করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অফিস-আদালত বন্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় সবচেয়ে বিপাকে পড়াদের মধ্যে নন-এমপিও শিক্ষকরা। কেউ কেউ প্রতিষ্ঠান থেকে নামমাত্র সম্মানী পান। আবার কেউ কিছুই পান না। তারা মূলত টিউশনি, বই লেখা, ব্যাচ পড়ানো ইত্যাদি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চলমান লকডাউনে আয়ের সেসব রাস্তা বন্ধ হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। এ নিয়ে দৈনিক শিক্ষা ডটকম একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও ফেসবুক লাইভ করেছে। অবশেষে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ননএমপিও শিক্ষকদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে, এখনও ঠিক হয়নি সহায়তা হিসেবে নগদ টাকা না অন্য কিছু দেয়া হবে। টাকার পরিমাণ বা কতজনকে দেয়া হবে তা-ও ঠিক হয়নি। এদিকে, নির্ভুল একটি তালিকা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আজ ২৪ মে থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ২৮ মের মধ্যে তালিকা পাঠাতে মাঠ পর্যায়ে বলা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের একাধিক সূত্র দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিষয়টি জোরালোবাবে চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
তালিকার তৈরির জন্য, ইআইআইএনভুক্ত (শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি নম্বর) সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীদের তালিকা হালানাগাদ করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সব জেলা প্রশাসকের কাছে জরুরীভিত্তিতে নন-এমপিও শিক্ষকদের হালনাগাদ তালিকা চাওয়া হয়েছে। সাথে ব্যানবেইসের সর্বশেষ শিক্ষাজরিপের একটা খসড়া তালিকা দেয়া হয়েছে। আগামী ২৮ মের মধ্যে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের তালিকা যাচাই করে ইমেইলে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে জেলা প্রশাসকদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও দেয়া হয়েছে। চিঠির সাথে ছক দেয়া হয়েছে। ছকে বিকাশসহ অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর (যার যেটা আছে) চাওয়া হয়েছে। একাউন্ট নম্বরে ব্যবহার করা নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সাথে মিল থাকতে হবে।
জানা গেছে, চিঠির সাথে নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক কর্মচারীদের একটি তালিকাও ডিসিদের পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তালিকা যাচাই করে ইমেইলে পাঠাতে হবে ডিসিদের।
এই চিঠি পাওয়ার পর দেশের সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে এসএমএস করেছেন অথবা ফোনে বলেছেন মেইল চেক করতে। ছক অনুযায়ী তালিকা হালনাগাদ ও যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
জানা যায়, যাদের নাম ব্যানবেেইসের সর্বশেষ জরিপে ২০১৯-এ (এখনও অপ্রকাশিত) ছিলো তাদের একটা হিসাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তালিকায়, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী, সহকারি গ্রন্থাগারিক, খণ্ডকালীন, ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী, ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষকসহ সব ধরণের শিক্ষকের নাম রয়েছে। মানে যারা ব্যানবেইসের ইআইআইএনভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে কোনও পদে কর্মরত এবং তালিকাভুক্ত এবং এমপিওর সুবিধা পান না তারাই এই নতুন তালিকায় স্থান পাবেন। এক অর্থে তালিকাটি হালনাগাদ হচ্ছে এবং সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বিকাশ, রকেট, নগদের একাউন্ট থাকলে সেটা। আর কঠোরভাবে দেখা হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্রের নামের সাথে তালিকা ও বিকাশের নামের মিল রয়েছে কিনা।
২৩ মে অতিরিক্ত সচিব মো মমিনুর রশিদ আমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাহীন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা, শিক্ষক কর্মচারীদের তথ্যাদি ব্যানবেইসের জাতীয় শিক্ষা জরিপ ২০১৯ হালনাগাদকরণের জন্য জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা শিক্ষকদের নাম ও একটি নির্ধারিত ছক পাঠানো হলো। তালিকায় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের নাম স্থানীয় প্রশাসনের তত্বাবধায়নে এবং জেলা শিক্ষা অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে যাচাই করে সংযুক্ত ছক মোতাবেক আগামী ২৮ মের মধ্যে এক্সেল ফাইল ও পিডিএফ ফাইল করে ইমেইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসকদের। শিক্ষক কর্মচারীদের নামের বানান এর আইডি কার্ডের অনুরূপ হতে হবে এবং মোবাইল নাম্বার এর আইডি কার্ডের সাথে মিল থাকতে হবে বলেও জানানো হয়েছে চিঠিতে।