কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় দেড়শ' বছরের পুরনো লাল ভবনটি। এই ভবনটিও ভেঙে নতুন ভবন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভবনটি নিলামে বিক্রির জন্য গত ৯ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত কিছুতেই মানতে পারছেন না বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র এবং জেলাবাসী। এই ভবনের সঙ্গে অনেকেরই আবেগ-অনুভূতি জড়িয়ে আছে বিধায় তারা এটিকে যথাযথভাবে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠেছে প্রতিবাদের ঝড়।
জানা গেছে, ১৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে মাইনর স্কুল দিয়ে যেটির যাত্রা শুরু তা পূর্ণ রূপ পায় ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমার বাণীবহ এস্টেটের জমিদার গিরিজা শংকর মজুমদার ও অভয় শংকর মজুমদার রাজবাড়ীর সজ্জনকান্দা মৌজায় দি গোয়ালন্দ ইংলিশ হাইস্কুল নাম দিয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে নাম পরিবর্তন করে গোয়ালন্দ মডেল হাই স্কুল এবং সর্বশেষ রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।
পরে পুরনো ভবনটির পাশে ও সামনে আরও তিনটি ভবন নির্মিত হয়। যে কারণে ভবনটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এর আগেও ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্কুল কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি জানার পর বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্ররা এটিকে রক্ষার দাবিতে আন্দোলন করে। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাসে তারা রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপিও দেয়। একই বছর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ভবনটি পরিদর্শন করে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের আঞ্চলিক পরিদর্শক আতাউর রহমান জানিয়েছিলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষা করাই তাদের কাজ। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এ ধরনের স্থাপনা- যেগুলো একশ' বছরের পুরনো তা সংরক্ষণ করে থাকে। যে স্থাপনা ইতিহাস ঐতিহ্য বহন করে থাকে- তা সংরক্ষণ করে থাকে। রাজবাড়ীর এ স্কুলটি অসাধারণ একটি স্থাপনা। এর সঙ্গে অনেক ইতিহাস-ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব। তৎকালীন জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোলও ভবনটি সংরক্ষণে একমত পোষণ করে বলেছিলেন, প্রায় দেড়শ' বছরের পুরনো ভবনটি প্রাচীন স্থাপনা, যা পুরাকীর্তি হিসেবে সংরক্ষণের দাবি রাখে। কিন্তু ভবনটি সংরক্ষণে এরপর আর কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বর্তমানে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত রেজাউল করিম বলেন, এই ভবনটিতে আমাদের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এটি রাজবাড়ী জেলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। এটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত আমরা কিছুতেই সমর্থন করি না। অবশ্যই এটিকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাহবুবা আক্তার বলেন, অধিদপ্তর অনলাইন থেকে লাল ভবনটি ভেঙে ফেলার একটি চিঠি পেয়েছি। তবে চিঠি প্রসঙ্গে এখনও স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসক কারও সঙ্গেই কথা হয়নি।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক মো. শওকত আলী বলেন, পুরনো ভবনটি ভেঙে সেখানে নতুন বিল্ডিং হবে। নতুন বিল্ডিং করার জন্য যথেষ্ট জায়গা নেই। এ জন্য লাল ভবনটি ভেঙে ফেলতে হবে। তিনি আরও বলেন, এটি মুঘল আমলের কোনো কিছু নয় যে, এটি সংরক্ষণ করতে হবে। আর ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্তটি এমপি (কাজী কেরামত আলী) নিজে নিয়েছেন। এটি আমার সিদ্ধান্ত নয়। তিনি যদি চান লাল ভবন সংরক্ষণ হবে, তা হলে হবে। না হলে নয়।