নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তেল বিলাস

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্যে জ্বালানি খাতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ দিয়েছিল ৪৮ লাখ টাকা। অর্থবছর শেষ হতে আরও ৪ মাস অবশিষ্ট থাকলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেই বরাদ্দকৃত অর্থের অতিরিক্ত আরও ৪ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি শিক্ষার্থী বাস ও ৪টি শিক্ষক কর্মকর্তাদের পরিবহনে ব্যবহৃত সিভিলিয়ানের পরিচালনা করতে এই ব্যয় করা হয়েছে।

এই অতিরিক্ত ব্যয় করাটিকে নিয়মের ব্যত্যয় হয়েছে বলে মনে করছে ইউজিসি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে আগামীতে সমন্বয় করে ব্যবস্থা নেওয়ার ভাবনায় কাজ করা হচ্ছে। তবে এখন থেকে সমন্বয়ের সুযোগ থাকছে না বলেও মন্তব্য ইউজিসির।

২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি তেলের ব্যবহারের যে চিত্র পাওয়া গেছে তাতে দেখা যায় পুরো বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকা ২০২০-২১ অর্থবছরে জ্বালানি বাবদ ২৫ লাখ ৮৫ হাজার ৫৬৮ টাকা ব্যয় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসন। এই সময় সরকার থেকে লকডাউনের ঘোষণা থাকলেও প্রতি সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে ত্রিশাল যাতায়াত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক। এছাড়া ত্রিশালের অভন্তরীণ ৪ কিলোমিটারের সড়কে ময়মনসিংহ চ- ৫১০০২১ নম্বরের মাইক্রো ও এর অবর্তমানে অন্য একটি মাইক্রো ব্যবহার করে গ্যাস বাবদ বন্ধ ক্যাম্পাসে ব্যয় করা হয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮২৬ টাকা।

এই সময়ের ব্যয়গুলোকে সরকারের সিদ্ধান্ত না মানার শামিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, সরকার যখন সারা দেশ লকডাউন ঘোষণা করেছে সেই সময়ে এমন ব্যয় হলে তা কেবল অনিয়মই নয় সরকারের সিদ্ধান্তেরও লঙ্ঘন। যা বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারে না। রাষ্ট্রের নিয়মের বাইরে গিয়ে কোনো কাজ করবার সুযোগ নেই।

তবে সে সময়ের গাড়ি পরিচালনা প্রশাসনের সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. আরিফুর রহমান। তিনি আরও বলেন, ঢাকায় গাড়ি চলাচলের বিষয়ে আমি একমত না থাকলেও প্রশাসনের সিদ্ধান্তে আমার তা করতে হয়েছে।

বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে তেলের এত ব্যয় শুনে বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, আমি এমন ঘটনা আগে শুনিনি। আর আমি আগের বিষয়ে অবগত নই। তবে বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এরকম ব্যয় হয়ে থাকে সেটি উচিত হয়নি। এমন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, এখানে একটা তেলের ব্যবসা হয়েছে। বন্ধ ক্যাম্পাসে খালি পকেটকে ভরতেই কেউ কেউ এই স্মার্ট পথ খুঁজে নিয়েছে। এছাড়া একটি পাম্প থেকেই তেলের সরবরাহ নেওয়ায় এক ধরনের মুনাফা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেণির সিন্ডিকেট। তারা তেল নিয়ে মুনাফা করছে। ক্ষতি হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের।

পরিবহন দপ্তরের যোগসাজশেই তেলের বাণিজ্য চলে বলেও জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিকজন। পরিমাণ নির্ধারণ করার কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারেনি দপ্তরটি। তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার আক্ষেপও রয়েছে পরিবহন প্রশাসকের। বারবার চেষ্টাও করেছেন বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে একাধিক তেলের পাম্প থেকে তেল ক্রয়ের প্রস্তাব দিলেও সেটি বাস্তবায়ন করতে পারেননি তিনি।

অভ্যন্তরীণ কারণ দেখিয়ে তেল ক্রয়ের পাম্প নিয়ে আর কথা বলতে চাননি পরিবহন প্রশাসক আরিফুর রহমান।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বরাদ্দের থেকে ব্যয় বেশি হওয়ায় সমাধান কি প্রশ্নে অর্থ ও হিসাব শাখার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাস তো চালু রাখতেই হবে। তাই আগামী অর্থবছরের সমন্বয় করে হয়তো সমাধান করতে হবে। এছাড়া আমরা পরিকল্পনা করে যাচ্ছি।

তবে সমন্বয়ের কথা নাকচ করে দিয়ে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, সরকার নিজেই সমন্বয় থেকে বের হয়ে আসছে। আর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে সেখানে কীভাবে সমন্বয় করা হবে? তাই সমন্বয়ের কোনো সুযোগ নেই।

লকডাউনে বন্ধ অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের সময়ে ২৫ লাখ টাকার তেল ও গ্যাস বাবদ ব্যয়কে দুর্নীতি হিসেবে উল্লেখ করে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরেও প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার উইকেন্ড প্রোগ্রামের কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ির ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়ে ইউজিসি সচিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করে কোনো ধরনের ইভিনিং কোর্স ব্যবহারের সুযোগ নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025520324707031