চমেকসুদেশের একমাত্র মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সরকারি ও বেসরকারি মিলে দেশে আছে অর্ধশতাধিক মেডিকেল কলেজ। কিন্তু কোনোটিতেই নেই বৈধ কোনো ছাত্র সংসদ। যে কারণে এসব মেডিকেলের লক্ষাধিক শিক্ষার্থী নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব দাঁড় করানোর সুযোগও পাচ্ছে না। তাদের রাজনৈতিক রেষারেষিতে জড়ানোর ফলে অনেক সময় এসব মেডিকেল কলেজের কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করতে হয়। তবে ব্যতিক্রমী এক চিত্র আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে (চমেক)। এখানে নেতৃত্ব ঠিক করা হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবছর নির্বাচন হওয়ায় এখানে নেই কোনো অন্তর্কোন্দল। ছাত্র সংসদের নেতারা শিক্ষার্থীদের সুবিধা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগী হওয়ায় চমেকের সাধারণ শিক্ষার্থীরা পেয়েছে দেশের প্রথম বোনস লাইব্রেরি। তা ছাড়া ছাত্র সংসদের উদ্যোগে এখানে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য, স্বাধীনতা গ্যালারি, শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা কর্নার, মানসম্মত ক্যাফেটেরিয়াসহ করা হয়েছে আরও অনেক কিছুই। শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শৈবাল আচার্য্য।

১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২০ সেপ্টেম্বর চমেকের উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। সে সময় তার সঙ্গে তৎকালীন প্রাদেশিক মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। এমবিবিএস কোর্সে ৫০টি আসন দিয়েই কে বি ফজলুল কাদের রোডে ৭৯ একর জায়গায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। কলেজের স্মৃতিসৌধের পাশে একতলাবিশিষ্ট একটি সেমিপাকা ভবন দিয়ে শুরু হয় চমেক ছাত্র সংসদের। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ ভবনটিই ছিল চমেকসুর সংসদ ভবন। তবে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট কলেজের নতুন একটি একাডেমিক ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে এ ভবনের পাশে 'চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ'-এর প্রধান কার্যালয় নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে নতুন এ ভবনেই চলছে ছাত্র সংসদের সাংগঠনিক কার্যক্রম। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে ভিপি হিসেবে জয়ী হয়েছিলেন বোরহান উদ্দিন।

চমেকে প্রতিবছর ২০টি পদে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কলেজের অধ্যক্ষই সংসদের সভাপতির দায়িত্বে থাকেন। সর্বশেষ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৭ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ মনোনীত পূর্ণ প্যানেল। নির্বাচনের মাধ্যমে ২০তম সহসভাপতি (ভিপি) হিসেবে মো. জামিউর রহমান আকাশ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ ছাড়া প্রো-ভিপি হিসেবে সাইফুল ইসলাম মুরাদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে এমএ আউয়াল রাফি মনোনীত হন। 
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের (চমেকসু) সভাপতি ও কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. সেলিম মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, 'দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের মধ্যে একমাত্র চমেকে রয়েছে ছাত্র সংসদ। প্রতিবছর এখানে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। কলেজে সংসদ থাকায় একাডেমিকসহ সার্বিক কাজ পরিচালনা করতে অনেক সুবিধা হয়। একাডেমিক কাউন্সিলের যে কোনো সিদ্ধান্ত চমেকসুর ভিপি এবং সাধারণ সম্পাদকের ভোট ছাড়া পাস হয় না।' বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার কার্যকরী সদস্য ও চমেকসুর সাবেক সদস্য ডা. রিজোয়ান রেহান বলেন, 'একসময় শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী কিছু ছাত্র কলেজে চাঁদাবাজিসহ নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাত। ছাত্র সংসদের নেতৃত্বে বর্তমানে এসবের কিছুই নেই এখানে।' 

সাবেক ও বর্তমান নেতৃত্বে থাকা নেতাদের চোখে ছাত্র সংসদ : চমেক ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসিরউদ্দিন পাটোয়ারী শুভ বলেন, 'শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগ ও সংসদ যৌথভাবে কাজ করছে। ছাত্র সংসদ থাকার কারণে ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসের অনেক পজেটিভ পরিবর্তন এসেছে।'

মো. জামিউর রহমান আকাশ বলেন, 'চমেকসুকে দেশের অন্যান্য ছাত্র সংসদ গঠনের একটি উদাহরণ বলা যেতে পারে। আমরা চাই আমাদের সংসদের বার্ষিক নানা কর্মকাণ্ড দেখে অন্যান্য মেডিকেল ছাত্র সংসদ গঠন ও নির্বাচন অনুষ্ঠানে উৎসাহী হোক।'

সাধারণ সম্পাদক এমএ আউয়াল রাফি বলেন, 'ছাত্র সংসদের নেতৃত্বের কারণে দেশের একমাত্র ব্যতিক্রম প্রতিষ্ঠানে রূপলাভ পেয়েছে চমেকসু।'

ছাত্র সংসদ থাকায় মিলছে যেসব সুযোগ-সুবিধা : নব্বই দশক থেকেই দেশের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, রাজাকারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে চমেকসু। চমেকসুর ভিপি এবং সাধারণ সম্পাদক একাডেমিক কাউন্সিলের মেম্বার। রাজনৈতিক রেষারেষিতে চমেক বন্ধ না হওয়ায় এখানে নিয়মিত চলে শিক্ষা কার্যক্রম। ছাত্র সংসদ ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে 'সিএমসি ক্যাফে' স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবে রূপ দেয়। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করে 'সাহিত্য লাইব্রেরি'। যেখানে তুলির রঙে তুলে ধরা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নানা ইতিহাস। সে সঙ্গে এখানে রাখা হয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামের মতো বিশিষ্টজনের ছবি ও লেখা বই। শিক্ষার্থীদের মক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানাতে কলেজের কমনরুমের দেয়ালে সাঁটানো হয়েছে ইতিহাসসমৃদ্ধ ছবি, বইসহ আরও অনেক কিছু। চমেকসুর নেতৃবৃন্দের তত্ত্বাবধানে এখানে বিশ্বের প্রথম বোনস লাইব্রেরিও স্থাপন করা হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, যে কোনো প্রয়োজনে দিন-রাত অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করে যাচ্ছেন চমেকসুর নির্বাচিত সদস্যরা। শিক্ষক, ছাত্রলীগ ও সংসদের সঙ্গে আমাদের এক ধরনের পারিবারিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যে কারণে পুরোপুরি ব্যতিক্রমী পরিবেশ বিরাজ করে চমেকসুতে।'


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024440288543701