দেড় বছরে পদ্মা সেতু থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার টোল আদায়

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দেড় বছর পূর্ণ হয়েছে গত ২৬ ডিসেম্বর। আর উদ্বোধনের পর ছয় কিস্তি ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। গত দেড় বছরে টোল আদায় হয়েছে ১ হাজার ২০৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন এই তথ্য জানান।

মনজুর হোসেন বলেন, ‘আমাদের যা প্রত্যাশা ছিল তেমনই হচ্ছে। যান চলাচল বেড়েছে। টোল আদায়ে যা ধারণা ছিল, আমরা তার চেয়ে বেশি পাচ্ছি। এখন গড়ে প্রায় প্রতিদিন ২ কোটি টাকার ওপরে টোল আদায় হচ্ছে।’ 

মনজুর বলেন, ২১ জেলায় সংযোগ যখন বাড়বে, তখন টোল আদায় আরও বেশি বেড়ে যাবে। বিভিন্ন সময়ে সমীক্ষা থেকে যা ধারণা করা হয়েছিল, আমরা সেই বাড়ার দিকেই আছি। 

টোল আদায় গত দেড় বছরে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি হয়েছে জানিয়ে মনজুর বলেন, ১ হাজার ২০৮ কোটি ৫২ লাখ ৭৯ হাজার টাকা টোল আদায় হয়েছে। 

সেতু বিভাগ থেকে জানা যায়, গত ৫ এপ্রিল পদ্মা সেতুর ঋণের প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তি মোট ৩১৬ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার ৫০ টাকা পরিশোধ করা হয়। ১৯ জুন পরিশোধ করা হয় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির ৩১৬ কোটি ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩ টাকা। আর ১৮ ডিসেম্বর পঞ্চম ও ষষ্ঠ কিস্তির ৩১৫ কোটি ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৪৪২ টাকা পরিশোধ করা হয়। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ৯৪৮ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৮৫ টাকা। 

সচিব বলেন, তবে ঋণ শোধ করে কোনো উদ্বৃত্ত অর্থ নেই, এটাকে সেভাবে বলা যাবে না। আমরা কয়েক জায়গায় টাকা পরিশোধ করি। এর মধ্যে ঋণের টাকা পরিশোধ করা হয়। এই ঋণের টাকা কোনো বাইরের ঋণ নয়। সেতু কর্তৃপক্ষ ঋণ নিয়েছে সরকারের অর্থ বিভাগের কাছ থেকে। সেই টাকা পরিশোধ করা হয়। 

এদিকে পদ্মা সেতুতে যান চলাচল শুরুর দেড় বছরে এর পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচ হয়েছে ১৪২ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ২৫ টাকা। 

সচিব বলেন, যে টাকা আয় হয়, সেখান থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এর বাইরে অপারেশনাল ও মেইনটেন্যান্স টাকা খরচ হয়। কোনো টাকা এখানে থাকবে না। কারণ প্রথম বছরে অপারেশনাল ও মোবিলাইজেশন খরচ বলে একটা অর্থের বিষয় থাকে। তাই বছরে খরচ বেশি হয়। এরপর থেকে যা মেইনটেন্যান্স যাবে। আর এখানে যদি টাকা লাগে, তাহলে আরও যে সেতু বিভাগের আন্ডারে স্থাপনা আছে, সেখান থেকে অর্থ নেওয়া হয়। 

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রতিবছর কী পরিমাণে যানবাহন চলাচল করবে, তা নিয়ে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি বিস্তারিত সমীক্ষা করে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এতে দেখা যায়, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে যদি পদ্মা সেতু উদ্বোধন হয়, তাহলে ওই বছর সেতু দিয়ে চলাচল করবে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন। সংখ্যাটি প্রতিবছরই বাড়বে। ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৬৭ হাজার যানবাহন চলবে পদ্মা সেতু দিয়ে। 

এডিবির সমীক্ষা বলছে, পদ্মা সেতু দিয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে যে ২৪ হাজার যানবাহন চলবে, তার মধ্যে বাস চলবে ৮ হাজার ২৩৮টি, ট্রাক ১০ হাজার ২৪৪টি, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলবে ৫ হাজারের বেশি। সমীক্ষায় আরও প্রাক্কলন করা হয়েছে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ২৭ হাজার ৮০০টি। ২০৩০ খ্রিষ্টাব্দে হবে ৩৬ হাজার ৭৮৫। ২০৪০খ্রিষ্টাব্দে দিনে যানবাহন চলাচল বেড়ে দাঁড়াবে ৫১ হাজার ৮০৭টি। 

সচিব জানান, যে সমীক্ষা করা হয়েছে, তেমনই যানবাহন চলাচল করছে। হয়তো কখনো কম বা বেশি। তবে আমাদের যা প্রত্যাশা ছিল, সেটি ঠিক আছে। মঙ্গলবার সারা দিনে যান চলাচল করেছে ১৭ হাজার ৩০০। আর সোমবার এর পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ১৬টি। আর ২২ ডিসেম্বর ২৪ হাজার ৯৪৪টি গাড়ি। 

সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে ঋণ নিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি ৫২ লাখ টাকা। 

অর্থ বিভাগের সঙ্গে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ঋণ চুক্তি অনুযায়ী, ১ শতাংশ সুদসহ ৩৫ বছরে ঋণের টাকা ফেরত দেবে সেতু কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে অর্থ বিভাগ থেকে নেওয়া ঋণের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা কিস্তিও পরিশোধ করেছে সংস্থাটি। চুক্তি অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে সেতুটির ঋণ পরিশোধ শুরু হয়েছে এবংএই ঋণ পরিশোধের জন্য ২০৫৬-৫৭ অর্থবছর পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ঋণ পরিশোধের শিডিউল অনুযায়ী প্রতি অর্থবছরে চারটি কিস্তি করে সর্বমোট ১৪০টি কিস্তিতে সুদ-আসল পরিশোধ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027608871459961