নকল বই বিক্রির দায়ে দশ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে এনসিটিবি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নকল বই বিক্রি, নিম্নমানের পাঠ্যবই সরবরাহ ও নির্ধারিত সময়ে সরকারের বই সরবরাহে ব্যর্থতার কারণে ১০টি ছাপাখানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। ১০ প্রতিষ্ঠানের কোনটিকে কালো তালিকাভুক্তি, কাউকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে এনসিটিবি। এই ১০ প্রতিষ্ঠানের ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে আজ। রোববার (৮ মার্চ) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়,  সংস্থাটি গত মাসে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানো (শো-কজ) নোটিশ দিয়েছিল, তারা গত সপ্তাহে এর জবাবও দিয়েছে। এমধ্যে তিনটি প্রতিষ্ঠান গত বছর সরকার অনুমোদিত একাদ্বশ শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয়ের বই নকল করে বাজারজাত করেছিল। বাকি সাত প্রতিষ্ঠান গত বছর ২০২০ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজে নানা অনিয়ম, প্রতারণা ও শর্ত ভঙ্গ করে।

এনসিটিবি’র ‘স্থায়ী উৎপাদন কমিটি’র সিন্ধান্তের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছিল। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাব পাওয়ার প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নিতে এনসিটিবি’র বোর্ড সভা বসছে আজ। এতে তাদের অপরাধের ধরণ অনুযায়ী কো প্রতিষ্ঠানকে একবছর, কাউকে দুই বছর এবং কাউকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে পারে এনসিটিবি। এনসিটিবি’র সদস্য (টেক্সট) ও সংস্থার ‘স্থায়ী উৎপাদন কমিটি’র আহ্বায়ক প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম গতকাল বলেন, ‘১০টি প্রতিষ্ঠানই কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দিয়েছে বলে আমাকে জানানো হয়েছে। এগুলোর বিষয়ে আগামীকাল (আজ) চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

এনসিটিবি সূত্র জানায়, সরকার অনুমোদিত একাদ্বশ শ্রেণীর বিভিন্ন বিষয়ের বই নকল করে বাজারজাত করার অভিযোগে তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠান তিনটি হলো, রাজধানীর মাতুয়াইলের ফাইব স্টার প্রিন্টিং প্রেস, ৩৪ নম্বর আরএম দাস রোডের অয়ন প্রিন্টিং প্রেস এবং ৩৭ নম্বর আরএম দাস রোডের রাইয়ান প্রিন্টার্স।

এই তিন প্রতিষ্ঠানকে শো-কজ করার বিষয়ে প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘তারা একাদ্বশ শ্রেণীর বই নকল করে খোলা বাজারে বিক্রি করেছিল। পরে এনসিটিবি’র পক্ষ্য মামলা করা হয়। কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছিল থানা পুলিশ। এটি এখন বিচারাধীন। এ অবস্থায় তিন প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির জন্য আইনজীবীর পরামর্শ চাওয়া হয়েছে।’

এদিকে নির্ধারিত সময়ে ২০২০ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই সরবরাহ করতে না পারা, নিম্নমানের কাগজে বই মুদ্রণ ও অন্যের ছাপাখানা থেকে মানহীন বই ছেপে সরবরাহ করার অভিযোগে সাতটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে এনসিটিবি। এসব প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যবই ছেপে সরবরাহ করেছিল। তবে প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপায় যারা অনিয়ম ও শর্ত ভঙ্গ করেছে সেসব প্রতিষ্ঠানের তালিকা এখন হয়নি।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক ছাপায় যে সাত প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো- রাজধানীর ৩৪ নম্বর আরএম দাস রোডের সেতু অফসেট প্রিস, ৪১/৪২ নম্বর রুপচাদ দাস লেনের নিউ নাহার প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, ৬/১০ নম্বর পিসি ব্যানার্জি লেনের মা-বাবা প্রিন্টার্স, মাতুয়াইলের বাদশা মিঞা রোডের ভাই ভাই প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স, ২৯/১ রুপচাদ দাস লেনের আমাজন প্রিন্টিং প্রেস, ২ নম্বর গোলাপ সাহা লেনের নজরুল ইসলাম প্রিন্টিং প্রেস এবং ঠাকুরগাঁও জেলা সদরের আশ্রমপাড়া এলাকার মোল্লা ইন্টারন্যাশনাল প্রিন্টং প্রেস অ্যান্ড প্যাকেজিং।

এই সাত প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়ার বিষয়ে  প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের সবাই যে বড় ধরনের অপরাধ করেছে, তা নয়। একটি প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগেই তাদের ছাপানো ৬০ লাখ কপি বই ডেস্ট্রয় (ধ্বংস) করেছে। তাদের বড় ধরনের শাস্তি দেয়া কী ঠিক হবে? আর তিনটি প্রতিষ্ঠান অন্য ৫/৬ টি ছাপাখানার বাতিল হওয়া বই এনে সরবরাহ করেছে। এই ধরনের প্রতারণা বা অপরাধ ক্ষমা করা যায় না।’

অভিযুক্ত ছাপাখানাগুলোকে যার যার অপরাধ ও ভুল-ত্রুটি অনুযায়ী তাদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘তারা এখনও নোটিশের জবাব দেয়নি। তাদের ১৪ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। জবাব পাওয়ার পর সেগুলো এনসিটিবি’র বোর্ড সভায় উপস্থাপন করা হবে। বোর্ড সভাই চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নেবে।’

২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য গত বছর বিনামূল্যের ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৭ কপি পাঠ্যবই ছেপে সরবরাহ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। সারাদেশের চার কোটি ২৭ লাখ ৫২ হাজার ১৫৮ জন শিক্ষার্থীর কাছে ওইসব বই বিতরণ করা হয়। ২০২০ শিক্ষাবর্ষে মাধ্যমিক স্তরের জন্য মোট ছাপা হয় ২৪ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৭৯ কপি বই। সারাদেশের মোট ২৫৩টি প্রিন্টিং প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজ করেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর - dainik shiksha ৫ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস, তাপমাত্রা নিয়ে সুখবর বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027871131896973