ধারণা ছিলো, এ ধরনের একটা আঘাত আসতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার একটা ধারণা ছিলো, এই ধরনের একটা আঘাত আসতে পারে। 

বুধবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এডিটরস গিল্ডসের উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও হেড অব নিউজ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বানুমানের কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি জানতাম যে ইলেকশন করতে দেবে না। তারপরেও আমরা ইলেকশন করে ফেলেছি। ইলেকশন করার পর ইলেকশন গ্রহণযোগ্য হবে না। সেটাও গ্রহণযোগ্য আমরা করতে পেরেছি। সরকার গঠন করতে পেরেছি। আমার একটা ধারণা ছিলো এই ধরনের একটা আঘাত আবার আসবে।’

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র ছিলো জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। ... এই যে লোক চলে আসা, এবার আমরা কিন্তু আগে থেকে খবর পেয়েছি লোক ঢুকবে। গোয়েন্দা দিয়ে সব হোটেল, কোথায় থাকতে পারে সেগুলো কিন্তু নজরদারিতে আনা হয়েছে। কিন্তু ওরা সেখানে ছিল না, এরা চলে এসেছে ঢাকার ঠিক বাইরের পেরিফেরিতে (সংলগ্ন এলাকায়)।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সমস্ত বাংলাদেশ থেকে শিবির-জামায়াত এরা কিন্তু এসেছে। সাথে সাথে কিন্তু ছাত্রদলের ক্যাডাররাও কিন্তু সক্রিয় ছিলো। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে এরাও (বিএনপি) কিন্তু সক্রিয় ছিলো।’

আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন তখনও কিন্তু লাশ পড়েনি। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের (যুক্তরাষ্ট্রের) বক্তব্যে এসে গেল যে লাশ পড়েছে। লাশের খবর তাদের কে দিল? তাহলে লাশ ফেলার নির্দেশটা কে দিয়েছে? এটাও খবর নেওয়া দরকার। তারপরেই কিন্তু লাশ পড়তে শুরু করল।’

কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাংলাদেশ টেলিভিশন, দুর্যোগ ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ, ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এভাবে কেন সুযোগটা সৃষ্টি করে দিল, সেই জবাবটাও জাতির কাছে তাদের দিতে হবে। আমরা তো বারবার তাদের সঙ্গে বসলাম। প্রজ্ঞাপন সেটাও করা হলো। তাদের কোনো দাবি তো পূরণ করা ছাড়া রাখিনি।’

আন্দোলনকারীদের একদিন জাতির কাছে জবাব দিতে হবে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দাবি তারা করেছিলো কোটা সংস্কারে, যতটুকু চেয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছি। যখন তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলো, তারপরেও তারা এই জঙ্গিদের সুযোগ করে দিল কেন? কোটা আন্দোলনকারীদের কিন্তু জাতির কাছে একদিন এই জবাব দিতে হবে। কেন মানুষের এত বড় সর্বনাশ করার সুযোগ করে দিল।’

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের বিষয়ে সরকারের সহানুভূতিশীল মনোভাবের কথা উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমরা সব সময় তাদের সঙ্গে সহানুভূতি দেখিয়েছি। তাদের সব সময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যেসব ঘটনা ঘটেছে এটা কখনো ক্ষমা করা যায় না।’

দেশবাসীকে সব ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ, পোশাক তৈরি করা হলো কালো প্যান্ট, সাদা শার্ট, ফলস (ভুয়া) আইডি কার্ড, পেছনে ব্যাগের মধ্যে কী আছে? পাথর আর ধারালো অস্ত্র। মসজিদে অস্ত্র নিয়ে ইমামকে মাইকিং করতে বাধ্য করা, এই যে জঙ্গিবাদের একটা বীভৎস চেহারা আজ সবার সামনে চলে এলো এটার বিরুদ্ধে জাতিকে, সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশবাসীকে অনুরোধ করবো। যারা এই ধরনের দেশের সর্বনাশটা করল, যারা আজ গণমানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য, তাদের আয় বৃদ্ধি, তাদের চলাচলের সুবিধার জন্য, তাদের জীবন মান উন্নত করবার জন্য যতগুলো স্থাপনা তৈরি করেছি সবগুলোতেই তারা আঘাত করেছে, সবগুলো তারা ভেঙে দিয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘(এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের) ক্ষতিটা কার? নিশ্চয়ই জনগণের। এখানে তো জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। কারণ এরা তো কোনোদিনই কোনো দেশে ভালো কিছু করতে পারেনি।’

বিগত বছরগুলো গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকা এবং স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা জঙ্গিবাদ দমন করে দীর্ঘসময় একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছি। সেই জায়গাটায় আজ চরম একটা আঘাত দিল।’

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কারফিউ দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তো চাইনি আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটুক, আমাদের কারফিউ দিতে হোক। ... একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে এটা আসুক, এটা আমাদের কাম্য ছিলো না। কিন্তু না দিয়ে কোনো উপায় ছিলো না। না দিলে আরও কত লাশ পড়তো তার হিসাব নেই।’

তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে কী দীর্ঘ সংগ্রামের পর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত ছিলো, দেশে উন্নতিও করতে পেরেছিলাম। মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে যে উন্নয়ন করেছি আর কে পেরেছে এর আগে।’

গণমাধ্যমগুলোকে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটা ঠিক অনেকে গুজবে কান দেয়। কান নিয়ে গেছে চিলে, ওটার পেছনে ছোটে, কানে হাত দিয়ে দেখল না কান আছে কি না। মিথ্যাচারের হাত দেখে মানুষকে রক্ষা করেন, মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে পারে সেভাবে সংবাদগুলো পরিবেশন করুন।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি এর সুফলও মানুষ পেল, কুফলও মানুষ পেল। আপনাদের কাছে যা তথ্য আছে আপনারা তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনমত সৃষ্টি করুন।’

মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন এডিটরস গিল্ডস-এর প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বাবু। এরপর বক্তব্য রাখেন, সিনিয়র সাংবাদিক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ডিবিসি টেলিভিশনের এডিটর ইন চিফ মঞ্জুরুল ইসলাম, ভোরের কাগজ সম্পাদক এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, ঢাকা জার্নালের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নাগরিক টেলিভিশনের হেড অব নিউজ ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, আমাদের সময়ের সম্পাদক মাইনুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাজাহান সর্দার, ডিবিসি টেলিভিশনের নিউজ এডিটর জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব নিউজ আশিষ সৈকত, বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, একাত্তর টিভির হেড অব নিউজ শাকিল আহমেদ, অ্যানার্জি অ্যান্ড পাওয়ার-এর সম্পাদক মোল্লাহ আমজাদ, কিংস নিউজের হেড অব নিউজ নাজমুল হক সৈকত এবং আরটিভি’র হেড অব নিউজ মামুনুর রহমান খান।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা - dainik shiksha আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031929016113281