নকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঐতিহ্যবাহী কোহিনুর জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়ের নামে নকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে ক্ষোভে ফুসে উঠেছে এলাকাবাসী। দুর্নীতির দায়ে বহিষ্কৃত শিক্ষক আতিকুর রহমান ও আহসান হাবিব নামে দুই সহোদরের বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রকৃত বিদ্যালয়ের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার করে নকল বিদ্যালয় স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। ফলে এমপিওভুক্তি বাতিলসহ নকল বিদ্যালয় বন্ধে সোমবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল শেষে গৌরীপুর ঈদগাহ মাঠের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে এলাকাবাসী।

মিছিলের মূল নেতৃত্বে ছিলেন মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেন ভুইয়া। আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগ নেতা আল মামুন, শামীম আহমেদ, শাখাওয়াত হোসেন, জয়নাল আবেদীন বাদল ও মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব হোসেনসহ অনেকে।

গত ১২ জুন দৈনিক শিক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর তদন্ত করতে বলা হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে। কিন্তু গড়িমসি করায় ৭ জুলাই তাগাদা দেয় মন্ত্রণালয়।    প্রতিবেদন দুটি দেখুন:  স্কুলে শিক্ষক সহোদরের দুর্নীতি তদন্তে অধিদপ্তরকে তাগিদ

                          স্কুলের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষক সহোদরের দুর্নীতি

জানা গেছে, রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুরে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে কোহিনুর জুট মিলে কর্মরতদের সন্তানদের পড়াশুনা এবং এলাকাবাসীর সুবিধার্থে কোহিনুর জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর থেকে সুনামের সাথে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। ২০০৫ সালে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম এবং দুর্নীতির দায়ে শিক্ষক আতিকুর রহমান ও আহসান হাবিবকে বহিষ্কার করে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ। এর পরেই ঘটে বিপত্তি। দু’বছর পর অর্থাৎ ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে একই উপজেলার মহেষপুর ইউনিয়নের ঘাঘটিয়া গ্রামে অভিযুক্ত দুই শিক্ষক প্রথমে কোচিং সেন্টার চালু করেন। পরে কোহিনুর জুট মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম এবং রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে নকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে তারা। একই সাথে উপজেলা এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ করে পাঠদানও চালু করা হয়।

শুধু তাই নয়, মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলনসহ সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন তারা।

অন্যদিকে জুট মিলের কাছে গৌরীপুরে প্রতিষ্ঠিত আসল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পাঠদান কার্যক্রম পরিচালায় নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। ফলে শত শত শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছে। জটিলতা নিরসনে অবশেষে এলাকাবাসী আদালতে মামলা ঠুকে দিলে জবাবে এলাকাবাসীর বিরুদ্ধেও পাল্টা মামলা দায়ের করেন অভিযুক্ত শিক্ষক আতিকুর রহমান। এ নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব এখন তুঙ্গে। আর বলির শিকার প্রকৃত বিদ্যালয়টি।     

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ছাত্র উপজেলা যুবলীগ নেতা আল মামুন বলেন, বহিষ্কৃত শিক্ষক আতিকুর রহমান ও আহসান হাবিব একাধিক ছাত্র-ছাত্রীর নামে উপবৃত্তির টাকা এবং মেধা বৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করাসহ স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেবার কথা বলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয় থেকে তাদের দু’জনকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু তাদের জালিয়াতি এবং ষড়যন্ত্রের কারণে ৩৭ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী গৌরীপুর কোহিনুর জুট মিলস উচ্চ বিদ্যালয়টি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। তাই, অভিযুক্ত দুই শিক্ষককের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবী এলাকাবাসীর। একই সাথে প্রকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষসহ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

প্রকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ও রেজিষ্ট্রেশন নম্বর জালিয়াতির অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক আতিকুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, গৌরীপুরে প্রতিষ্ঠিত কোহিনুর জুট মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের কাগজ-পত্রে নিজস্ব জমি না থাকার কারণে ২০০৭ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ঘাঘটিয়া গ্রামে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে, গৌরীপুরে এবং ঘাঘটিয়া এ দুটি স্থানেই পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জটিলতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত শেষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026209354400635