দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সরকারি ৮ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি করে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কারিগরি শিক্ষা প্রসারের পাশাপাশি ব্র্যান্ডিং, শিক্ষার্থীদের স্থান সংকুলান, পাঠদানের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা, কর্মরতদের সম্মানজনক দপ্তর নিশ্চিত করার করার জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের মেয়াদকাল জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬।
কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ‘কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন ৮টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একাডেমিক ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) অননুমোদিত নতুন প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রকল্পের আওতাধীন কারিগরী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ফেনী, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, খুলনা ও সিলেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট।
সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, দেশের বৃহৎ ও উচ্চ মানসম্পন্ন ৮টি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিষ্ঠানগুলো ১৯৬০-৭০ এর দশকে নির্মিত হয়েছে। ফলে অবকাঠামোগুলোর বয়স ৫২ থেকে ৬৯ বছরে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন ভবন নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোর খালি জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে বিধায় এ প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের কোনো প্রয়োজন নেই। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শ্রেণিকক্ষের সংখ্যা বাড়ানোসহ অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর সুষ্ঠু পাঠদানের সুযোগ সৃষ্টি করা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব মোকাবিলায় দক্ষ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সৃষ্টির লক্ষ্যে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হলো ৮০ হাজার ৪৮০ বর্গমিটারের ৮টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, এগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি, আসবাবপত্র (একাডেমিক ভবনের জন্য), শিক্ষা ও শিক্ষণ উপকরণ এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়। প্রকল্পের মূল ব্যয় হবে অবকাঠামো বা একাডেমিক ভবন নির্মাণে।
জানা গেছে, নির্বাচিত আটটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একটি করে ১০ তলা একাডেমিক কাম ওয়ার্কশপ ভবন নির্মাণ করা হবে। একাডেমিক ভবনে নতুন শ্রেণিকক্ষ, ওয়ার্কশপ বা ল্যাব, শিক্ষকদের কক্ষ ইত্যাদি তৈরি করার বিধান রয়েছে। যার প্রতিটি ভবনের মেঝের ক্ষেত্রফল ১০ হাজার ৬০ বর্গমিটার। সাতটি ভবনের প্রতিটির খরচ পড়বে ৪৯ কোটি টাকা করে। বাকি একটি ভবনের খরচ পড়বে ৪৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ফলে মোট আটটি ভবন নির্মাণের জন্য খরচ পড়বে ৩৯২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এসব ভবনে সব ধরনের আধুনিক সুবিধার পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি তলায় স্বতন্ত্র টয়লেট, রেলিং ও প্রয়োজনীয় র্যাম্প-সুবিধা থাকবে। ভবনে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য সব বারান্দা ও নিরাপত্তাবাতি স্মার্ট বা অটোমেটেড হবে। সব ল্যাব বা ওয়ার্কশপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে মজবুত কাঠের দরজার পাশাপাশি ফায়ার রেটেড রোলিং শাটার ব্যবহার করা হবে। সব ল্যাব বা ওয়ার্কশপে অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মোক ডিটেক্টরসহ অটোমেটেড অগ্নিনির্বাপক ব্যবহার করা হবে।
এ ছাড়াও ৮টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট পরিচালনা করার উপযোগী পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর যথাসময়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া, সকল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের ভবনের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পুনবীক্ষণ করে সংশোধিত প্রতিবেদন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযোজন করতে হবে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন কমিটিতে পরিবেশ অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং কমিটি কর্তৃক মূল্যায়ন প্রতিবেদন পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। ৮টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অবস্থানগত ভিন্নতা থাকলেও এগুলোর আয়তন ও ব্যয় প্রাক্কলন একই হওয়ার যৌক্তিকতা পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। কতটি কম্পিউটারের জন্য কম্পিউটার সামগ্রীর প্রস্তাব করা হয়েছে এবং কম্পিউটার সামগ্রীর পরিমাণ/সংখ্যা ডিপিপিতে উল্লেখসহ বিস্তারিত বিষয়ণী পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে। এ ছাড়া, রাজস্ব খাতে অন্যান্য যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি অঙ্গের ব্যয় যৌক্তিক পর্যায়ে কমাতে হবে।