নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে অস্বচ্ছতার অভিযোগ

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তিতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগ করেছেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন মেধা তালিকায় এগিয়ে থেকেও ভর্তির জন্য নির্বাচিতদের তালিকায় নাম আসেনি। আবার অনেকে মেধা তালিকায় এগিয়ে থেকেও কোনো বিষয় পাননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

সমন্বিতভাবে ২২টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নেওয়া জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে ৭ম মেরিট লিস্ট পর্যন্ত ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে। তারপরও দেড় শতাধিক আসন শূন্য থাকায় ৮ম মেরিট লিস্ট প্রকাশ করে। পরে তা স্থগিত করে বিভাগ না পাওয়া উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। সাক্ষাৎ শেষে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের থেকে ১৯১ জনকে ভর্তির জন্য উত্তীর্ণ করে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে মেধা তালিকায় এগিয়ে থেকেও উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকায় নাম না থাকতেও দেখা গেছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৪ শিক্ষার্থী। এছাড়া সমস্যার সমাধান চেয়ে আবেদনও করেছেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি মাসের ১৫ ও ১৬ জানুয়ারি সাক্ষাৎকার দিতে আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যাশার বেশি হওয়ায় তা সামাল দিতে হিমশিম খান দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা। এতে কেবল উপস্থিতির প্রমাণের জন্য স্বাক্ষর ও অ্যাডমিট কার্ড নিয়েই সমাপ্ত করেন সাক্ষাৎকার গ্রহণ। ১৬ জানুয়ারি রাতেই প্রকাশ করা হয় চূড়ান্ত তালিকা।

বিজ্ঞপ্তির সব শর্ত পূরণ করেও তালিকায় নাম আসেনি কমপক্ষে ১০ শিক্ষার্থীর। যাদের মধ্যে ব্যবসায় শাখার সি ইউনিটের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সুমন আহম্মেদ। মেধা তালিকায় ৭৮৮ অবস্থানে থেকেও পাননি কোনো বিভাগ। কিন্তু তার পেছনে থেকেও বিভাগ পেয়েছেন অনেকেই। একই চিত্র উঠে এসেছে সাবিকুর রহমান, শাহিনুর আক্তার, সাগর মিয়া, মো. রায়হান রাসেল, মাকসুদুল হাসান শাওন, ফাহিম মোল্লা, প্রিতম পাল শুভসহ ১০ জন শিক্ষার্থীর।

তবে জিএসটি কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা কমিটির জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ও টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ড. সেলিম আল মামুন ভুল হয়েছে এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ফলাফলে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। হয়তো তারা স্বাক্ষর করেননি, কিংবা উপস্থিত হননি। আর এত পরিমাণ শিক্ষার্থী এসেছেন আমি নিজেও তা ভাবিনি। তাই চাপ বেশি পড়ে গিয়েছিল। তবে আমাদের ভুল হওয়ার সুযোগ নেই।

তবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির স্বাক্ষর ফরম দেখতে চাইলে তা দেখানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার দপ্তর। বিপরীতে স্বাক্ষর দেখানো যায় বলে মন্তব্য করেছিলেন ড. সেলিম আল মামুন। ভর্তিচ্ছু একাধিক শিক্ষার্থী এই প্রক্রিয়াকে অস্বচ্ছ বলে মন্তব্য করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, ভর্তির জন্য যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা আসলেও অসংগতিপূর্ণ ও অব্যবস্থার মধ্যে হয়েছে। শুনেছি কয়েকজন অসদুপায় অবলম্বন করেছে। এটি খুবই দায়িত্বশীল কাজ যার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ এবং এই সমালোচনার সৃষ্টি করেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

অনুসন্ধানে ফলাফল প্রকাশে অস্বচ্ছতার সত্যতাও পাওয়া গেছে। ইউনিটভিত্তিক সব শর্ত পূরণ করেও চূড়ান্ত তালিকায় না আসার বিষয়ে দুটি কারণ উঠে এসেছে। যেখানে দুদিন সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় সংশ্লিষ্টরা দায়সারাভাবে কাজ করেছেন। এছাড়া একাধিক সূত্র মতে নিজেদের একাধিক পছন্দের ভর্তিচ্ছুকে ভর্তি করাতে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে অনেককে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে। এছাড়া সাক্ষাৎকারে আসা শিক্ষার্থীদের কাছে কোনো ডকুমেন্টও প্রদান করেনি কর্র্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো বক্তব্য প্রদান না করে এড়িয়ে গিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান। বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা কিছু অভিযোগ পেয়েছি এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেব।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050489902496338