নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই এবং শিক্ষক সহায়িকা ছাড়াই দেশজুড়ে শিক্ষকদের ৫ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। এমনকি প্রশিক্ষণের মধ্যেই নির্ধারিত একটি সফ্টওয়্যারে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের নম্বর আপলোড করার কৌশল শিক্ষকদের শেখানোর কথা ছিল; সেটি প্রথম ৩ দিন অকার্যকর থাকায় তারা সেই কৌশলও রপ্ত করতে পারেনি। অপরদিকে প্রথম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হলেও এখন পর্যন্ত প্রাথমিক স্তরের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণই পাননি। প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।
প্রসঙ্গত, কয়েক দফা পিছিয়ে গত ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ‘শিক্ষাক্রম বিস্তরণ নামের’ এই প্রশিক্ষণ চলে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত। চলতি বছর প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। এর ফলে সৃজনশীল শিক্ষার বদলে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষার যুগে প্রবেশ করেছে দেশ। সবমিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে দেশে শিক্ষায় বড় পরিবর্তন শুরু হলেও শিক্ষকরা এখনো পুরো বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে। ভাসা ভাসা ধারণা নিয়েই তারা নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমন ‘ছন্নছাড়া’ প্রশিক্ষণে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান নিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষক বোঝে উঠতে পারেননি। শিক্ষকদের না বোঝার ফলে নতুন শিক্ষাক্রমে তারা পড়াতে পারবেন না। এতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অশান্তি দেখা দেবে। এতে সংকটে পড়বে শিক্ষা। এর মধ্যে একাধিক অভিভাবক বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে তারা কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। এর আগে ২০১২ সালে সৃজনশীল শিক্ষা চালুর সময়েও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। তখন শিক্ষাক্রম চালুর ৬ মাসের মাথায় সৃজনশীল শিক্ষার নোট-গাইড বাজারে বেরিয়েছিল। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতার বিকাশ না ঘটিয়ে নোট-গাইড নির্ভর হয়ে পড়েছিলেন। এবারো অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষায় নোট-গাইড বের হওয়ার তোড়জোড় চলছে। কোচিং সেন্টার চালু হয়ে গেছে এর মধ্যে। এছাড়াও নতুন শিক্ষাবর্ষ চালুর ১৫ দিন পার হলেও শিক্ষকরা দূরে
থাক শিক্ষার্থীরাই এখনো পাঠ্যবই হাতে পাননি। দেশের বিভিন্ন লাইব্রেরি এবং ফুটপাতে চলতি বছরের পাঠ্যবই বিকাচ্ছে। অথচ বিনামূল্যের এসব বই বিকিকিনি আইনত দণ্ডনীয়। সবমিলিয়ে বই সংকটের কারণে নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়েরই এখনো ঠিকঠাক ধারণা জন্ম নেয়নি।
এরকম পরিস্থিতিতে মাত্র ৫ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা নতুন শিক্ষাক্রম সম্পর্কে কী জেনেছেন- সেটা বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। তবু শিক্ষকরা প্রশিক্ষণকালে ফেসবুকে দেদারসে ছবি প্রচার করে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। তারা এটাকে শিক্ষকদের ‘মিলনমেলা’ নামেও অভিহিত করেছেন। এদিকে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে পাঠ্যবইয়ে ভুলের একটি সংশোধনী দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ের একটি অংশ গুগল থেকে চুরি করে লেখার দায় স্বীকার করেছেন পাঠ্য বইটির সম্পাদনার দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ গতকাল বলেন, দেশের দুয়েকটি জায়গায় হয়ত প্রশিক্ষণের সময় পাঠ্যবই পৌঁছেনি। তবু শিক্ষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে সেই প্রশিক্ষণের কাজ শেষ হয়েছে। ফেসবুকে ছবি দিয়েছেন। শিক্ষকদের এমন উল্লাসে মনে হয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের যে চ্যালেঞ্জ তা শিক্ষকরা জয় করেছেন। প্রশিক্ষণের সময় শিক্ষকদের বই না পাওয়ার বিষয়টি এনসিটিবির চেয়ারম্যান ভালো বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে পাঠ্যবই দেয়ার কথা নয়। তবু কেন এমনটি ঘটল অবশ্যই খোঁজ নেব। এছাড়া শিক্ষক সহায়িকা না পাওয়ার কারণ হচ্ছে ৪টি ছাপাখানায় এই বইগুলো ছাপা হওয়ার কথা। এর মধ্যে তিনটি প্রেস শিক্ষক সহায়িকা বইটি ছাপিয়ে সরবরাহ করেছে। একটি প্রেস এখনো ছাপাচ্ছে। ফলে কিছু জায়গায় সংকট হতে পারে। তবু মাস্টার ট্রেইনারদের কাছে সব উপকরণ দেয়ার পরও কেন এমন অভিযোগ এসেছে, তা অবশ্যই আমরা খুঁজে বের করব।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ধর্মশিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয় পড়বেন। নতুন শিক্ষাক্রমে শেখানোর কৌশল হচ্ছে, শিখন পরিবেশ সহায়তামূলক, একীভূত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। শিখন পরিবেশ হবে শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক, গণতান্ত্রিক ও সহযোগিতামূলক। সবমিলিয়ে নতুন শিক্ষাক্রমে পড়াশোনা হবে হাতে-কলমে। অর্থাৎ শিখনে শিশুর মধ্যে সমস্যা না খুঁজে শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো ধরনের দুর্বলতার জন্য শিক্ষার্থী শিখতে পারছে না তা চিহ্নিত করা। এই পদ্ধতির পড়াশোনায় প্রথাগত পরীক্ষা হবে না। এর বদলে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত হবে শিখনকালীন মূল্যায়ন, চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন এবং দশম শ্রেণি শেষে শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের সমন্বয়ে হবে মাধ্যমিক সমাপনী মূল্যায়ন। নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় যেসব পরিবর্তন এসেছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সপ্তাহে একদিনের পরিবর্তে দুদিনের ছুটি, দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবার জন্য ১০টি বিষয় পড়তে হবে। শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়নের সমন্বয়ে দশম শ্রেণি শেষে মাধ্যমিক সমাপনী মূল্যায়ন এবং পরীক্ষার চাপ কমানোর জন্য একাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের ভিত্তিতে একাদশ শ্রেণি শেষে এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাক্রমের শেষে উচ্চ মাধ্যমিক সমাপনী মূল্যায়ন। নতুন এই শিক্ষাব্যবস্থা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে শিক্ষকরাই প্রশ্ন তুলেছেন।
বীনা দেবনাথ নামে সিলেটের একজন কলেজ শিক্ষিকা বলেছেন, প্রতি ক্লাসে ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য নতুন এই শিক্ষাক্রম প্রযোজ্য। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় দেশের বিভিন্ন স্কুল/কলেজে প্রতি ক্লাসে এক থেকে দেড়শ শিক্ষার্থী রয়েছে। এত শিক্ষার্থীদের নিয়ে কিভাবে এই পদ্ধতি কার্যকর হবে, প্রশ্ন এই শিক্ষিকার। রাজেশ আচার্য্য নামে আরেকজন বলেছেন, শিক্ষকরা যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু দেশের মাধ্যমিক স্তরে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের সংকট তীব্র। শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে অথচ শিক্ষকসংখ্যা আগের মতোই। ঢাকার মোহাম্মদপুর কিশলয় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. রহমতউল্লাহ বলেছেন, প্রশিক্ষণকালে শিক্ষকদের যে উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা গেছে তা ধরে রাখার জন্য সন্তোষজনক বেতনভাতা দেয়া জরুরি।
বেনজির আহমেদ শাওন নামে হবিগঞ্জের একজন শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের মূল্যায়ন নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন জানিয়ে বলেন, আগের শিক্ষা পদ্ধতিতে যেসব বিষয়ে ব্যবহারিক ছিল সেসব বিষয়ে সত্যি সত্যি ব্যবহারিক পরীক্ষা না নিয়ে এমনিতেই আন্দাজ করে মূল্যায়নের নম্বর দিয়ে দেয়া হত। তেমনিভাবে নতুন শিক্ষাক্রমে কোনো বাস্তব মূল্যায়ন না করেই শিক্ষকরা নম্বর দিয়ে দিতে পারেন। প্রশিক্ষণে অনেক শিক্ষককে দেখা গেছে, সফ্টওয়্যারে ঢুকতেই পারেননি। এরকম পরিস্থিতিতে বাস্তব অভিজ্ঞতা শিখিয়ে কতজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের নম্বর দেবেন এবং অনলাইনে আপলোড করবেন? কারণ বহু বয়স্ক শিক্ষক এখনো স্মার্টফোনই ব্যবহার করতে পারেন না। তিনি বলেন, এখনো আমাদের বাচ্চাদের বই আসেনি। নিজেও বই না দেখে প্রশিক্ষণ করেছি। কি একটা ভয়াবহ অবস্থা। পংকজ রায় নামের আরেকজন বলেন, শিক্ষায় হিতে বিপরীত হওয়ার আশক্ষা রয়েছে। তার মতে, এটা ইউরোপ কিংবা আমেরিকা নয়, এটা বাংলাদেশ। সত্যেন্দ্র দেব নামের আরেকজন বলেন, খুব একটা লাভ হবে বলে বুঝতে পারছি না। তাছাড়া মূল্যায়নে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কঠিন হবে।
পাঠ্যবই ভুলের সংশোধনী দিল এনসিটিবি : নতুন শিক্ষাক্রম, পাঠ্যবইয়ের সংকট, অপর্যাপ্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণের মধ্যেই কদিন আগে শিক্ষার্থীদের হাতে যে পাঠ্যবই সরবরাহ করা হয়েছে তাতেও প্রচুর ভুল পাওয়া গেছে। গত রবিবার এনসিটিবি সেই ভুলের সংশোধনী দিয়েছে। কিন্তু সংশোধনীগুলো শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকের কাছে পৌঁছাবে কীভাবে- তা নিয়ে কোনো বার্তা নেই। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বছরের প্রথম ১৫ দিন পার হওয়ার পরও যেখানে শিক্ষার্থীরা ঠিকঠাকভাবে সব বই পায়নি সেখানে ভুলের সংশোধনী পৌঁছানো দূর-অস্ত। এনসিটিবির ওয়েবসাইটে ভুলের সংশোধনী আপলোড করে বলা হয়েছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ে ১৮১ পৃষ্ঠায় লেখা আছে ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশজুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা ও ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ এই ভুলের সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।’ একই বইয়ের ২০০ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।’ এই অংশের ভুলের সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘ওইদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন’। একই বইয়ের ২০২ পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘ সংবিধান প্রণয়ন ১৯৭১ এর পটভূমি অংশের প্রথম অনুচ্ছেদের পরে যুক্ত হবে…’। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘ওই অংশের পরে পড়তে হবে, সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছিল। সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনা ছিল। তিনি সংবিধান কমিটিকে বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন।’ ২০৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘পঞ্চম ভাগে জাতীয় সংসদ।’ সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘পঞ্চম ভাগে আইনসভা।’ নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৬ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ‘৫৪ সালের নির্বাচনে ৪টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল চারটি হলো-আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল।’ সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘৫৪ সালের নির্বাচনে ৫টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল পাঁচটি হলো- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফতে রব্বানী পার্টি।’ একই বইয়ের ১৬ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প’।
সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ও পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর।’ ২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য’। সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের বৈশিষ্ট্য।’ নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের ৫৭ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজ এর ১ ক্রমিক এর অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে…’। সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজ এর ১ ক্রমিক এর অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে, রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারের সবজ শাসন সংক্রান্ত কাজ তার নামে পরিচালিত হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত তার সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করেন। তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ( মহা হিসাবরক্ষক, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) নিয়োগের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির। প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত। তিন বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) প্রধানদের তিনিই নিয়োগ দেন।’ একই বইয়ের ৫৯ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা আছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজ-১ ক্রমিকের অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপিত হবে…’। সংশোধনীতে লেখা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজ-১ ক্রমিকের অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপিত হবে, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করেন ও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। তিনি যে কোনো মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।’
নকল করে পাঠ্যবই, দায় স্বীকার করে যা বললেন জাফর ইকবাল : নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইয়ের একটি অংশে ইন্টারনেট থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তার দায় স্বীকার করেছেন বইটির রচনা ও সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান।
গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেন, সারাদেশে ২০২৩ সালে চালু হওয়া নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান পাঠ্যপুস্তক ছাপা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটির ব্যাপারে একটি অভিযোগ তাদের নজরে এসেছে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এই বইয়ের কোনো কোনো অধ্যায়ের অংশবিশেষ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এডুকেশনাল সাইট থেকে নিয়ে হুবহু অনুবাদ করে ব্যবহার করা হয়েছে। বইয়ের এই নির্দিষ্ট অংশটুকু এবং ওয়েবসাইটটির একই লেখাটুকু তুলনা করে অভিযোগটি আমাদের কাছে সত্য বলেই প্রতীয়মান হয়েছে।
বিবৃতিতে তারা বলেন, একই পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে অনেকে জড়িত থাকেন, যাদের শ্রম ও নিষ্ঠার ফলাফল হিসেবে বইটি প্রকাশিত হয়। বিশেষত জাতীয় পাঠ্যপুস্তক রচনার ক্ষেত্রে এই সব লেখকের কাছ থেকেই এক ধরনের দায়িত্বশীলতা আশা করা হয়। সেখানে কোনো একজন লেখকের লেখা নিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে তা আমাদের টিমের জন্য হতাশার এবং মন খারাপের কারণ হয়। ওই অধ্যায়ের আলোচিত অংশটুকু লেখার দায়িত্বে আমরা দুজন না থাকলেও সম্পাদক হিসেবে এর দায় আমাদের ওপরও বর্তায়, সেটি আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি। অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে বইটির প্রয়োজনীয় পরিমার্জন করা হবে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এ বছর বইটির পরীক্ষামূলক সংস্করণ চালু হয়েছে এবং সামনের শিক্ষাবর্ষ থেকে এতে যথেষ্ট পরিমার্জন ও সম্পাদনার সুযোগ রয়েছে। কাজেই উল্লিখিত অভিযোগের বাইরেও যে কোনো যৌক্তিক মতামতকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হবে এবং সে অনুযায়ী পাঠ্যবইয়ের প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বা পরিমার্জন করা হবে। প্রসঙ্গত, সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি রচনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. হাসিনা খান, ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান, ড. মুশতাক ইবনে আয়ূব, রনি বসাক। আর সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল।