নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি

জাককানইবি প্রতিনিধি |

পরপর তিন মেয়াদে প্রক্টর। সেই সঙ্গে একটি বিভাগের প্রধান এবং একটি অনুষদের ডিনও তিনি। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পদ একই ব্যক্তিকে দেয়ার নজিরবিহীন এমন ঘটনা ঘটেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাককানইবি)। আর সেই ভাগ্যবান ব্যক্তিটি হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান।  

নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এক ব্যক্তিকে এতগুলো পদে আসীন করা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে। তাঁরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনাকে উপেক্ষা করেই পরপর তিনবার উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে প্রক্টর হিসেবে দায়িত্বে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জানা যায়, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬১তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তক্রমে সে বছরের ১৮ জুলাই থেকে দুই বছরের জন্য প্রক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয় অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমারকে। নির্ধারিত দুই বছর মেয়াদ শেষ হলে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ জুলাই থেকে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রক্টরের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। সেই দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ জুলাই। এরপর গত বছরের ১৮ জুলাই থেকে চলতি দায়িত্ব হিসেবে আবার তাঁকে প্রক্টরের দায়িত্ব পালন করতে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সিনিয়র শিক্ষক একজনকে বারবার দায়িত্বে না রেখে নতুন কাউকে সুযোগ করে দেওয়ার পক্ষে মত দিলেও তা কানেই নিচ্ছে না সিন্ডিকেট।

প্রক্টরের দায়িত্বের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন এবং এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উজ্জ্বল কুমার প্রধান। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে বলে দাবি করেছেন সিনিয়র শিক্ষকেরা।

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের বিশ্ববিদ্যালয় আইনের প্রথম সংবিধির দফা-১৭(২)-তে বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল দায়িত্বের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা যাইবে সেই সকল দায়িত্বের মধ্য হইতে একসঙ্গে একাধিক দায়িত্ব কোন শিক্ষক, কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে প্রদান করা যাইবে না।’ আইনের সংবিধিতে সুস্পষ্টভাবে এটি বলা থাকলেও আইনের তোয়াক্কা না করেই তাঁকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. শেখ সুজন আলী বলেন, ‘একজন ব্যক্তিকে একই সঙ্গে একাধিক দায়িত্ব না দিয়ে দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে বণ্টন করা হলে তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের গতিশীলতা বাড়বে বলে আমি মনে করি।’

উজ্জ্বল কুমার প্রধানকে ডিন হিসেবে নিয়োগেও রয়েছে জ্যেষ্ঠতার ক্রম না মানার অভিযোগ। গত ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৯তম সিন্ডিকেট সভার অনুমোদনক্রমে বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন হিসেবে নিয়োগ পান উজ্জ্বল কুমার প্রধান। বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৬-এর ২২ (৫) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ভাইস চ্যান্সেলর সিন্ডিকেটের অনুমোদনক্রমে, প্রত্যেক অনুষদের জন্য উহার বিভিন্ন বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য হইতে, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে, পালাক্রমে দুই বৎসর মেয়াদের জন্য ডিন নিয়োগ করিবেন।’ কিন্তু এই অনুষদে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে সপ্তম অবস্থানে ছিলেন অধ্যাপক ড. উজ্জ্বল কুমার প্রধান। এখানেও আইনের সম্পূর্ণ ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মত দিয়েছেন একাধিক শিক্ষক।

এ বিষয়ে অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার প্রধান বলেন, ‘উপাচার্য স্যার বিধির মধ্যে থেকেই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে কোনো বিধির লঙ্ঘন হয়েছে বলে আমি মনে করি না।’

যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর বলেন, এখানে সিন্ডিকেট যা ভালো মনে করে তা-ই করা হয়। এখানে ভিসি এককভাবে কিছু করেন না। ভিসি সিন্ডিকেটে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। সিন্ডিকেট চাইলে অনেক কিছু বাতিল করতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029170513153076