নবপ্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমির পরিমাণ নির্ধারণ করবে সরকার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন অনুমোদিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ইচ্ছেমত ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব পাওয়া গেছে। নবনিযুক্ত উপাচার্যদের কেউ কেউ প্রয়োজনের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভূমির প্রস্তাব করছেন। এজন্য এখন থেকে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ক্যাস্পাসের জন্য ভূমির পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করে দেবে।

এক্ষেত্রে দেশের শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশে^র উন্নত দেশগুলোর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘মডেল’ অনুসরণ করা হতে পারে বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন রাকিব উদ্দিন। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় ক্যাম্পাসের ভূমির পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবের কাছে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে ইউজিসি। সংস্থাটির এই অনুরোধ ভালোভাবেই আমলে নিয়েছে মন্ত্রণালয়। শীঘ্রই এই বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের এক সভা আহ্বানের প্রস্তুতি নিচ্ছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।

সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং ৮ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। এতে দেখা গেছে, কোন বিশ্ববিদ্যালয় ৫০০ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, অথচ শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়নি। আবার কোনটি মাত্র ৩৫ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

এই বৈষম্য নিরসনের পাশাপাশি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা লাভ করবে সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠায় ভূমির পরিমাণ নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রথমে ‘বিশ্ববিদ্যালয় আইন’ পাস করতে হয়। এখন পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে সেগুলোর প্রতিটির আইনেই প্রস্তাবিত এলাকার নাম রয়েছে। আইন পাসের পর রাষ্ট্রপতি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করেন। এরপর নবনিয়োগ পাওয়া উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য সম্ভাব্য ভূমির পরিমাণসহ যাবতীয় বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে ইউজিসিতে জমা দেন।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ‘নবপ্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ক্যাম্পাসের জন্য ভূমির পরিমাণ নির্ধারণ’ শীর্ষক চিঠিতে ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড. ফেরদৌস জামান বলেছেন, ‘নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের  ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব আসছে। কিন্তু নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ভূমির পরিমাণ নির্ধারণের বিষয়ে সরকারের কোন গাইডলাইন কিংবা নির্দেশনা কিংবা অনুশাসন না থাকায় বিক্ষিপ্তভাবে জমি বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে পরিমাণ ভূমি বরাদ্দ চাওয়া হয় তা প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয় না।’

ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতি জেলায় একটি করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। সেভাবেই সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ভূমির পরিমাণ তো এক লাখ ৫৬ হাজার বর্গকিলোমিটারই আছে। এই সীমিত ভূমির মধ্যেই সব জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় করতে হচ্ছে।’

উপাচার্যরা ইচ্ছেমত ভূমি চাচ্ছেন জানিয়ে ইউজিসি সচিব আরও বলেন, ‘কোন ইউনিভার্সিটি ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য) দুই হাজার একর জমি চেয়ে বসছেন, আবার কেউ চাচ্ছেন ২০ একর ভূমি, কোন ভাইস চ্যান্সেলর বলছেন, ৩০ একর ভূমি হলেই চলবে। এজন্য আমরা বলছি যে, চারটি ক্যাটাগরি করে দেয়া হোক- এর মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড সায়েন্সের জন্য এক ধরনের, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জন্য এক ধরনের, জেনারেল এক ধরনের এবং মেডিকেল ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ধরনের। কারণ মেডিকেল ও কৃষির জন্য জমি একটু বেশি লাগে।’

ইউজিসির এই অনুরোধে সায় দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রীর বরাত দিয়ে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘জেলা পর্যায়ের সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের  জন্য ৫০ একর ভূমিই যথেষ্ঠ। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ভূমির পরিমাণ বেশি হতে পারে। তাছাড়া জেলা পর্যায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনেও সরকারি স্থাপনার প্রয়োজন হয়। এতো জমি কোথাও পাবে সরকার?’

ইউজিসি সূত্র জানিয়েছে, খুলনা জেলায় বর্তমানে চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এছাড়াও খুলনায় তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে।

আবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়েছে ৩৫ একর ভূমিতে; সেখানে তিন হাজার সাত শতাধিক শিক্ষার্থী শেখাপড়া করছে। শিক্ষার্থী ও শিক্ষককর্মীদের আবাসনেরও ব্যবস্থা রয়েছে। নেত্রকোনায় ২০১৮ সালে ‘শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ৫০০ একর ভূমিতে। সেখানে বর্তমানে শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে দুইশ’। তবে চট্টগ্রামে ভেটেরেনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের  মূল ক্যাস্পাসটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে মাত্র সাত একর ভূমিতে।

কুয়েট ও খুলনা- এই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ৫০ একর ভূমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সাত হাজার এবং কুয়েটে সাড়ে তিন হাজারেরও কম শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে।

‘খুলনার মতো একটি ছোট’ জেলায় চারটি পাবলিক ও তিনটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও নতুন একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের  জন্য উপাচার্য দুই হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ইউজিসিতে পাঠিয়েছেন বলে জানান ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান।

ইউজিসি’র তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীভুক্ত দুই হাজার ২৬০টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় - dainik shiksha অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে সাতক্ষীরায় শিক্ষকের মৃত্যু হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ - dainik shiksha চাকরিতে আবেদনের বয়স ৩৫ করতে শিক্ষামন্ত্রীর সুপারিশ শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026230812072754