দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউয়ের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। গত দু'দিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় ৫ শতাংশের ওপরে রোগী শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হারের ওপর ভিত্তি করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির আরেকটি ঢেউ আসতে চলেছে। তবে তাঁরা মনে করেন, নতুন ঢেউয়ের তীব্রতা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়টির মতো হবে না। মাত্রা যেমনই থাকুক, এ ঢেউয়ের হটস্পট হবে ঢাকা।

এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে। রয়টার্সের খবরে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার ভারতে এক দিনে ১২ হাজার ২১৩ জন নতুন করোনার রোগী শনাক্ত হয়। প্রায় চার মাসের মধ্যে দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় আর এত রোগী পাওয়া যায়নি।

করোনা সংক্রমণ বিশেষ করে রাজধানীতে বেড়েই চলেছে। নতুন ঢেউ মোকাবিলায় করোনা নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কমিটি ছয় দফা সুপারিশ করেছে। এতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলা, টিকা কার্যক্রম জোরদার এবং হাসপাতালে শয্যা প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। কারিগরি কমিটির সুপারিশ আমলে নিয়ে আগামী দু-এক দিনের একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক থেকে আসতে পারে নতুন নির্দেশনা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণের পর তিন মাসের বেশি সময় স্বস্তিদায়ক অবস্থায় ছিল বাংলাদেশ। এর পর থেকে আবার বাড়তে শুরু করে করোনার সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যতগুলো নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তার ৬ দশমিক ২৭ শতাংশে ভাইরাসটির উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এই হার গত ১১৬ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের দিন পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি এই হার ৫ শতাংশের নিচে নামে। চার মাস ধরে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের বেশি থেকে এর নিচে নামলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ধরা হয়। আবার নিচ থেকে বেড়ে ৫ ছাড়ালে পরবর্তী ঢেউ আঘাত হানতে পারে বলেই ধরে নেওয়া হয়।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৯০০টি নমুনা পরীক্ষায় ৪৩৩ জনের শনাক্ত হয়েছে করোনা। গত ৯৬ দিনে এটিই সবচেয়ে বেশি। এর আগে গত ৮ মার্চ এর চেয়ে বেশি শনাক্তের সংবাদ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন ৪৪৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তবে সংক্রমণ বাড়তে থাকলেও কোনো মৃত্যু না থাকাটা স্বস্তির। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় কারও মৃত্যু হয়নি।

অধিদপ্তর জানায়, নতুন শনাক্ত হওয়া ৪৩৩ জনের মধ্যে ৩৮৫ জনই ঢাকা মহানগর ও জেলার বাসিন্দা। এর বাইরে চট্টগ্রামে ২৬ জন, কক্সবাজারে ৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ৫ জন, কিশোরগঞ্জ ও যশোরে ২ জন করে এবং গাজীপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও বগুড়ায় একজন করে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর ধীরে ধীরে সংক্রমণ বাড়তে থাকে। প্রথম ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একই বছরের মার্চে ডেলটা ধরনের মাধ্যমে আসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের জুলাইয়ে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে শনাক্তের হার ৩৩ শতাংশ ছাড়ায়। দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর দেশে তৃতীয় ঢেউ নিয়ে আসে করোনার আরেক ধরন ওমিক্রন।

করোনা নিয়ন্ত্রণে পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনার আরও একটি ঢেউয়ে প্রবেশ করছে দেশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি কমিটি নতুন সুপারিশ করেছে। তবে এগুলো বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও টিকা নেওয়ার বিষয়ে উদাসীনতা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে- করোনা নিয়ন্ত্রণে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। মাস্ক পরতে হবে। টিকা নেওয়ার সময় এলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকা নিয়ে নিতে হবে। নতুন নির্দেশনার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন মনে করেন, নতুন ঢেউয়ের তীব্রতা কিছুটা কম। এই ঢেউয়ে সংক্রমণ বাড়ছে ধীরগতিতে। তিনি বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহার পরে সংক্রমণ চূড়ায় উঠতে পারে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগের সচিব ড. মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে জাতীয় কারিগরি কমিটি ৬ দফা সুপারিশ দিয়েছে। সুপারিশ বাস্তবায়নে আগামী দু-এক দিনের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক থেকে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সারাদেশে এখনও ৫০ জনের নিচে রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তবে আমরা যদি মাস্ক না পরি, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত না করি, অসতর্কভাবে চলাচল করি তাহলে হাসপাতালে রোগী বাড়তে সময় লাগবে না। করোনা নিয়ন্ত্রণে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এরই মধ্যে হাসপাতালগুলোয় নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027191638946533