ধর্ষণের শিকার শিশুর ভর্তি বাতিল করল মাদরাসা কর্তৃপক্ষ

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহীতে আট বছরের এক শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আসামিও গ্রেফতার হয়েছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিপাকে পড়েছে শিশুটির পরিবার। এ ঘটনায় সামাজিকভাবে পরিবারটিকে হেয় করা হচ্ছে। এছাড়াও শিশুটিকে একটি আবাসিক মাদরাসায় ভর্তি করেছিল পরিবার। সেই ভর্তি বাতিল করে তাকে মাদরাসা থেকে বিদায় করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তবে মাদরাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই শিশুর অভিভাবকের আচরণ খারাপ হওয়ায় তাকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের ঘটনার পর শিশুটির মানসিক সমস্যা হয়েছে। তাকে তার পরিবার একজন মানসিক চিকিৎসক দেখাচ্ছে।

ওই শিশুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিশুটির বাবা শারীরিক প্রতিবন্ধী। নিজের কোনো ভিটেমাটি নেই। রেলের জমির বস্তিতে একটি ঘর করে বসবাস করেন। এক সড়ক দুর্ঘটনায় শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়ে গেলেও শিশুটির বাবা এখন অটোরিকশা চালান। একটি বেসরকারি হাসপাতালে আয়া হিসেবে চাকরি করেন শিশুর মা।  

ভুক্তভোগী শিশুর মা বলেন, ২০২০ সালের ২১ মার্চ তিনি ছিলেন হাসপাতালে। শিশুর বাবা অটোরিকশা চালাতে গিয়েছিলেন। ওই কিশোর বাড়িতে গিয়ে শিশুটির কাছে দিয়াশলাই চায়। ওই শিশু দিয়াশলাই দিলে কিশোর সেটি নিয়ে হাঁটা ধরে। দিয়াশলাইয়ের জন্য ওই শিশুও পিছু নেয়। তখন বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে শিশুটিকে ধর্ষণ করে ওই কিশোর। ধারণ করা হয় ভিডিও। ঘটনা জানাজানি হলে পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করে। জব্দ করা হয় মুঠোফোন। পরে এ ঘটনায় ওই বছরের ২২ মার্চ মামলা করা হয়। ওই মামলায় ওই কিশোর এখন কারাগারে।  

শিশুটির মা বলেন, ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে মেয়েটা পেটের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব করে। দিনে দিনে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। তার মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছে। এজন্য তাকে একজন মানসিক চিকিৎসককে দেখাচ্ছেন।

শিশুর মা বলেন, ১০ দিন আগে রাজশাহী নগরীর একটি মহিলা মাদরাসায় তার মেয়েকে ভর্তি করা হয়েছিল। বেসরকারি এই মাদরাসায় শিক্ষার্থীদের আবাসনের ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ভর্তির তিনদিন পর তার মেয়েকে মাদরাসার গেটের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। তারপর গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। মেয়েটা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে তখন কাঁদছিল। পরে মাদরাসার পরিচালক তার মেয়েকে দূরে কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দিতে বলেন।

মাদরাসার পরিচালক মাওলানা মোহা. হাবিবুল্লাহ বলেন, যেসব অভিভাবকের আচরণ খারাপ, তাদের তারা মাদরাসায় রাখেন না। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়টি তিনি পরে শুনেছেন। আসলে ওর মা-বাবার আচরণ খারাপ। এমন কথা বলে যে মাদরাসার পরিবেশ নষ্ট হয়। এজন্য অন্যান্য অভিভাবক আপত্তি করেন। তাই শিশুটির ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।

নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘শিশুটির মায়ের দায়ের করা মামলা তদন্তাধীন। তদন্ত চলার সময় কিছু বলব না। তবে প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এখন ডিএনএ টেস্ট করা হবে। তারপর অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে। ডিএনএ টেস্ট না হওয়ায় অভিযোগপত্র দেওয়া যাচ্ছে না।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031979084014893