বাংলাদেশের নাসিং সেক্টরকে বিশ্বমানের করা হবে। এ জন্য নিজস্ব উদ্যোগের পাশাপাশি কানাডা সরকারের সহায়তা চেয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। আজ বুধবার দুপুরে নিজ মন্ত্রণালয়ে কানাডার হাই কমিশনার লিলি নিকোলসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকালে হাই কমিশনার কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ও উচ্চমানের নার্স টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করাসহ স্বাস্থ্যখাত সংক্রান্ত নানান বিষয়ে আলোচনা করেন। কানাডায় বেশি বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে যাদের ভালো চিকিৎসার জন্য দক্ষ নার্স, চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট দরকার। কানাডার হাই কমিশনার ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে এই নার্স বা স্বাস্থ্যকর্মীদের আন্তর্জাতিক মানের দক্ষ হতে হবে বলে জানান তিনি। এ জন্য কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে একটি উন্নত ও বিশ্বমানের নার্স টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৯৫ হাজার শিক্ষিত নার্স আছেন, যারা বিশ্বের যেকোনো দেশের স্বাস্থ্যসেবায় ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে তাদেরকে আরো বেশি দক্ষ ও বিশ্বমানের করতে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে হবে। এ জন্য দক্ষ আমাদের প্রশিক্ষকও দরকার হবে। এ ক্ষেত্রে কানাডা সরকার বাংলাদেশে যে উন্নতমানের টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তা প্রশংসনীয়।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও নার্সিং পেশাকে যুগোপযোগী করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের উদ্যোগের পাশাপাশি কানাডা সরকারের সহায়তা পেলে বাংলাদেশের নার্সিং সেক্টরকে আন্তর্জাতিক মানের করা হবে।’
আলোচনায় কানাডা হাই কমিশনার বাংলাদেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশেষ করে প্রাইভেট মেডিক্যালে অধিক সংখ্যক সিজারিয়ান বেবি জন্ম নেয় বলে উল্লেখ করেন। একইসঙ্গে সাথে তিনি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা, গ্রামের মেয়েদের স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্য করা প্রসঙ্গেও কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে বর্তমানে ১৪ হাজারের বেশি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে দেশের প্রায় ৪ হাজার ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামে থাকা মেয়েদেরকে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রদান সহ গ্রামীণ মায়েদের জন্য ইন্সটিটিউশনাল ডেলিভারি সিস্টেম সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ সব স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে ২৪ ঘন্টা সার্ভিসের আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন।স্বাস্থ্যখাতে বাজেট মাত্র ১ শতাংশ এবং কানাডার স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ১২ শতাংশ। বাংলাদেশ এত কম বাজেটে এত বিরাট সংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবে কি না এবং ভবিষ্যতে কানাডা সরকারের কোনো ধরনের সহায়তা লাগবে কি না সে ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে কানাডা হাই কমিশনার জানতে চাইলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে আরো কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়ে আরেকবার বৈঠকে বসবার আমন্ত্রণ জানান। কানাডা হাই কমিশনার ও বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উভয়েই পরবর্তীতে আরো একবার সাক্ষাতের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।
এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব আজিজুর রহমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।