পাবলিক বিশ্ববিদ্যালগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগও একই কমিশনের মাধ্যমে হতে পারে। বার্ষিক প্রতিবেদনে সুপারিশ আকারে এই প্রস্তাব করেছে ইউজিসি। আজ রাতে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রতিবেদনটি পেশ করবেন ইউজিসির ৯ সদস্যের একটি দল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০২১ সালের কার্যক্রমের ওপর ইউজিসির ৪৮তম প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে ১৭টি সুপারিশ আছে। এছাড়া এতে দেশের অর্ধশতাধিক পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কার্যক্রমের প্রতিফলন আছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগে প্রায়ই স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। নিয়োগে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত এবং যোগ্য জনবল নিয়োগের উদ্দেশ্যে একটি স্বতন্ত্র নিয়োগ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। এছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের জন্য ইউজিসি প্রণীত নিয়োগের ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ নীতিমালা বাস্তবায়নে সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনিয়মের জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ বা বিচারিক ক্ষমতা নেই ইউজিসির। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম, অতিরিক্ত ছাত্র ভর্তি, সনদ বাণিজ্য, আর্থিক অনিয়ম ইত্যাদি হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা ইউজিসির থাকা প্রয়োজন। ইউজিসি বিভিন্ন অনিয়মের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ এবং দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ইউজিসির সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারে, আবার নাও পারে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অনেক সময়ও লেগে যায়। নিজেই যেন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারে সেজন্য ইউজিসিকে ক্ষেত্র বিশেষে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান করা যেতে পারে।
কয়েক বছর ধরে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়স ও সময়ের বাধ্যবাধকতা শিথিল করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। প্রতিবেদনে এ ব্যাপারে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষায় একাধিকবার অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা যেতে পারে। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর কোনো শিক্ষার্থী যে কোনো সময় ভর্তির সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। একইভাবে একজন শিক্ষার্থীকে বিষয় পরিবর্তন করার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
পাশাপাশি এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি এবং কোন বিভাগে কতজন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত কী হবে- এসব নির্দিষ্ট করার কথা এতে উল্লেখ আছে। পাশাপাশি আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা যাবে না। বিভাগে শাখায় ৪০ জন ভর্তির বাধ্যবাধকতার পরামর্শ দিয়ে বলা হয়, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের অনধিক তিন মাসের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। আর ভর্তি জটিলতা নিরসনে সরকার প্রয়োজনে একটি স্বতন্ত্র কমিশন গঠন করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়।প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগের সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রবর্তন, শিক্ষার্থীদের নৈতিক অধঃপতন ঠেকাতে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নৈতিক শিক্ষার বিষয়টি ?যুক্ত করা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণে ও ক্যাম্পাস স্থাপনে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি, গুণগত এবং মানসম্মত আন্তর্জাতিক মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং করা এবং বিশাল সমুদ্রসীমা থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জন বা সুনীল অর্থনীতিকে সামনে রেখে একাডেমিক শিক্ষা ও গবেষণার ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। এ লক্ষ্যে একটি সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট গঠন এবং বিশেষায়িত গবেষণা পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশেষ গবেষণা তহবিল প্রদানের সুপারিশ করা হয়।