লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় লামিয়া বেগম নামে এক স্কুলছাত্রী নিজেই তার বাল্যবিয়ে রুখে দিয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) তার বিয়ে হওয়ার কথা থাকলেও ওই ছাত্রীর সাহসী ভূমিকা ও বুদ্ধিমত্তায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে তা বন্ধ হয়ে যায়। লামিয়া উপজেলার চর আলেকজান্ডার ইউনিয়নের সবুজগ্রাম এলাকার মো. ছাইফুল্যার মেয়ে লামিয়া বালুরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।
জানা যায়, উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকার এক ছেলের সঙ্গে লামিয়ার পরিবার তার বিয়ে ঠিক করেন। কিন্তু লামিয়া এত কম বয়সে বিয়েতে রাজি নয় বলে পরিবারকে জানালেও বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের কথা চূড়ান্ত করা হয়। উপায় না পেয়ে সাহসী লামিয়া মঙ্গলবার দুপুরে কৌশলে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী এক বান্ধবীর বাড়িতে ওঠে। সেখান থেকে বান্ধবীর বোকরা পড়ে ছুঁটে যায় নিজ স্কুলে।
কান্নাকাটি করে বিষয়টি শিক্ষকদের জানালে প্রধান শিক্ষক তার বিয়ে বন্ধের ব্যাপারে আশ্বস্ত করে। পরে লামিয়া বাড়ি ফিরে গেলে প্রধান শিক্ষক ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিনকে জানান। খবর পেয়ে ওই দিন সন্ধ্যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মিনার উদ্দিন ও প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুছ সালামকে সঙ্গে নিয়ে ছাত্রীটির বাড়িতে গিয়ে হাজির হন। তখন লামিয়ার বাড়িতে বিয়ের আয়োজনের প্রস্তুতি চলছিল।
তবে, ইউএনওর উপস্থিতির কথা টের পেয়ে লামিয়ার পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে ইউএনও তাদেরকে ডেকে এনে বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেন। প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত লামিয়াকে বিয়ে দেওয়া হবে না-এ মর্মে পরিবারের কাছ থেকে মুচলেকা নেন।
বালুরচর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুছ সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, লামিয়া তার বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক শাখার ছাত্রী। সদ্য প্রকাশিত জেএসসি পরীক্ষায় সে ভালো ফল করে। তার এ সাহসী ভূমিকার অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘ছাত্রীটি নিজেই নিজের বাল্যবিয়ে ঠেকাতে যে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। লেখাপড়া চালিয়ে নিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।’