নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হচ্ছে। আগামী শুক্রবার সারাদেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের ২ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ শুরু হবে। প্রশিক্ষণ হবে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার। ৬, ৭, ১৩, ১৪ ও ২০ জানুয়ারি প্রশিক্ষণ পাবেন শিক্ষকরা। তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন সদ্য প্রশিক্ষণ পাওয়া মাস্টার ট্রেইনাররা। প্রতিদিনের প্রশিক্ষণের জন্য ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেয়া হবে শিক্ষকদের। আর দূর থেকে প্রশিক্ষণ নিতে আসা শিক্ষকরা ২৫০ টাকা করে যাতায়াত ভাড়া পাবেন।
শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা। এ প্রশিক্ষণ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ নিয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, সব শিক্ষককে আমরা প্রশিক্ষণের আওতায় আনবো। তবে আপাতত ২ লাখ ৮০ হাজার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুক্র ও শনিবার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলবে। জেলা ও উপজেলায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
যে পাঁচদিন প্রশিক্ষণ :
অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ উইংয়ের উপপরিচালক ড. মোনালিসা খান গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, মোট পাঁচদিন শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পাবেন। এই পাঁচ দিন হলো- ৬ জানুয়ারি (শুক্রবার), ৭ জানুয়ারি (শনিবার), ১৩ জানুয়ারি (শুক্রবার), ১৪ জানুয়ারি (শনিবার) এবং ২০ জানুয়ারি (শুক্রবার)। আমরা মাঠ পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা পাঠাচ্ছি।
সম্মানী ও যাতায়াত ভাড়া পাবেন শিক্ষকরা :
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন সদ্য প্রশিক্ষণ পাওয়া মাস্টার ট্রেইনাররা। প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের জন্য সম্মানীর ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার ভট্টাচার্য্য দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, শিক্ষকদের প্রতিদিনের প্রশিক্ষণে ৫০০ টাকা করে সম্মানী দেয়া হবে। আর দূর থেকে আসা শিক্ষকরা ২৫০ টাকা করে যাতায়াত ভাড়া পাবেন।
প্রশিক্ষণের ভাতা নিয়ে জানতে চাইলে একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণে আসা শিক্ষকরা যাতায়াত ভাতা পাবেন। তবে, যেসব শিক্ষক নিজ নিজ উপজেলায় প্রশিক্ষণ নেবেন তাদের হয়তো ভাড়া দেয়া হবে না।
প্রস্তুতি চলছে জেলা-উপজেলায় :
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষক প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি চলছে জেলা ও উপজেলাগুলোতে। জানতে চাইলে মঙ্গলবার বিকেলে নরসিংদীর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গৌতম চন্দ্র মিত্র দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি। কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আমরা তা কাটিয়ে উঠেছি। আশা করছি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে নেয়া যাবে। তবে, প্রশিক্ষণ টানা হলে ভালো হতো।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জীবন ভট্টাচার্য্য মঙ্গলবার দুপুরে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, আমরা প্রশিক্ষণ চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা স্যাররা সার্বিক নির্দেশনা দিচ্ছেন। আশা করছি সুষ্ঠুভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে পারবো। তবে, প্রশিক্ষণ পরিচালনার বাজেট বা বরাদ্দ কি হবে সে বিষয়ে আমরা সুস্পষ্টভাবে এখনো জানিনা।
প্রশিক্ষণ মনিটরিংয়ে শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা :
নতুন শিক্ষাক্রম প্রশিক্ষণ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের। ইতোমধ্যে মৌখিকভাবে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব বণ্টন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি হতে পারে। জানতে চাইলে অধিদপ্তরে একজন সহকারী পরিচালক বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পেয়েছি। এ বিষয়ে আদেশ জারি হতে বৃহস্পতিবার হতে পারে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে মাস্টার ট্রেইনাররা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেন কিনা তা যাচাই করে দেখবো।
কৌশলগত কারণে ছুটির দিনে প্রশিক্ষণ :
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, কৌশলগত কারণে ছুটির দিনে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হবে। এতে শিক্ষকরা ছুটির দুই দিন প্রশিক্ষণ নিয়ে পরে ক্লাস নেবেন। ক্লাসে তারা কি প্রতিবন্ধকতা অনুভব করবেন সেগুলোর বিষয়ে পরের ট্রেইনিংয় মাস্টার ট্রেইনারদের জানাবেন। মাস্টার ট্রেইনাররা সেগুলো কিভাবে কাটিয়ে ওঠা যায় সে বিষয়ে শিক্ষকদের বুঝিয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। আর ছুটির দিনে প্রশিক্ষণ হওয়ায় শ্রেণি কার্যক্রম বিঘ্নিত হবে না।
প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎসাহী মাস্টার ট্রেইনার-শিক্ষকরা :
নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ নিয়ে আগ্রহী প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষক ও মাস্টার ট্রেইনাররা। নওগাঁ জেলার মাস্টার ট্রেইনার অহিদুল ইসলাম দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, একজন প্রশিক্ষক হিসেবে শিক্ষকদের নতুন কারিকুলাম বিষয়ে পুরোপুরি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো এবং প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা যেনো তাদের নিজ নিজ বিদ্যালয়ে গিয়ে সে মত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করা ও শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে পাঠদানের জন্য উদ্বুদ্ধ করবো। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বলবো।
তবে, প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকরা এ প্রশিক্ষণ নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশার মধ্যে আছেন। সব প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের তালিকা এসে পৌঁছায়নি। তবে, নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎসাহী শিক্ষকরা। জানতে চাইলে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার হামিদপুর হামিদিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো. রাসেল দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের প্রশিক্ষণ নিয়ে উৎসাহী অবশ্যই, তবে প্রতিষ্ঠানে এখনো সব শিক্ষকের তালিকা আসেনি। তাই ধোঁয়াশা আছি প্রশিক্ষণ করা নেবেন। নতুন শিক্ষাক্রম সফল করতে হলে শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। আমরা অধীর আগ্রহে প্রশিক্ষণের অপেক্ষায় আছি।