নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কোচিং মালিক ও কিছু শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। নোটগাইড ব্যবসায়ী ও কোচিং বাণিজ‌্যে জড়িত কিছু শিক্ষক এর সঙ্গে জড়িত বলেও জানিয়েছেন তিনি। তাদের বাণিজ‌্য বন্ধ হবে এমন আশঙ্কায় তারা ইচ্ছ্কৃতভাবে এটা করছেন বলে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন।

রোববার জাতীয় সংসদে ঠাকুরগাও বিশ্ববিদ‌্যালয় বিলটির সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিলের সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর বক্তব‌্যকালে নতুন শিক্ষা ব‌্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করেন বিরোধী দলের সদস্যরা।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি রাখা হয়নি বিষয়টি একেবারেই সত‌্য নয়। আগে কেবল অর্ধবার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা হতো বরং এখন ধারাবাহিক মূল‌্যায়ন হয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থী কী শিখছে? সে কেমন করে শিখছে। সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে কী না তার সবকিছুর্ মূল‌্যায়ন হয়। সেই মুল‌্যায়ন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে,  এজন‌্য অ‌্যাপস তৈরি  করা হয়েছে। এর মাধ‌্যমে শিক্ষকরা একটি সহজে করতে পারবেন। এখন ম‌্যানুয়ালি করতে হচ্ছে বলে একটু সমস‌্যা হচ্ছে।

নতুন যেকোন কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে তো অনেক রকম রেজিস্টেন্স থাকে যার তা কারণে কিছুটা সমস‌্যা হচ্ছে মন্তব‌্য করে মন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ বলছেন গুটি কয়েক অ‌্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক. গুগল থেকে দিচ্ছে। কেবল বই নয় এখন নানারকম সোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা তথ‌্য নেবে। সেগুলো নিয়ে গ্রুপ ওয়ার্ক করতে এবং উপস্থাপন করবে।

নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কারণ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বমানের যে শিক্ষা ব‌্যবস্থার কথা বলা হয় সেখানে তফাৎটা কোথায়- এটা নিয়ে বার বার আলাপ হয়েছে। সফট স্কিলের জায়গায় আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। আমরা কমিউনিকেট করতে পারছি না। আমাদের সুক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা। আমাদের সমস‌্যা নিরূপণ ও সমাধানের দক্ষতা। আমাদের কোলাবরেশনের দক্ষতা। আমরা দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা-এখন এই কাজটি একবারে শৈশব কৈশর থেকে রপ্ত করবে। সেটা না করলে একেবারে বিশ্ববিদ‌্যালয়ে গিয়ে সেগুলোকে ক‌্যাপসুল আকালে গিলিয়ে খাওয়াতে দিলে সম্ভব হয় না। এরজন‌্য নতুন শিক্ষাক্রমে এই বিষয়গুলো শেখানো হচ্ছে।

শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডিমভাজি ও আলুভাজি করে আনার অভিযোগের ব‌্যাখ‌্যা দিয়ে দীপু মনি বলেন, ডিমবাজি আলুভর্তার কথা প্রায়শই বলা হচ্ছে। এটি একেবারেই অপপ্রচার। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১২১টি অধ‌্যায় আছে। এর মধ‌্যে জীবন-জীবিকার একটি অধ‌্যায় হচ্ছে রান্না। সেই রান্নাটি কেনো? আমাদের শিক্ষার্থী দেখে বাড়িতে মা কিংবা অন‌্য কোনো একজন রান্না করে। সেই বিষয়টি যে জরুরি, সে তা শেখে না। একজন মানুষ যখন রান্না করবে সে রান্নার বিষয়টি চিন্তা করবে।  একটি ১২১টি অধ‌্যায়ের মাত্র একটি এবং সারা বছরে একদিন মাত্র বিদ‌্যালয়ে পিকনিক করে রান্নাটা দেখবে। এটা বাড়িতে নয়, যেটা বাড়িতে দেয়া হচ্ছে সেটা শিক্ষকের না বোঝার ফল। সেজন‌্য শিক্ষকদের বার বার প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

শিক্ষাক্রম নিয়ে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন মন্তব‌্য করে মন্ত্রী আরো বলেন, যারা কোচিংয়ে ব‌্যস্ত থাকেন। কোচিং ব‌্যবসারয়ীরা এটাকে বিকৃত করার জন‌্য তারা কিছুটা এটা করেছেন। শহরের কিছু বিদ‌্যালয় এটা করছেন। তাদেরকে কড়া নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে পিকনিক করে রান্না শিখবে। এই রান্নার মধ‌্যে খাদ‌্য পুষ্টি.. এই রান্না করাটাও যে একটা আর্ট। এর মধ‌্যে একটি পরিমিতিবোধ থাকতে হয়। অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তার সবকিছুই শিখবে।  আমরা কী পিকনিক করিনি? কাজেই এটা একটা অপপ্রচার করা হচ্ছে। বাড়ি থেকে রান্না করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কোন নির্দেশনা নেই। যারা করছেন তারা এটা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন‌্য করছে।

তিনি বলেন, আর্টপেপার কিনতে হবে.. ব‌্যয়বহুল এটাও না বোঝার ফল। মোটেই আর্টপেপার কিনবার কথা নয়। বাড়ির পুরনো খবরের কাগজ, ক্যালেন্ডার ইত‌্যাদি ব‌্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এটাও কিছু শিক্ষকেরা ইচ্ছাকৃতভাবে করাচ্ছেন। আর মোরগ পালন মোটেই করতে হবে না। এখানেও একটি বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের পেছনে কতিপয় শিক্ষকদের জড়িত থাকার অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা কয়েক জায়গায় মানববন্ধন দেখেছি। আমরা তদন্ত করেছি। সেখানকার স্কুলগুলো জানিয়েছে এই অভিভাবকেরা তাদের অভিভাবক নন। অনেকে কোন অভিভাবকও নয়।  এটা হলো মুলত কোচিং ব‌্যবসায়ী ও নোট গাইড ব‌্যবসায়ী। তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছে তাদের ব‌্যবসা হয়তো উঠে যাবে। হাতেকলমে লিখে লিখে পরীক্ষা রাখার অর্থই হচ্ছে আমরা কোচিং ব‌্যবসাটা চালু রাখতে চাই।

নতুন শিক্ষাক্রমে ইতোমধ‌্যে ফল পাওয়া শুরু হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, আমাদের যেটা দরকার শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা সেই দক্ষতাটা পাচ্ছি।  তারা কিন্তু অনেক কিছু লিখছে। এখন একটা কিছু লিখতে দেন লিখে দিতে পারে। বলতে দেন বলতে পারে। বানিয়ে দিতে বলেন বানিয়ে দিতে পারে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0062658786773682