দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, দিশেহারা সাধারণ মানুষ

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

বিশ্ববাজারে ডলার, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজিতে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। দামের চাপে তারা মাছ-মাংস খাওয়া অনেকটা ভুলতে বসেছে। তরিতরকারির মধ্যে একমাত্র আলু ছাড়া প্রায় সব জিনিসের দাম নাগালের বাইরে। প্রশাসনসহ যারা দায়িত্বে আছেন, এই লাগামহীন দ্রব্যমূল্য তাদের কাছে দৃশ্যমান হচ্ছে বলে মনে হয় না। যদি তাদের গায়ে এর স্পর্শ লাগত, তবে শহর-বন্দর, হাট-বাজারে তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি চোখে পড়ত। উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সবাই যেন আরাম আয়েশে আছেন। তারা সবাই যেন জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে স্বার্থ উদ্ধারে মত্ত। বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদর্শ ও উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করা। অথচ তাকে তীব্র অসহায়ত্বের মাঝে ঠেলে দিচ্ছে কালোবাজারি ও অসাধু ব্যবসায়ীরা। তৃণমূলে এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের এই নীরবতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকারের ওপর বিশাল আঘাত হানছে। ১১ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

আমাদের অবশ্যই বিশ্বের বাজারে ডলার, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও যুদ্ধের কারণে মূল্যবৃদ্ধির বাস্তব সত্য উপলব্ধি করতে হবে। বর্তমান সরকার অসহায় দরিদ্র মানুষদের টিসিবি কার্ডের মাধ্যমে সহনীয় দামে কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সরবরাহ করে যাচ্ছেন। কিন্তু নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগীরা এর আওতার বাইরে থাকছেন। 
২য়, ৩য়, ৪র্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারীসহ পেনশনভোগীদের টিসিবি ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সরবরাহ করা এখন জরুরি। তাদের মহার্ঘ ভাতা ও চিকিৎসা ভাতা সময়ক্ষেপণ না করে বৃদ্ধি করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি। কারণ দেশের জনগণ এখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতির কষাঘাতে জর্জরিত। 

শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই নয়, ওষুধপত্রের দামও সীমাহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার পরিবারে আমাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনের ওষুধের পূর্বে ব্যয় ছিল ১০,০০০ টাকা। বর্তমানে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫,০০০ টাকায়। সরকার ৫০ ধরনের ওষুধের দাম বেঁধে দিলেও খুচরা পর্যায়ে তা কার্যকর হচ্ছে না। ওষুধ কোম্পানিগুলো নানা অজুহাতে দাম বৃদ্ধি করে চলেছে। বিশ্ববাজারে ডলার, জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অজুহাতে আমদানি করা ওষুধ যে যার মতো করে বিক্রি করছেন। উচ্চমূল্য জোগাতে অপারগ হয়ে অনেকে অসহায় হয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগ প্রতিরোধে পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার ও সেবন বন্ধ করলে দীর্ঘ মেয়াদি শারীরিক জটিলতার সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দেয়, যা জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সুদূরপ্রসারী চ্যালেঞ্জ বাড়াবে। 

সম্প্রতি সরকার ওষুধের দাম ১৩৪ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ওষুধের বাড়তি দাম জোগাড়ে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, সকল কর্মচারীসহ পেনশনভোগীরা। বাংলার মানুষদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল হৃদয়নিঙড়ানো ভালোবাসা। তাদের জন্য জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি কারাবরণ করেছিলেন।   

তাঁরই সুযোগ্য কন্যা একই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে সাধারণ মানুষ আজ সীমাহীন কষ্টের মাঝে আছেন। সবচেয়ে বেশি কষ্টের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন প্রবীণরা।  

দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধিতে প্রবীণরা অপুষ্টির শিকার। অপরদিকে ওষুধপত্রের দাম বৃদ্ধিতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকির মাঝেও রয়েছেন। বয়স বৃদ্ধির সাথে তাদের শরীরে নানাবিধ রোগ বাসা বেঁধে থাকে। এই অসহায়ত্বের মাঝে সমাজ ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। প্রবীণরা দেশ ও সমাজের অভিজ্ঞ ও জ্ঞানসমৃদ্ধ সম্পদ। তাঁদের অযত্ন, অবহেলায় নিঃশেষ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করা কাম্য নয়। প্রতিটি এলাকায় প্রবীণদের দেখভাল করার জন্য জনপ্রতিনিধিরা সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসবেন। পাশাপাশি সরকারি পেনশনভোগীদের চিকিৎসাভাতা ২,৫০০ টাকার পরিবর্তে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে ১০,০০০ টাকা, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৫,০০০ টাকা ও সকল সরকারি কর্মচারীর জন্য সর্বনিম্ন চিকিৎসাভাতা ২,৫০০ টাকা প্রদান করা আজ যৌক্তিক প্রত্যাশা। শতভাগ পেনশন সমর্পণকারীদের জন্য বর্তমানে সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ ১৫ বছর পর আবার পেনশন পুনঃস্থাপন। এ উদ্যোগে খুব নগণ্য সংখক পেনশনভোগী ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকেন। এ উদ্যোগ ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে ১৫ বছরের স্থলে ৮ বছর পেনশন পুনঃস্থাপন বিষয়টি এখন সময়ের দাবি। পেনশনভোগীদের জন্য প্রতিবছর শ্রান্তিবিনোদন ভাতা প্রদানের মাধ্যমে চিত্ত বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। দেশের ‘সিনিয়র’ নামে খ্যাত কর্মচারীদের সকল যানবাহনে ভাড়াবিহীন যাতায়াতের সুযোগ প্রদান করে প্রবীণদের জন্য রাষ্ট্র ও সমাজ এক যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত রাখবে বলে আশাবাদী। বিগত সরকার আমলে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ছিল অতি নগণ্য। বর্তমান সরকারের সময় বেতনভাতা  দ্বিগুণ বৃদ্ধি হওয়ার পর কর্মচারীদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করলেও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বর্তমানে অস্বস্তি বিদ্যমান। সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্বল্প বেতনে বাড়ি করা আকাশ কুসুম স্বপ্ন। সরকারি কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ভাতা পেয়ে থাকেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীরা বাড়িভাড়া ভাতা পান না। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের বাড়িভাড়া না দেওয়া অমানবিক। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ভেবে দেখবেন। আজও পেনশনভোগীদের মাঝে এক অমানবিক বৈষম্য চলে আসছে। জুনিয়র পেনশনভোগীর তুলনায় সিনিয়রদের পেনশনভোগীরা অতি নগণ্য ভাতা পেয়ে থাকেন। ভাবখানা এমন যে, সিনিয়র পেনশনভোগীরা তো স্বাভাবিক নিয়মে আগে মৃত্যুবরণ করবেন। তাদের বেতন বেশি দিয়ে কী হবে? ওই বৈষম্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য হৃদয়বিদারক। সমাজ জাতি ও রাষ্ট্রের পেনশনভোগীদের শ্রদ্ধা ভালবাসার প্রকৃষ্ট একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছি। 

বর্তমান সরকারের পূর্বে সরকারি কর্মচারীসহ পেনশনভোগীরা মাসের বিভিন্ন তারিখে বেতনভাতা পেতেন। বর্তমান সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ ইএফটি করার মাধ্যমে সকলের বেতনভাতা মাসের ১ তারিখে পেয়ে আসছেন। 

পেনশনভোগীদের হিসাবরক্ষক কার্যালয়ে বছরে একবার সরেজমিনের উপস্থিত হয়ে তাঁদের পেনশন নবায়ন করতে হয়।

এ বছর ঢাকায় প্রধান হিসাব রক্ষণ অফিসে পেনশন শাখায়  নবায়ন করতে গিয়ে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেল : রিক্সা থেকে নামার পর একজন আনসার সালাম দিয়ে পেনশন শাখার কর্মরত কর্মচারীদের মাধ্যমে সম্মানের সাথে যত্নের সাথে লিফটে তুলে নিলেন। যাদের চলাফেরা করতে অসুবিধা, তাদের যত্নের সাথে ধরে পেনশন শাখায় নিয়ে বসাচ্ছেন। বসানোর সাথে সাথে এক গ্লাস পানি, উন্নত মানের বিস্কুট ও চা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আবার অসুস্থদের পূর্বের মতো যত্নের সাথে যানবাহনে তুলে দেয়া হয়। অসহায় সিনিয়র সিটিজেনের জন্য বর্তমান জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের হিসাব রক্ষণ অফিসের এ উদ্যোগ সারা দেশের সকলের মাঝে উদাহরণ হয়ে থাকুক। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে থামাতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ সকলের। সুখি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সকলের দুঃখ-কষ্টের অবসান হোক।   

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষা ডট কম


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034189224243164