বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তুলে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ রাগীব আলীর রোষানলে পড়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন সিলেটের বেসরকারি লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা। তার অভিযোগ তাকে বিনা বেতনে ছয় মাস থেকে এক বছরের জন্য ছুটিতে পাঠাতে চান ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আলোচিত শিল্পপতি রাগীব আলী। এরই জেরে সোমবার উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলাকে নিজ কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
এদিন বিকেলে উপাচর্য নিজেই দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সোমবার সকাল থেকে আমাকে নিজ কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি। সকালে অফিসে আসলে দেখতে পাই তালা ঝুলছে। একজন প্রভাষক জানান, আমাকে ঢুকতে দেয়া হবে। আমি কার্যালয়ের সামনে বসেছিলাম দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। পরে চলে এসেছি। আমাকে জানানো হয়েছে ট্রেজারার (ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য) সাহেব ও ট্রাস্টি বোর্ডের নির্দেশনায় এমনটি করা হয়েছে।
ড. কাজী আজিজুল মাওলার অভিযোগ, বিদেশ সফর শেষে দেশে ফেরার পর তাকে ক্যাম্পাসে ফিরতে দেয়া হচ্ছে না। তার সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। অফিসিয়াল ই-মেইল পর্যন্ত ব্যবহার করতে দেয়া হচ্ছে না।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষকে (ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য) আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন ড. মাওলা। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে চেয়ারম্যানকে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছিলেন উপাচার্য। গত ৫ মার্চ উপাচার্যের পক্ষে কামাল হোসেন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের আইনজীবী শরীফ ভূইয়া লিডিং ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান রাগীব আলী ও কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিককে আইনি নোটিশ পাঠান। নোটিশে উপাচার্যকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেয়াকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর পরিপন্থি ও মানহানিকর উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি ও আচার্য আবদুল হামিদ বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী আজিজুল মাওলাকে লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য নিয়োগ দেন। ওই আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১ মার্চ ড. মাওলা আনুষ্ঠানিকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চলতি বছরের ১২ থেকে ২৪ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি ইউজিসির অনুমতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তবে অসুস্থতা ও ফ্লাইট জটিলতার কারণে সময়মতো দেশে ফিরতে পারেননি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরার তিন দিন পর তিনি বিধি অনুযায়ী উপাচার্য হিসেবে লিডিং ইউনিভার্সিটিতে ফিরতে চাইলে চেয়ারম্যান ও কোষাধ্যক্ষ কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হন।
উপাচার্য ড. কাজী আজিজুল মাওলা বলেন, দেশে ফেরার পর ইউজিসিকে অবহিত করার পর বিধি অনুযায়ী লিডিং ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এখন আমি। আমাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও আচার্য নিয়োগ দিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে রাষ্ট্রপতি ব্যবস্থা নেবেন। ট্রাস্টি বোর্ড বা অন্য কেউ জোর করে ছুটি দেয়া আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কারও ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালনেরও সুযোগ নেই। তিনি বলেন, অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হওয়ায় তাকে সরাতে একটি পক্ষ সক্রিয় রয়েছে।
এদিকে বিনা বেতনে ছুটি নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে লেখা চিঠিতে রাগীব আলী উপাচার্য ড. মাওলার বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেছেন। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে উপাচার্যের যোগদান বা ছুটি নেয়ার বিষয়টি তিনি অবগত নন বলেও দাবি করেছেন। ইউনিভার্সিটির ফান্ড থেকে বিদেশে টাকা সরানোর মতো গুরুতর অভিযোগও করেছেন তিনি চিঠিতে।
এসব বিষয়ে মন্তব্য জানতে ড. সৈয়দ রাগীব আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি।
কোষাধ্যক্ষ বনমালী ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।