নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ |

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ (টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া) আসন থেকে অষ্টম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মাহবুবুল আলম গত রোববার রাতে এ ঘোষণা দেন। শেখ হাসিনা পেয়েছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬৫ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এম নিজাম উদ্দিন লস্কর পেয়েছেন ৪৬৯ ভোট।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে এ আসনে থেকে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়া আসনে নির্বাচন করে শেখ হাসিনা এর আগে সাতবার সংসদ সদস্য নিরর্বাচিত হন। ব্যক্তি শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয় লাভ করে। এ  নির্বাচনে ২২৩ আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে এ নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে দলটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ক্ষমতায় আসার পর পরবর্তী ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় নির্বাচনেও তার দল সরকার গঠন করে। এরপর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দেও তার দল জয়ী হয়। এবার ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হবেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সরকার টানা ১৫ বছরের ক্ষমতার মেয়াদে বাংলাদেশ বিভিন্ন রকমের কূটকৌশল প্রত্যক্ষ করেছে। এই সময়ে দেশের বিনিয়োগ, রপ্তানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর অংশগ্রহণসহ বিভিন্ন খাতে অনেক মাইলফলক অর্জন করেছে। এর আগে দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় দেশের জনগণের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করায় দেশের মানুষ পুনরায় ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ভোট দিয়ে জয়ী করবে বলে আশা ব্যক্ত করেন দলটির একাধিক নেতা। দেশ ও দেশের বাহিরে আওয়ামী লীগ সরকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থাকলেও সকল বাধা মোকাবিলা করে এবারের নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আশা ব্যক্ত করেন দলের প্রধান শেখ হাসিনা ।

শেখ হাসিনা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড়। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই শেখ হাসিনা গণআন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের জন্য এক কালো অধ্যায়। এই রাতে বিপথগামী সেনাবাহিনীর একটি দল শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা করে। 

ঘটনার আগে থেকেই শেখ হাসিনা এবং তার ছোটবোন শেখ রেহানা পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় বেঁচে যান। পরে তিনি ভরতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে ছয় বছর থাকেন। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে থেকে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। 

শেখ হাসিনা সরকার ১৯৯৬ থেকে ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে যে যে বিষয়ে সাফল্য লাভ করেছেন তা হলো- প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে ত্রিশ বছরের জন্য গঙ্গা নদীর পানি চুক্তি। পার্বত্য শান্তি চুক্তি, বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ ও দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। চাষীদের সেবামূলক কার্যক্রম ও ভূমিহীন, দুস্থদের সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি চালু করে।

এ ছাড়া ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে থেকে ২০১৩ পর্যন্ত শাসনামলে আওয়ামী লীগের অর্জনের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা ১৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াটে উন্নীতকরণ, গড়ে ৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন, ৫ কোটি মানুষকে মধ্যবিত্তে উন্নীতকরণ, ভারত-মিয়ানমারের সঙ্গে সামুদ্রিক জলসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি, শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেয়া, কৃষকদের কৃষিকার্ড, দশ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, বিনা জামানতে চাষীদের ঋণ প্রদান, চিকিৎসাসেবায় দেশেজুড়ে সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন, দারিদ্র্যের হার ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩৮ দশমিক ৪ থেকে ২০১৩ ও ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে হ্রাস, জাতিসংঘ কর্তৃক শেখ হাসিনার শান্তির মডেল গ্রহণ।

অন্যদিকে, বিএনপির সময় জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় পাকা সহাসড়ক ছিলো ১২ হাজার ১৮ কিলোমিটার আর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে তা ৩২ হাজার ৬৭৮ কিলোমিটার (প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি) হয়। বিএনপির সময় গ্রামীণ সড়ক ছিলো ৩ হাজার ১৩৩ কিলোমিটার আর এখন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৪৬ কিলোমিটার (৭৬ গুণ বৃদ্ধি)। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে মোট রেল যোগাযোগ ছিলো ২ হাজার ৩৫৬ কিলোমিটার আর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ৩ হাজার ৪৮৬ কিলোমিটার (দেড় গুণ বৃদ্ধি) হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে ছিলো ১১টি বিমান, আর এখন ২১টি বিমান (২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় সকল বিমান ছিলো অতি পুরাতন ও জরাজীর্ণ। বর্তমানে সেগুলো অত্যাধুনিক বিমান দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপির সামাজিক সুরক্ষা সেবার আওতাভুক্ত মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ছিলো ২১ লাখ জন ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে আওয়ামী লীগের অর্জন ১০ কোটি ৬১ লাখ ১৪ হাজার জন (৫০ গুণ বৃদ্ধি)। বিএনপির সময় খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানমূলক কার্যক্রমের উপকারভোগী ছিলো ৪ লাখ ৩০ হাজার আর বর্তমানে তা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৬ জন (১০০ গুণ বৃদ্ধি) হয়েছে। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি জোটের সময় ছিলো উপবৃত্তি কার্যক্রমের সুবিধাভোগী শূন্যের কোটায় এখন তা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ৭৫৬ শিক্ষার্থীতে। একইভাবে বিএনপির সময় বয়স্ক ভাতাপ্রাপ্ত উপকারভোগী ছিলো ১৫ লাখ  ২০২৩-এ এখন তা ৫৮ লাখ (৪ গুণ বৃদ্ধি)। বিএনপি জোটের সময় প্রতিবন্ধী ভাতা পেতেন ৯৭ হাজার জন এখন তা ২৯ লাখ ১০ হাজার (৩০ গুণ বৃদ্ধি) এবং  ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতার উপকারভোগী ছিলো ৫ লাখ ২০ হাজার এখন সেটা ২৬ লাখ জন (৫ গুণ বৃদ্ধি)।  

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দের ৭ম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে ৯ম, ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে ১০ম ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হন শেখ হাসিনা। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের পর টানা ৩য় এবং ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে টানা চতুর্থ বারের মতো তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের হয়ে লড়াই করেন ১৫৩৪ জন প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন ৪৩৬ জন। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুবরণ করায় ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করেছে ইসি। 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে শেখ হাসিনার বিকল্প এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশ যেমন সমার্থক হিসেবে ব্যবহৃত হয় ঠিক তেমনিভাবে শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের উন্নয়নের আরেক নাম হয়ে উঠেছেন। ফলে, তিনি বাংলাদেশের রাজনীতি এবং উন্নয়ন ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ। সাফল্য এসেছে নানা দিক থেকে। জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা ৪র্থ বারের মতো সরকার গঠন করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবেন। আগামীর প্রযুক্তি বিপ্লবে নেতৃত্বের আসনেই থাকবে বাংলাদেশ। অন্যদিকে, মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা মারাত্মক অন্যায়। মিথ্যা কথা বলে তথ্য প্রকাশ করা ইসলামে নিষেধ।  একটি তথ্য উপস্থাপন করতে হলে অবশ্যই সুন্দর, সাবলীল, যুগোপযোগী মিষ্টি ভাষায় উপস্থাপন করতে হবে। বাংলাদেশ আজ সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। এখন যে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন তাও শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই সম্ভব। তবে বঙ্গবন্ধু কন্যার এই অভিযাত্রায় যুক্ত হতে হবে দেশের সকল পেশা ও শ্রেণির মানুষকে। স্ব স্ব অবস্থান থেকে নৈতিকতার সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব।

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘বারাসাত ব্যারিকেড’ ঘোষণা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না - dainik shiksha রাতারাতি সরকারি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা সম্ভব না মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী - dainik shiksha মনোনীত হয়েও বৃত্তি থেকে বঞ্চিত রাবির ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই নির্ভুল করা হচ্ছে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর - dainik shiksha আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বেরোবির সাবেক প্রক্টর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি - dainik shiksha মাদরাসা-ই-আলিয়ার ভবনে অস্থায়ী আদালত বন্ধের দাবি কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি নিয়ে নতুন নির্দেশনা বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল - dainik shiksha বিচারকের সামনে যে হুমকি দিলেন কামরুল please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002622127532959