শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক সাম্যতা দেখা গেলেও ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে নেই, বেশির ভাগই অবৈতনিক খাতে কাজ করেন। ১৫ থেকে ২৯ বছরের নারীর শিক্ষার হার পর্যালোচনায় দেখা যায়, শিক্ষায় অনেকটা সাম্যতা অর্জিত হয়েছে। তবে ৩০ বছরের ঊর্ধ্বে থাকা নারীরা বেশির ভাগ অবৈতনিক খাতে কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেন, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন।
রোববার (১০ মার্চ) বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে আনোয়ারা বেগম মুনিরা খান মিলনায়তনে আয়োজিত ‘নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে নারীর জন্য বিনিয়োগ অপরিহার্য’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ত্রিশোর্ধ্ব এ নারীদের জন্য সরকারিভাবে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তাদের নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। ১৭.৪ শতাংশ নারী প্রধান খানা (ফিমেল হেডেড হাউজহোল্ড) আছে, তাদের জন্য ভাতার হার ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রকাশিত তথ্যের আলোকে বলেন, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলেই একটি দেশের নারীদের উন্নতি হবে—এমনটি ভাবার সুযোগ নেই। আইসিডিডিআরবির গবেষণা বলে, শহরের ৫০ শতাংশ পুরুষ মনে করে নারীদের নির্যাতন সহ্য করতে হবে, শহরে লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশনে নারীর অংশগ্রহণ কমছে। এসব পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ শতাংশ, এখানে নারীর জন্য সেবামূলক কর্মসূচি বৃদ্ধি করতে হবে। জেন্ডার বাজেটের কার্যকর প্রয়োগ ঘটাতে হলে নারীবান্ধব প্রজেক্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে; সম্পদ সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিশ্চিতের ওপর জোর দিতে হবে; মালিকানার সমতা ও স্বত্বাধিকারের দিকে জোর দিতে হবে।
আরমা দত্ত বলেন, বাজেট তৈরি হলেও নারীর জন্য থাকা ক্রিটিক্যাল বিষয়গুলো, ফেমিনিজম অব অ্যাগ্রিকালচার, জেন্ডার লেন্সের প্রতিফলন দেখা যায় না। সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বাজেট হচ্ছে সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের একটি মাধ্যম। নারী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের ৪৪টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার বাজেট প্রণীত হলেও তা জেন্ডার বৈষম্য দূর করে জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় কতটা কার্যকর হচ্ছে, সেটি এখন মনিটরিং করতে হবে। উন্নয়নকে টেকসই করতে এখন সরকারের বাজেট বিশ্লেষণে করণীয় নির্ধারণ করা জরুরি।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন; জেন্ডার বাজেটের সংজ্ঞায়ন পরিবর্তনে কাজ করতে হবে; সংসদে বাজেট প্রণয়নের পূর্বে বাজেট
নিয়ে আলোচনা করা না গেলেও বাজেটের কাঠামো নিয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে; সংসদীয় কমিটির সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করা যেতে পারে।সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। বক্তব্য দেন, সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বোর্ড অব ডিরেক্টর প্রীতি চক্রবর্তী।