ধানমণ্ডি লেক ঘিরে ‘খুনি কিশোর গ্যাং’

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজধানীর ধানমণ্ডি লেক এলাকা এক শ্রেণির কিশোরের অপরাধকেন্দ্র হয়ে উঠেছে। আড্ডার নামে এখানে জড়ো হয়ে অনেকে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করছে। তাদের বেশির ভাগই আবার আশপাশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এই কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া তৎপরতায় উৎকণ্ঠায় আছেন লেকের পাশে হাঁটতে আসা সাধারণ মানুষ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। রোববার (২০ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন জহিরুল ইসলাম।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জিগাতলায় লেকের পাশে গত ৩০ সেপ্টেম্বর খুন হন জুবায়ের আহমেদ (১৯) নামের এক তরুণ। নিহতের স্বজন ও পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের প্রতিবাদ করায় চার কিশোর এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। এ ঘটনায় পুলিশ কিশোর গ্যাংয়ের তিনজনকে গ্রেফতার করে। পরে তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। তাদের স্বীকারোক্তিতে ধানমণ্ডি লেক ঘিরে গড়ে ওঠা উঠতি বয়সী অপরাধীদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

ধানমণ্ডি থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, ‘ধানমণ্ডি লেকের পাশে কিছু পোলাপান বসে আড্ডা দেয়। তাদের নজরে রাখতে এবং আড্ডা যাতে না দিতে পারে সে জন্য সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল থাকে। এর পরও কোনো কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে যায়। জুবায়ের হত্যাও তেমনই একটি ঘটনা।’

ওসি বলেন, ‘লেকে আড্ডা দেওয়া কম বয়সীদের মাঝেমধ্যেই ধরে আনা হয়। দেখা যায় বেশির ভাগই ধানমণ্ডি এলাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী। আটকের পর পরিবারকে খবর দিয়ে এনে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়। এর বাইরে কিছু ভবঘুরে থাকে। তবে তাদেরও জটলা করতে দেয়া হয় না।’

পুলিশ জানায়, নিহত জুবায়ের ছিলেন সীমান্ত স্কয়ারের নবম তলার একটি রেস্টুরেন্টের কর্মী। বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার গোটার গ্রামে। তিনি হাজারীবাগের ধোপাপাড়া এলাকায় থাকতেন। তাঁকে হত্যার ঘটনায় চারজনকে আসামি করে ধানমণ্ডি থানায় মামলা করেন নিহতের ভাই অলিউর রহমান। সব আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে হাসান, পলাশ ও মাহবুব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

জবানবন্দিতে আসামিরা জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে তারা ধানমণ্ডি-জিগাতলায় লেকের পাশে আড্ডা দিচ্ছিল। এ সময় তারা সেখান দিয়ে যাওয়ার পথে জুবায়ের ও তাঁর সহকর্মী শাহীনকে মোবাইল ফোন দিতে বলে। শাহীনের ফোনটি তারা জোর করে নিয়ে যায়। পরে জুবায়ের ও শাহীন বাসায় গিয়ে চার-পাঁচজন মিলে সেখানে এসে ছিনতাইকারীদের খুঁজে বের করে ফোন ফেরত দিতে বলে। ফোন ফেরত দিতে অসম্মতি জানালে শাহীন একজনকে চড় মারেন। তখন হাতাহাতি শুরু হলে এক পর্যায়ে জুবায়েরকে ছুরিকাঘাত করে হাসান। জুবায়েরের সঙ্গে থাকা অন্যরা তখন ভয়ে পালিয়ে যায়। পরে ছিনতাইকারীরা চলে গেলে তারা ফিরে এসে জুবায়েরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। 

স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন জানায়, সকাল, বিকেল ও সন্ধ্যায় ধানমণ্ডি লেকের পারে হাঁটতে আসাটা অস্বস্তি আর ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশফাক আলী নামের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, ‘জিগাতলার অংশে সকাল-সন্ধ্যা একটু হাঁটতে এসেও অস্বস্তিতে থাকা লাগে। পোলাপান মারপিট করে, নেশা করে। আগে পরিবার নিয়ে আসতাম। এখন একাই হাঁটতে আসি। কয়েক দিন পর হয়তো সেটাও সম্ভব হবে না।’

জুবায়েরের রুমমেট রায়হান আহমদ বলেন, ‘লেকের ধারে কয়েকজন পোলাপান শাহীনের মোবাইল নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করতে গিয়া জুবায়ের মারা গেল। আমরা রেস্টুরেন্টে কাজ কইরা খাই। মাঝেমধ্যেই সেখানে কিছু পোলাপানরে ওত পাইত্তা থাকতে দেহি। তাদের কিছু বলাও যায় না।’

জুবায়ের হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানার এসআই জিয়াউর রহমান বলেন, ‘আসামিরা উঠতি বয়সের। কেউ দরজির দোকানে কাজ করে। কেউ বা কোনো দোকানে কাজ খুঁজছে। এর মাঝেই দল বেঁধে আড্ডার মধ্য দিয়ে ওরা ছিনতাইয়ের মতো অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। ঘটছে খুনখারাবিও।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023629665374756