সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার গাছতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুমিতা বালা তালুকদার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক দীনুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম দুনীর্তির অভিযোগ তুলে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছে শিক্ষার্থীরা।
পরে রোববার সকাল ১১টার দিকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ওই দুই শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে গাছতলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করে। পরে তারা পাইকুরাটি বাজারে গিয়ে সমাবেশ করে। এতে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকেরা বক্তব্য রাখেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে গিয়ে জড়ো হয়।
এ সময় প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিষয়টি জানতে পেরে, উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে খেঁাজ নিতে বলেন। পরে উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থী আসিফ আহমেদ, আশরাফুল আলম আরিফসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিযুক্ত শিক্ষকদের সাথে কথা বলেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের সামনে ওই শিক্ষকদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে।
দুপুর একটার দিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল কবির ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ ফারুক বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে তাদেরকেও বিষয়টি অবগত করে। পরে মাহবুবুল কবির ও জাহাঙ্গীর আলম মোহাম্মদ ফারুক অফিস কক্ষে যান এবং মাহবুবুল কবির শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করেন। ইউএনও তখন ১০ মিনিটি সময় চাইলে অফিস কক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবক এবং বাইরে অপক্ষেমান শিক্ষার্থীরা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে সুমিতা বালা তালুকদার ও দীনুল ইসলাম সকলের উপস্তিতিতে স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বাজারে আনন্দ মিছিল করে আর উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা পদত্যাগপত্র ইউএনওর কাছে জমা দেন।
এদিকে, বিকেল তিনটার দিকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা দুই শিক্ষক ইউএনও কার্যালয়ে এসে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেননি দাবি করেন। তখন শিক্ষকেরা বিষয়টি বিবেচনা ও যাচাই বাছাই করার জন্য ইউএনওর কাছে সময় প্রার্থনা করেন। এ সময় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরাসহ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন। পরে ইউএনও বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক লুৎফুর রহমানকে বিদ্যালয় পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে না যাওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়াও আগামী মঙ্গলবার পাঠদান চলাকালে সুমিতা বালা তালুকদার ও দীনুল ইসলামের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত মতামত জানার জন্য লুৎফুর রহমানসহ সহকারী শিক্ষকদের দায়িত্ব দেন ইউএনও।
অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক দীনুল ইসলাম বলেন, যাদের পড়াবো তারা না চাইলে বিদ্যালয়ে থাকবো না। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে আমাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হউক। একই কথা জানালেন প্রধান শিক্ষকও।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল কবির বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীই পদত্যাগ চেয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করেছেন। শিক্ষার্থীরা তাদের (অভিযুক্ত শিক্ষক) না চাইলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, কাউকে পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত মতামত জানতে সহকারী শিক্ষকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের চূড়ান্ত মতামতের ভিত্তিতেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।