০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিতে পাঁচ দফা শর্ত আরোপ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এমপিওভুক্তির প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১ হাজার ৬৫১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৯৫ টি মাধ্যমিক স্কুল, ৪৩৯টি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, ৬৮টি স্কুল এন্ড কলেজ, ৯৩টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ এবং ৫৬ টি ডিগ্রি কলেজ ছিল।
এমপিওভুক্তির জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ১ হাজার ৭৯টি প্রতিষ্ঠান মধ্যে মাদরাসা ছিল ৫৫৭টি এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল৫২২টি। এর মধ্যে দাখিল মাদরাসা ছিল ৩৫৮টি, আলিম মাদরাসার সংখ্যা ছিল ১২৮টি, ফাযিল মাদরাসা ছিল ৪২টি ও কামিল মাদরাসা ছিল ২৯টি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কারিগরি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কৃষি ৬২টি, ভোকেশনাল স্বতন্ত্র ৪৮টি, ভোকেশনাল সংযুক্ত ১২৯টি, বিএম স্বতন্ত্র ১৭৫টি ও বিএম সংযুক্ত ১০৮টি প্রতিষ্ঠান ছিল।