অজানা আশঙ্কায় শিক্ষক চাকরি প্রত্যাশীরা, ফল প্রকাশে অহেতুক দেরি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিভিন্ন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগে গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ নিয়ে সৃষ্ট আইনি জটিলতা দূর হলেও এসব পদে নিবন্ধিত প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করা নিয়ে দেরি করার অভিযোগ উঠেছে এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। বুধবার (৩০ জুন) নিবন্ধিত প্রার্থীরা নিয়োগ সুপারিশের দাবিতে এনটিআরসিএ কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। পরে প্রার্থীদের সাথে কয়েকদফা আলোচনা করার পরেও নিয়োগ সুপারিশের কোন সুনির্দিষ্ট সময় জানাতে পারেননি কর্মকর্তারা। প্রার্থীরা বলছেন, কর্মকর্তারা কথা দিয়ে কথা রাখছেন না। 

ছবি : দৈনিক শিক্ষা

বুধবার সকাল থেকেই প্রার্থীরা এনটিআরসিএর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে গণবিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে নিয়োগ সুপারিশের দাবি জানান। এসময় তারা ‘নিয়োগ সুপারিশ চাই, রেজাল্ট চাই’ ইত্যাদি ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার এনটিআরসিএর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিলে পুলিশের হস্তক্ষেপে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা প্রার্থীদের সাথে কথা বলেন।

প্রার্থীরা বলেন, গত রোববার আদালত রায় শুনানি করে সোমবার রায় দিয়েছেন। আমরা সেদিন যখন এসেছিলাম তখন এনটিআরসিএর সচিব এ টি এম মাহবুব-উল-করিম আমাদের জানিয়েছিলেন, ‘আজকে রাতেই সুপারিশ করা হবে। পরে তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন মঙ্গল বা বুধবার ফল প্রকাশ করা হবে। আজকে (বুধবার) তিনিই বলছেন, তাদের রায়ের সার্টিফাইড কপি লাগবে। তারা নিবন্ধিত প্রার্থীদের সুপারিশ প্রক্রিয়া নিয়ে কি করতে চাচ্ছেন।’

প্রার্থীরা আরও বলেন, কোর্ট মামলা ডিসমিস করে দিয়েছেন, বিষয়টি ওয়েবসাইটে এসেছে। এরপর কর্মকর্তারা প্রার্থীদের  ও গণমাধ্যমের কাছে মন্তব্য করেছেন দুই একদিনেই দেয়া হবে। কিন্তু কর্মকর্তারা ফল দিচ্ছেন না। যে গত কয়েকদিন বলেছিলেন আজকাল বা এ সপ্তাহে ফল প্রকাশ করা হবে, তিনি বলছেন ফল প্রকাশ সময় লাগবে। তারা সার্টিফাইড রায়ের কপির কথা বলছেন। 

প্রার্থীরা বলেন, আমরা রিটকারী ২ হাজার ২৭০ জনের নিয়োগের জন্য লেনদেনের অভিযোগটি জেনেছি। আমাদের মনে হচ্ছে এনটিআরসিএ সাধারণ ৫২ হাজার নিবন্ধিতর উছিলায় বিচারাধীন পদে নিয়োগ দিতে চাচ্ছে সে জন্যই ফল প্রকাশে গড়িমসি। আমরা দ্রুত ফল চাই। 

পরে দুপুরের দিকে রমনা থানার পুলিশ কর্মকতাদের মাধ্যমে এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের সাথে নিবন্ধিত প্রার্থীদের আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে নিবন্ধিত প্রার্থীদের নেতা শান্ত আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা বলছেন রায়ের সার্টিফাইড কপি লাগবে। সে জন্য তারা অপেক্ষা করছেন। তারা বলছেন রায়ের কপি পেতে ১৫ দিনও লাগতে পারে। এ পরিস্থিতিতে আমরা বুঝতে পারছি না কেন দেরি হচ্ছে। কর্মকর্তারা আগে জানিয়েছিলেন রায়ের সার্টিফাইড কপি লাগবে না এখন বলছেন কপি লাগবে। আমরা আপাতত কর্মসূচি স্থগিত করছি। আমরা প্রার্থীরাই রায়ের কপি এনটিআরসিএকে তুলে দেয়ার চেষ্টা করবো। 

ছবি : দৈনিক শিক্ষা

এরআগে গত সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এনটিআরসিএর সচিব (বদলিকৃত)  এ টি এম মাহবুব-উল-করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেছিলেন, ‘আপিল বিভাগের রায় পক্ষে এসেছে, গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশে রায়ের সার্টিফাইড কপির একটি ব্যপার আছে। আমরা চেষ্টা করবো আজ রাতেই নিয়োগ সুপারিশ করতে।’ এর কিছুক্ষণ পর দৈনিক শিক্ষাডটকমের সাথে কথা হয় এনটিআরসিএর আইনজীবী কামরুজ্জামানের সাথে। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছিলেন, ‘রায় পাবলিকলি হয়েছে। ভার্চুয়াল কোর্ট রায় দিয়েছেন তাই সার্টিফাইড কপি হাতে পাওয়ার প্রয়োজন নেই।’ পরে বেলা আড়াইটার দিকে সচিব (বদলিকৃত)  এ টি এম মাহবুব-উল-করিমের সাথে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ওয়েবসাইটে রায়ের বিষয়টি এসেছে। সার্টিফাইড কপির প্রয়োজন নেই। আমরা আগামীকাল বা পরশু (মঙ্গল বা বুধবার) নিয়োগ সুপারিশ করবো।’ গতকাল মঙ্গল বা বুধবার অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষক নিয়োগ সুপারিশ করা হবে বলে গত সোমবার সংস্থাটির যে কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন তারাই প্রার্থীদের বলছেন, নিয়োগ সুপারিশ করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। নিয়োগ সুপারিশ করতে রায়ের সার্টিফাইড কপি লাগবে।

প্রার্থীরা আশঙ্কা করছেন, নিয়োগ সুপারিশের দেরি করে কেউ কেউ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। অহেতুক দেরি করার অভিযোগও এনটিআরসিএর বিরুদ্ধে। জানা গেছে, গত মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের সাথে এনটিআরসিএর কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বৈঠকে পদ সংরক্ষণের জন্য তথ্য সংগ্রহ করা ২ হাজার ২৭০ পদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সে বৈঠক থেকে ফিরে এনটিআরসিএর কার্যালয়ে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। 

এদিকে মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছে, মন্ত্রণালয়ের বৈঠকে ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ ২ হাজার ২৭০ প্রার্থীর নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিচারাধীন পদগুলো সংরক্ষিত রেখে অন্যান্য পদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশ করার নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে, এনটিআরসিএর কেউ কেউ চাচ্ছেন ২ হাজার ২৭০ প্রার্থীকে অন্যান্য পদের সাথে নিয়োগ সুপারিশ করতে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিচারাধীন ২ হাজার ২৭০ পদ সংরক্ষিত রেখে অন্যপদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশের পরিকল্পনা ছিল এনটিআরসিএর। প্রার্থীরা বলছেন, ১ থেকে ১২ তমদের মামলার আদেশের কপি হাতে পাওয়ার নামে কয়েকজন কর্মকর্তারা সাধারণ প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করছেন না। এই ফাঁকে কোন কোন কর্মকর্তা ১৩তম নিবন্ধনে উত্তীর্ণ ২ হাজার ২৭০ প্রার্থীর নিয়োগ দিয়ে দিতে চাচ্ছেন বলে আমারা মনে করছি। 

দৈনিক শিক্ষাডটকমের অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৩ নিবন্ধন পরীক্ষা উত্তীর্ণ এ ২ হাজার ২৭০ প্রার্থীকে নিয়োগের নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছিল আপিল বিভাগ। কিন্তু আপিল বিভাগের রায় চ্যালেঞ্জ করে তা রিভিউ আবেদন করেছিল এনটিআরসিএ। এ পরিস্থিতিতে বিচারাধীন অবস্থায় এ পদগুলোতে নিয়োগ সুপারিশ করার কোন সুযোগ নেই। তবে, আপিল বিভাগের রায় রিভিউ করার পরে এ ২ হাজার ২৭০টি সংরক্ষিত পদে নিয়োগ সুপারিশ করার জন্য কয়েকজন কর্মকর্তা উঠে পড়ে লেগেছেন। তারা চাচ্ছেন সাধারণ প্রার্থীদের সাথেই এ সংরক্ষিত পদগুলোতে রিটকারী প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করতে। তাই নানা অযুহাতে গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশ বিলম্বিত করা হচ্ছে। 

এদিকে গত ২৪ জুন এনটিআরসিএর সচিব এ টি এম মাহবুব-উল-করিমকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক পদে বদলি করে সরকার। বদলির আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে। 

তৃতীয় দফায় ৫৪ হাজার শিক্ষক নিয়োগে ৮৯ লাখের বেশি আবেদন গ্রহণ করেছে এনটিআরসিএ। এ ৫৪ হাজার ৩০৪টি পদের মধ্যে ৪৮ হাজার ১৯৯ টি এমপিওভুক্ত শূন্যপদ। ননএমপিও পদ আছ ৬ হাজার ১০৫ টি। এগুলোর মধ্যে ২ হাজার ২০৭ টি এমপিও পদে রিট মামলায় অংশগ্রহণ করা প্রার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়।  

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE   করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0051288604736328