দৈনিকশিক্ষাডটকম প্রতিবেদক : মাত্র তিন মাস বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন ফারহানা আক্তার। দুনিয়া বোঝার বয়স হয়নি তখনো। কিন্তু পৃথিবীর নিষ্ঠুরতা তখনই গ্রাস করেছিলো তার পরিবারকে। চার মেয়েসহ ফারহানারা মাকে পাবনার বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। ঢাকার বাসে উঠিয়ে দেয়ার সময় পরিবারটির হাতে ছিলো ১০ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে ঢাকা শহরে জীবনযুদ্ধ চলে না।
তারপরও লড়াইটা করেছেন ফারহানার মা। বাসায় বাসায় কাজ করে মেয়েদের মানুষ করেছেন। বাকি মেয়েদের বিয়ে দিলেও ফারহানাকে একটু একটু করে পড়াশোনা করিয়ে এনেছেন নবম শ্রেণি অবধি। এই পড়াশোনাটাও সম্ভব হতো না; সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ভাতা পাওয়ার কারণে। আর এই অনুদানের টাকাটা ফারহানার মায়ের মোবাইলে নিয়মিত পৌঁছে দিয়ে একটি পরিবারের টিকে থাকা এবং একটি মেয়ের শিক্ষা লড়াই টিকিয়ে রাখায় ভূমিকা রেখে চলেছে মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদ।
এমন করে সারা দেশে অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন বদলে দেয়ায় সরাসরি ভূমিকা রাখছে নগদ। সরকারের বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা ভাতা সরাসরি উপকারভোগীর হাতে পৌঁছে দিয়ে এই খাতের চিত্রটাই বদলে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি।
প্রাথমিক ও গনশিক্ষা অধিদপ্তর প্রতি বছর দেশের সকল প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে দিচ্ছে উপবৃত্তি। আর এই উপবৃত্তির শতভাগ শুরু থেকে বিতরণ করে আসছে নগদ। মাধ্যমিকের উপবৃত্তিরও বড় অংশ বিতরণ করছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিবন্ধী শিক্ষা ভাতা বিতরণ করে থাকে নগদ। এ ছাড়াও তারা বিতরন করছে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের ভাতা।
প্রাথমিকের উপবৃত্তি প্রদানে নগদের সাফল্য রীতিমতো ঈর্ষনীয়। দেশের নানা প্রান্তে এই উপবৃত্তি বদলে দিয়েছে শিক্ষার চিত্র। একটা সময় স্কুলগুলোতে দরিদ্র পরিবারের শিশুদের যাতায়াত বেশ কমে গিয়েছিলো। বাড়ছিলো ঝরে পড়া শিশুর হার। সেই সময়ে এইসব শিশুদের জন্য এক দারুন প্রেরণা হয়ে এসেছে সরকারের উপবৃত্তি। শিক্ষক, অভিভাবকরা বলছেন, এই উপবৃত্তির কল্যানেই এখন আবার জমজমাট হয়েছে স্কুলগুলো। আর সে জন্য তারা বড় ধন্যবাদ দিচ্ছেন নগদকে।
সরকার অনেকদিন ধরেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের জন্য উপবৃত্তি দিচ্ছে। কিন্তু শুরুতে সেখানে ছিলো দারুন এক নৈরাজ্য। যে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ করা হতো, তাদের ছিলো না স্বচ্ছতা। একই সঙ্গে হাতের কাছে তাদের এজেন্টও না থাকায় টাকা বের করতে জটিলতায় পড়তেন অভিভাবকরা।
এইসব সমস্যা সমাধাণে বাংলাদেশ ডাক বিভাগের মোবাইল আর্থিক সেবা নগদ-এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। আর তারপর থেকেই সুফল মিলছে এই উপবৃত্তি প্রদানে। এই সাফল্যের কারণেই আবারো নগদ-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী উপবৃত্তি বিতরণের জন্য চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
এই খবরে আরো অনেক অনেক মানুষের মত খুশি বরিশালের স্কুলগুলোর শিক্ষক, অভিভাবকরা। শহরের গীর্জা মহল্লার ইসলামিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মাতোয়ারা বেগম বলছিলেন, ‘আমি প্রথমেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই এই কোমলমতি ছাত্র ছাত্রীদের উপবৃত্তি দিয়ে বিদ্যালয়ে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। উপবৃত্তি পাওয়ার ফলে আমাদের স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অনেক বেড়েছে। কমেছে ঝরে পড়ার হার। এটা সামগ্রিকভাবে শিক্ষার মানকে অনেক বাড়িয়ে দিচ্ছে। সরকারের এই উদ্যোগ দেশের জন্য অসাধারণ একটা ব্যাপার।’
এই প্রধান শিক্ষিকা একই সঙ্গে নগদ-কেও ধন্যবাদ দিলেন। তিনি বলছিলেন, ‘নগদকে আমি বিশেষ ধন্যবাদ জানাই। ডাক বিভাগের একটি সেবা হিসেবে তারা খুব ভালো দায়িত্ব পালন করছে। নগদ এই দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে উপবৃত্তি পাওয়ায় ভোগান্তি নেই বললেই চলে। এখন অভিভাবকরা বাড়ির কাছ থেকেই টাকা তুলে নিতে চাচ্ছেন। আমি আশা করি, দায়িত্ব পেলে নগদ আবারো এভাবেই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।’
নগদকে ধন্যবাদ দেয়ার পরিষ্কার কারণও আছে। এই দায়িত্বটা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করছে এইএমএফএস প্রতিষ্ঠানটি। সকল শিক্ষার্থীর নাম, জন্ম নিবন্ধন সনদসহ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল নম্বর নিয়ে একটি ডেটাবেজ তৈরি করেছে ‘নগদ’ । ফলে এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ভুয়া সুবিধাভোগীর নাম।
নগদ কেবল শিক্ষার্থীদের দিকটা দেখছে তা নয়, তাদের এই কাজে সরকারের বিপুল অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে। এর আগে ভিন্ন একটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করত সরকার।
তখন প্রতি হাজার টাকার উপবৃত্তি বিতরণ করতে সরকারের কাছ থেকে সাড়ে ২১ টাকা করে সার্ভিস চার্জ এবং ক্যাশ-আউট চার্জ নিত শিওর ক্যাশ। সেখানে ‘নগদ’ সব মিলে সরকারের কাছ থেকে নিচ্ছে হাজারে মাত্র সাত টাকা। সুবিধাভোগী মূল টাকার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাশ-আউটের খরচও পেয়ে যাচ্ছেন, ফলে গ্রাহককে বাড়তি কোনো অর্থ খরচ করত হচ্ছে না। শুধু ভাতা বিতরণে এই প্রক্রিয়ায় সরকারের অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার সাশ্রয় হয়েছে।
একইভাবে নগদের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিক্ষা ভাতা পাওয়াতে বদলে গেছে অনেক পরিবারের চিত্র। একসময় প্রতিবন্ধী শিশু ছিলো পরিবারের জন্য বোঝা। তাদের পড়াশোনা করানোটা ছিলো একটা অসম্ভব স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটাই বাস্তব করেছে এই ভাতা।
গাজীপুরের ভাওয়াল ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী শিশু ফাহমিদার মা বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে কথা বলতে পারে না তেমন। হাটতে চলতেও সমস্যা হয়। আমরা তো একটা সময় কল্পনাও করিনি যে এই মেয়ে স্কুলে আসতে পারবে। সরকার এখন ওদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে ভাতা দিচ্ছে। নগদের মাধ্যমে টাকাটা পাচ্ছি। ফলে কোথাও গিয়ে টাকা তোলার জন্য লাইন দিতে হয় না। আমার মেয়ে মনে করে, এই ভাতার টাকাটা ওর উপার্জন।’