দ্রুত টিকা আনার সব চেষ্টা করছি, আগে পাবেন সম্মুখযোদ্ধারা: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

করোনাভাইরাসের মহামারী মোকাবেলায় সরকার টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, টিকা পেলেই এই সঙ্কটে সম্মুখসারিতে থাকা যোদ্ধাদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে তা দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদের দুই বছর পূর্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণের শুরুতেই তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রার ‘এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এবং বৈশ্বিক মহামারির অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে’ জাতির সামনে তিনি হাজির হয়েছেন।

“করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে এক গভীর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পান এবং উপর্যুপরি বন্যা আমাদের অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

“আমরা সেসব ধকল দৃঢ়তার সঙ্গে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু করোনাভাইরাস-জনিত সঙ্কট থেকে বিশ্ব এখনও মুক্ত হয়নি।”

সরকার ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রাখার ‘সর্বোচ্চ চেষ্টা’ করে যাচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে বাংলাদেশে এখনও সংক্রমণ এবং মৃত্যু হার অনেক কম।”

তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোভিড-১৯ এর টিকাদান শুরু হওয়ায় যে আশার সঞ্চার হয়েছে, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশেও আমরা দ্রুত টিকা নিয়ে আসার সব ধরনের চেষ্টা করছি। টিকা আসার পর পরই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য-সহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদান করা হবে।”

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকার তিন কোটি ডোজ কিনতে ইতোমধ্যে চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ইতোমধ্যে ওই টিকা আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদনও দিয়েছে। 

এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফর্ম কোভ্যাক্স এর আওতায় আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ পাবে বলে সরকার আশা করছে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী এবং মাঠ প্রশাসনের সদস্যসহ সম্মুখসারির যোদ্ধাদের ধন্যবাদ জানানোর পাশপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা, নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই সঙ্কটে দরিদ্র-অসহায় মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসায় তাদেরও ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যাদের মৃত্যু হয়েছে, আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করছি।”

ভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করেই যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শুধু আমাদের দেশেই নয়, গোটা বিশ্বেই একই পরিস্থিতি। তবে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ নেই। অন-লাইনে এবং স্কুল পর্যায়ের জন্য টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দেওয়া হবে।”

মহামারীর অভিঘাতে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিও যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, সে কথা প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে তুলে ধরেন।

তবে সরকার বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং প্রণোদনার মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে যে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে, সে কথাও তিনি বলেন ।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা মোট জিডিপির ৪.৩ শতাংশ।

“পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা সে প্রক্রিয়া এখনও অব্যাহত রেখেছি। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার প্রায় আড়াই কোটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠিকে আমরা নগদ অর্থসহ বিভিন্ন সহায়তার আওতায় এনেছি। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, গত অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৫.২৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের প্রাক্কলন অনুয়ায়ী এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৭.৪ শতাংশে।

“বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রক্ষেপণ অনুযায়ী জিডিপি প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশের অবস্থান হবে এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। আইএমএফ-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে সবচেয়ে বেশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী শীর্ষদেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। ২০২০-এ মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে আমি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম যে দেশবাসীর সহায়তায় আমরা এই দুর্যোগ সফলভাবে মোকাবিলা করব, ইনশাআল্লাহ। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে দেশবাসী এ দুঃসময়ে আমার এবং আমার সরকারের পাশে ছিলেন।

“আপনারা আমাদের এই দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছেন। এ ধরনের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে পাব- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025529861450195