উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে ফুলে ফেঁপে উঠছে পদ্মা। এতে করে গোদাগাড়ীতে পদ্মা ও মহানন্দা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। গোদাগাড়ী পৌর এলাকার সুলতানগঞ্জ ও গাঙ্গোবাড়ী হাটপাড়া, সারাংপুর এলাকায় নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে ভাঙছে নদীর পাড়। আর তীব্র ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। এসব এলাকায় শত শত বাড়িঘর, হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি, কয়েক লাখ ফলদ ও বনজ গাছসহ মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভাঙনকবলিত এলাকার লোকজন জানান, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ভাঙন থেকে গোদাগাড়ীকে রক্ষা করতে উপজেলার রাজাবাড়ী হাট থেকে বালিয়াঘাট্টা পর্যন্ত নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের জন্য ১৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে সরকার। নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে ৮০ কোটি টাকা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে ফেরত চলে যায়। নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের নিচের ব্লক ও ইট সরে যাওয়ায় বাঁধের ওপর ফাটল দেখা দেয়। বাঁধের অনেক অংশে ব্লক ও ইটপাথর ভেঙে গত কয়েক বছর ধরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে সুলতানগঞ্জ, সারাংপুর ও হাটপাড়া, এলাকায় প্রতিবছর নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিচ্ছে। নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ সংস্কার ও নতুন করে হাটপাড়া, সারাংপুর, গাঙ্গোবাড়ী, সুলতানগঞ্জ এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য ৮০ কোটি টাকা ফেরত আনার দাবি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ।
গোদাগাড়ী নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শান্ত কুমার মজুমদার বলেন, ফেরত যাওয়া ৮০ কোটি টাকা দিয়েই এসব এলাকায় নতুন করে বাঁধ নির্মাণ ও বাঁধের সংস্কার করা গেলে নদীর তীরে ভাঙন দেখা দিতো না। জরুরিভিত্তিতে বাঁধ নির্মাণ না করা হলে চলতি বর্ষা মৌসুমেই গোদাগাড়ী পৌরসভার চারটি এলাকার শত শত বাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দিরসহ মূল্যবান গাছ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সুলতানগঞ্জ কাচারীপাড়ার বাসিন্দা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুফিয়া খাতুন মিলি বলেন, গত পাঁচ বছর ধরে এই গ্রাম তিনটিতে মানুষ নদী ভাঙন প্রতিরোধের জন্য নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের দাবি জানিয়ে আসছে। গতবছর বর্ষা মৌসুমে ভাঙন বেশি দেখা দেয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের লোকজন পরিদর্শনে এসে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু আজও নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। সুলতানগঞ্জ, কাচারীপাড়া সারাংপুর নতুনপাড়ায় জরুরিভিত্তিতে নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা না হলে এই তিনটি গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, আপাতত আমাদের কাছে কোনো ধরনের বরাদ্দ নেই। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সরকারের কাছ থেকে বিশেষ বরাদ্দ ছাড় করতে পারলেই জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।