ধর্ষণের সময় চিৎকার দেয়ায় শিশু সিহাবকে হত্যা করে ‘মুরগি চাচ্চু’

গাজীপুর প্রতিনিধি |

গাজীপুর মহানগরের পুবাইল এলাকায় শিশু সিহাব হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, মুরগির দোকানের কর্মচারী নাসির মিয়া সিহাবকে হত্যা করেছে। শিশু সিহাবকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছিলো সে। ধর্ষণের সময় চিৎকার দেয়ায় শিশু সিহাবকে নাসির হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

নাসিরকে গত সোমবার গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে ইতোমধ্যে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাসির এ ঘটনায় আদালতে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। 

নিহত সিহাবের পূব পরিচিত ছিলো নাসির। সিহাব তাকে ‘মুরগি চাচ্চু’ বলে ডাকতো। 

জানা গেছে, গ্রেফতার নাসির মিয়া (২৮) নোয়াখালী জেলার কবিরহাট থানার সোনাপুর জমিদার হাট গ্রামের পাকমুন্সীহাট এলাকার মো. কামাল মিয়ার ছেলে। সে গাজীপুরের মহানগরের পুবাইল থানার মাজুখানবাগের টেক এলাকার মো. সাঈদ আহমেদের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ও মাজুখান উত্তরপাড়ায় মো. ফারুকের মুরগীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন।

নিহত সিহাব হোসেন (৬) পুবাইল থানার মাজুখান উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা জুয়েলের ছেলে।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ নভেম্বর দুপুরে ছয় বছর বয়সি শিশু সিহাব নিখোঁজ হয়। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও না কোন খোঁজ পায়নি পরিবার। নিখোঁজের পরদিন বাড়ির অদূরে মাজুখান গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের নানী নাছিমা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে পূবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন।

দীর্ঘ সময় তদন্তের পর পুলিশ শিশু সিহাব হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. নাসির মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইর পরিদর্শক মো. রফিকুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, উত্তরপাড়ায় মো. ফারুকের মুরগীর দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো নাসির মিয়া। মালিক ফারুক দোকানে সময় দিতেন না। নাসির মিয়া নিজেই মুরগি ও মুরগির খাবার বেচাকেনা করতেন। ফিড খেয়ে ফেলার সময় মুরগি তাড়ানোর জন্য দোকানদার নাসির খেলনা পিস্তল দিয়ে মুরগি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তেন। পাশের গলির জুয়েলের ছেলে সিহাব মাঝে মধ্যে তার কাছে দোকানে আসতো এবং খেলনা পিস্তলের ছোড়া গুলি ভিকটিম সিহাব কুড়িয়ে আনতো। নাসির মাঝে মধ্যে সিহাবকে চিপস্ কিনে দিতেন।  ভিকটিম সিহাব নাসিরকে ‘মুরগি চাচ্চু’ বলে ডাকতো। এভাবে ভিকটিম সিহাবের সঙ্গে নাসিরের সম্পর্ক গড়ে উঠে।

তিনি আরও বলেন, আসামি নাসির একই মহল্লায় ইমনদের বাসায় ভাড়া থাকতেন। গত ২৫ নভেম্বর নাসির বাসায় নিজ কক্ষে ল্যাপটপে নীল ছবি দেখছিলেন। দুপুরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সময় ভিকটিম সিহাব নাসিরের রুমে যায়। তখন নাসিরের মাথায় বিকৃত চিন্তা আসে এবং সিহাবকে ধর্ষণের চেষ্টা করলে চিৎকার দেয় সে। আসামি নাসির মুখ চেপে ধরলে শিশু সিহাবের দেহ নিথর-নিস্তেজ হয়ে যায়। সিহাবের মৃতদেহ খাটের নিচে রেখে দরজা লাগিয়ে নাসির বাইরে চলে যায়। পরবর্তীতে ভোর রাতে ভিকটিম সিহাবের মৃতদেহ সালাম মুন্সীর বাড়ির পাশে ফেলে রাখে। ঘটনার তিন দিন পরে নাসির এলাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম চলে যায়। দুই দিন পরে চট্টগ্রাম থেকে ফিরে আসে নাসির। এর এক সপ্তাহ পর নাসির ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় চলে যায়।

মরদেহ উদ্ধারের পর নিহত সিহাবের দাদী নাছিমা বেগম বাদি হয়ে অজ্ঞাত আসামীদের নামে পুবাইল থানায় মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত শেষে পিবিআই শিশু হত্যার রহস্য উদঘাটন করে।

পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আসামি নাসির বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন। ল্যাপটপে নীল ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম শিশু সিহাবকে ধর্ষণের চেষ্টার সময় পাশবিক নির্যাতন করে হত্যাকাণ্ড ঘটায় সে। শিশু সিহাব হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে গত সোমবার (১৬ জানুয়ারি) তাকে মাজুখান এলাকা থেকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নাসির মিয়া শিশু সিহাব হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে গাজীপুর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039689540863037