নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আপিলের সিদ্ধান্ত বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

দুর্নীতির অভিযোগে ফিফা কর্তৃপক্ষ বাফুফে সধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগকে ২ বছরের নিষেধাজ্ঞার শাস্তিকে অবৈধ হিসেবে দাবি করলেন খোদ সোহাগ নিজে। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কোট অব আর্বিট্রেশন ফর স্পোর্টস- সিএএসে (খেলাধুলা সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আদালত) ফিফার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন তিনি। 

আজ গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানান আবু নাইম সোহাগের আইনী সহায়তাদানকারী প্রতিষ্ঠান এ হোসাইন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস। দুর্নীতি এবং অর্থ তছরূপের দায়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে ফিফা। একই সঙ্গে ১২ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয় তাকে।

আইন সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠানকি জানিয়েছে, ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার একটি স্ট্যাম্পিং হাউজের মত করেই আবু নাইম সোহাগের বিপক্ষে রায়টি প্রদান করেছে। ফিফা ইনভেস্টিগেটরি চেম্বার তদন্তকালে কোনো স্বাধীন এবং ন্যায়পরায়ন পদ্ধতি অবলম্বন করেনি।

বিবৃতিতে ফিফার রায়কে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ ও ‘অনুমাননির্ভর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বলা হয়েছে ফিফার এই রায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং পক্ষপাতদুষ্টও। সোহাগের পক্ষ থেকে আইনি প্রতিষ্ঠান এ হোসেইন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘এই সিদ্ধান্ত শুধু ত্রুটিপূর্ণই নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট রায় দেওয়া হয়েছে।’

বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রন সংস্থা ফিফা জানায়, বাফুফেকে দেওয়া ফিফার টাকার হিসাবে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরই আজ নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয় এ হোসাইন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের পক্ষ থেকে।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, ‘শুনানিতে বাফুফে টাকাপয়সা লেনদেনের জন্য ফিফার দেওয়া অনুমোদনের নথিপত্র পেশ করেছে। কিন্তু অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার অবৈধভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আমলে নেয়নি এবং ১৪ এপ্রিল ২০২৩–এ রায়টি অনুমোদন করে। আর এতেই স্পষ্ট হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ নয় বরং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে এই রায় দেওয়া হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরো দাবি করা হয়, এই রায়ে ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার বুঝেছে যে ফিফার তহবিলের কোনো অপব্যবহার করা হয়নি। আবু নাঈম সোহাগের জমা দেওয়া কাগজপত্রেও কোনো অনিয়ম পাওয়া যায়নি—অ্যাডজুডিকেটরি কমিটি এমন কথাই বলেছিল বলে বাফুফের বিবৃতিতে দাবি করা হয়। অ্যাডজুডিকেটরি কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে স্বীকার করা হয়, তিনটি বিষয় নিয়ে অনিয়মের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

১. অর্ডার করা মালামাল পাওয়া যায়নি এমন অভিযোগ নেই।
২. বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি অর্থ দেওয়া হয়েছে।
৩. ফিফার দেওয়া তহবিল থেকে তাদের অর্থ পরিশোধ করা হয়নি। বিবৃতিতে এমনই দাবি করা হয়েছে।

বিবৃতিতে দাবি করেছে, ‘ফিফার পাঠানো তহবিলের অপব্যবহার করা হয়েছে কিংবা বেঁধে দেওয়া নিয়মের মধ্যে ব্যবহার করা হয়নি, এমন কোনো ইঙ্গিত নেই রায়ে। একইভাবে ফিফা ও বাফুফে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেই প্রমাণও নেই। এর পাশাপাশি ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি কমিটি বলেছে, ফাইলে এমন কিছুই নেই যাতে বোঝা যায় আবু নাঈম সোহাগ জালিয়াতি করেছেন কিংবা দরপত্র নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। বরং দরপত্রটাই ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তথ্যপ্রমাণ এড়িয়ে সম্পূর্ণ অনুমানের ওপর অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার জানিয়ে দেয়, বাফুফের প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি করা হয়েছে। আর এতেই প্রমাণিত হয় সিদ্ধান্তটি শুধু ভুল ও অসংগতিপূর্ণ নয়, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।’

সোহাগের আইনজীবীর এই বিবৃতিতে স্পষ্ট দাবি করা হয়েছে, ‘শুনানির সময় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বিবেচনা করা এড়াতে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অনুমাননির্ভর এই রায় অনুমোদন করেছে ফিফার অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার। এ ছাড়া সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আবু নাঈম সোহাগকে দুই বছর নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানা করা হয়েছে।’

ফিফার সমালোচনা করে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বার যদি নথিপত্রগুলো স্বাধীন ও ন্যায্যভাবে যাচাই-বাছাই করত, বিশেষ চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ফিফার অনুমোদন নিয়েই খরচের যেসব নথিপত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে নেওয়া সিদ্ধান্তটি অনুমোদন পেত না। দেখে মনে হয়েছে, অ্যাডজুডিকেটরি চেম্বারের কাজই যেন ফিফা ইনভেস্টগটরি চেম্বারের সিদ্ধান্তকে অনুমোদন দেওয়া, যেখানে স্বাধীন ও বিচারিকভাবে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়নি।’

বিবৃতির শেষে আপিল করার কথা জানানো হয়েছে, ‘নিয়ম অনুযায়ী জনাব সোহাগ এই পক্ষপাতদুষ্ট রায়ের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আদালতে (সিএএস) আপিল করবেন। এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা - dainik shiksha আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054090023040771