নয়ন বন্ডকে ১২ লাখ টাকা কে দিয়েছিল?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন গ্রহণ করেছেন বরগুনা জেলা দায়রা ও জজ আদালত। গতকাল বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের এজলাসে জামিন আবেদনের শুনানি হয়। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি তলব করেন এবং আদেশ দেয়ার জন্য ৩০শে জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেন।

গতকাল সকালে বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিনের আবেদন করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে শুনানির তারিখ ধার্য করেন। রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে মিন্নি এখন কারাগারে আছেন। বুধবার (২৪ জুলাই) মানবজমিন পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এ তথ্র জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  মো. মিজানুর রহমান।

সমপ্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলে হত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়। ১৬ই জুলাই বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে মিন্নিকে ডেকে নিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এই মামলায় এ পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ১৫ জনের সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গত ২রা জুলাই এই মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনো চারজন গ্রেপ্তার হয়নি। তারা হচ্ছেন মুসা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান ও রিফাত হাওলাদার। 

এদিকে রিফাত হত্যা মামলার অভিযুক্ত হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া কামরুল আহসান সাইমুনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। সকালে আবেদনের পর দুপুরে সাইমুনের জামিন আবেদনের শুনানি হয়। শুনানি শেষে আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইয়াসিন আরাফাত সাইমুনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাইমুনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের।

নয়ন ও মিন্নির সম্পর্ক প্রমাণে ২০ আলামত জব্দ করেছে পুলিশ!

বন্দুকযুদ্ধে নিহত নয়নের বাড়ি থেকে অন্তত ২০ ধরনের আলামত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আছে নয়নের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের বেশকিছু ছবি, মিন্নির ব্যবহৃত লিপস্টিক, চিরুনি, চিরুনিতে আটকে থাকা মিন্নির চুল, কামিজ, চুলের ক্লিপ, ফেসপাউডার, চোখের ভ্রুতে ব্যবহৃত আই ব্রো, সিমকার্ড এবং কয়েকটি মোবাইল ফোনসেট।
নয়নের বাড়ি থেকে আলামত সংগ্রহের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা বেশকিছু আলামত নয়নের বাড়ি থেকে সংগ্রহ করেছি।

বরগুনা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, নয়নের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠতা ও বিয়ে প্রমাণ করতেই এসব আলামত জব্দ করা হয়েছে। নয়নের বাড়ির চিরুনিতে আটকে থাকা মিন্নির চুল ও তার ব্যবহৃত কয়েকটি জিনিস ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য সিআইডির ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা আরো বলেন, মিন্নি যেহেতু বারবারই নয়নের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছেন তাই কিছু অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন। রিফাতের সঙ্গে বিয়ের পরও নয়নের সঙ্গে মিন্নির ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করা গেলে রিফাত হত্যার জট অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে যাবে। অকাট্য প্রমাণ হাতে এলে তখন প্রমাণ করা সহজ হবে ঘটনার পর নিজেকে আড়াল করতেই কীভাবে মিন্নি একের পর এক মিথ্যা কথা বলে গেছেন। 

এগুলোর মধ্যে একটি কামিজ, মিন্নির লেমিনেটিং করা একটি ছবি, চুল পেঁচানো চিরুনি ও এম প্লাস, এন খোদাই করা সামুদ্রিক ঝিনুক রয়েছে। এই ঝিনুকটি মিন্নি ও নয়ন কুয়াকাটা বেড়াতে গিয়ে সংগ্রহ করেছিলেন। মামলার আলামত হিসেবে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নয়ন বন্ডকে ১২ লাখ টাকা কে দিয়েছিল, নয়নের মায়ের প্রশ্ন

রিফাত শরীফ হত্যার মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হলেও তাকে নিয়ে আলোচনা থেমে নেই। এবার তার মা দাবি করেছেন তার ছেলেকে একটি প্রভাবশালী মহল ষড়যন্ত্র করে মেরে ফেলেছে। তিনি বলেন, কে হ্যারে বন্ড বানাইলো, জিরো জিরো সেভেন বানাইলো, তোমরা খুঁইজা বের করো। বরগুনা শহরের ডিকেপি রোড এলাকায় নিহত সাব্বির আহমেদ নয়নের (নয়ন বন্ড) বাড়িতে বসে এসব কথা বলেন তিনি।

নয়নের মা অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে দোষী, এটা আমি জানি। কিন্তু সে তো একদিনে নয়ন বন্ড তৈরি হয়নি। তাকে তৈরি করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহল তাকে ব্যবহার করার জন্য নয়ন বন্ড হিসেবে তৈরি করেছে। কোন প্রভাবশালী মহল জানতে চাইলে শাহিদা বেগম বলেন, তা ঠিক বলতে পারবো না। তবে আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কারণ, তার মুখ থেকে যদি প্রভাবশালী মহলের সব অপকর্মের ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়, সেই জন্যই।

তিনি বলেন, আমি টিভির হেড লাইনে পাথরঘাটা বইসা দেখছি, কেউ একজন কইছে আমার ছেলে সীমান্তের কাছে আছে। সেই ছেলে তিন দিন পর কুয়াকাটা এসে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যায় কীভাবে? তার সারা শরীরে আঘাতের চিহ্ন। তার হাতের নক ও কান নাই। ওরা আমার বাবারে (নয়ন) মাইরা হালাইছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহিদা বেগম বলেন, আসল রহস্য আড়াল করার জন্য আমার ছেলেকে মাইরা ফ্যালা হইছে। আমার ছেলে তো খুনি ছিল না। সে মাদকসেবী ছিল। নিশ্চয়ই এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে।

তিনি আরো বলেন, নয়ন ভালো ছাত্র ছিল। কিন্তু ক্লাস টেন থেকে আস্তে আস্তে মাদকের জগতে প্রবেশ করে। আগে নয়ন বন্ড ১২ লাখ টাকাসহ ধরা পড়েছিল। সে এত টাকা কোথায় পাইলো? কে দিলো? তোমরা খুঁইজা বের করো। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025210380554199