দেশের নার্স সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসকের তিনগুণ নার্স প্রয়োজন।
অথচ দেশে চিকিৎসকের চেয়েও নার্সের সংখ্যা কম। ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে ২৩ জন নার্স থাকার কথা; কিন্তু বাংলাদেশে এ সংখ্যা মাত্র দুজন। গত ৫০ বছরেও জনসংখ্যার অনুপাতে নার্স নিয়োগ সম্ভব হয়নি। এতে কর্মরত নার্সদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এর মধ্যে রোগীর স্বজনের ক্ষোভ থেকে নার্সের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনাও ঘটছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার (১২ মে) পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস।
ডব্লিউএইচওর মানদণ্ড অনুযায়ী প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার বিপরীতে ২৩ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও বাংলাদেশে এ সংখ্যা মাত্র দুজন। সংস্থাটির গাইডলাইন অনুযায়ী একজন চিকিৎসকের বিপরীতে তিনজন রেজিস্টার্ড নার্স প্রয়োজন। দেশে এক লাখ ৩৬ হাজার চিকিৎসকের বিপরীতে রেজিস্টার্ড নার্স রয়েছেন মাত্র ৭৭ হাজার ৮৩৮ জন। চিকিৎসক অনুপাতে নার্স প্রয়োজন ৪ লাখ ৮ হাজার। বর্তমানে সংকট আছে ৩ লাখ ৩০ হাজার ১৬২ জনের। তার মধ্যে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত ৪২ হাজার ৩৩০ জন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক কাউন্সিল ফর নার্সেস (আইসিএন) এবং ডব্লিউএইচও কর্তৃক এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষৎ’। আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এ তারিখে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস উদযাপন করা হয়। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দেশে দিবসটি পালন করে আসছে। সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ইনস্টিটিউশনে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। সোসাইটি ফর নার্সেস সেফটি অ্যান্ড রাইটস (এসএনএসআর) নার্স দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রা, কেক কাটা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।
নার্সিং খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে অধিকসংখ্যক নার্স নিয়োগ দিতে হবে। নার্সিং শিক্ষা ও এই খাতকে আধুনিকায়ন করতে হবে। অন্যথায় সংকট কাটানো সম্ভব হবে না।
এসএনএসআরের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, নার্সিং খাতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। অন্তত সাড়ে ৩ লাখ নার্সের সংকট রয়েছে। আবার যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের মানোন্নয়নে তেমন উদ্যোগ নেই। তাই প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়ে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। চিকিৎসকদের উচ্চতর বিশেষায়িত কোর্সের সুযোগ থাকলেও নার্সদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ অপ্রতুল। ফলে দেশে একদিকে যেমন নার্সের সংকট রয়েছে, তেমনি দক্ষ নার্সেরও সংকট তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে চাহিদার অনুপাতে দ্রুত নার্স নিয়োগ দিতে হবে। সেইসঙ্গে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের নার্সদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নার্স হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের (ডিজিএনএম) মহাপরিচালক মাকসুরা নূর বলেন, বাংলাদেশে দক্ষ নার্সের তীব্র সংকট রয়েছে এবং নার্সের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যাই বেশি। শহরাঞ্চলে প্রতি ১০ হাজার জনের জন্য ৫.৮ জন নার্স থাকলেও গ্রামাঞ্চলে সেটি রয়েছে মাত্র ০.৮ জন। এ চিত্রই বলে দেয় দেশে নার্সের সংকট তীব্র। কভিড-১৯ মহামারি আমাদের শিখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবায় অপরিহার্য অংশ হচ্ছে নার্স। সংকটের মূল কারণ হচ্ছে, সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, অনেক সীমাবদ্ধ নীতিমালা, সাংস্কৃতিক বাধা, নার্সদের অনির্ধারিত মর্যাদা, তাদের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব, উন্নত ক্যারিয়ার গড়ার অভাব এবং সর্বোপরি নার্সিং শিক্ষার জন্য আর্থিক সহায়তার অভাব।
সাধারণ সম্পাদক , এসএনএসআর সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, নার্সিং খাতে পর্যাপ্ত জনবল নেই। অন্তত সাড়ে ৩ লাখ নার্সের সংকট রয়েছে। আবার যারা কর্মরত রয়েছেন তাদের মানোন্নয়নে তেমন উদ্যোগ নেই। তাই প্রতিবেশী অনেক দেশের চেয়ে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। চিকিৎসকদের উচ্চতর বিশেষায়িত কোর্সের সুযোগ থাকলেও নার্সদের ক্ষেত্রে এ সুযোগ অপ্রতুল। ফলে দেশে একদিকে যেমন নার্সের সংকট রয়েছে, তেমনি দক্ষ নার্সেরও সংকট তৈরি হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে চাহিদার অনুপাতে দ্রুত নার্স নিয়োগ দিতে হবে। সেইসঙ্গে আধুনিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের নার্সদের আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নার্স হিসেবে গড়ে তুলতে হবে