নিবন্ধন এক বিষয়ে নিয়োগ অন্য বিষয়ে

নিজামুল হক |

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) অব্যবস্থাপনার কারণে বিপাকে পড়ছেন উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। এক বিষয়ের নিবন্ধন পাওয়া শিক্ষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অন্য বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে। এ কারণে কাজে যোগদান করেও এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না তারা। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিবন্ধন না থাকার কারণে এমপিওভুক্ত করা যাবে না।

শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শফিকুল ইসলাম সিদ্দিক বলেন, এক বিষয়ের নিবন্ধন থাকা শিক্ষক অন্য বিষয়ে নিয়োগ পেলেন কীভাবে, এমন সুযোগই থাকার কথা নয়। এনটিআরসিএ কীভাবে নিয়োগ দিল প্রশ্ন রাখেন তিনি। এই কর্মকর্তা আরো বলেন, এভাবে নিয়োগ পাওয়া সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের এমপিওভুক্তি হবার কোনো সুযোগ নেই।

নিলুফা ইয়াসমিন নবম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় সমাজ বিজ্ঞানে উত্তীর্ণ। মেধা তালিকা অনুযায়ী এনটিআরসিএ’র গত বছরের ৯ অক্টোবর তাকে মাদ্রাসার জুনিয়র শিক্ষক হিসাবে নিয়োগের জন্য ঝালকাঠির সোনারগাঁও আরুয়া হাসানিয়া দাখিল মাদ্রাসায় পাঠানো হয়। নিয়ম মেনে তিনি যোগদান করেন। দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু এমপিওভুক্তির জন্য যখন তিনি আবেদন করেন তখন তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সমাজ বিজ্ঞানের নিবন্ধন হওয়ার কারণে জুনিয়র শিক্ষক হিসাবে তার এমপিও হবে না। ইতোমধ্যে তিনি প্রায় একবছর এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সুপারিনটেনডেন্ট ছালাম সিকদার বলেন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে এমপিওভুক্তির জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কার্যালয় ফিরিয়ে দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমপিওভুক্তি না হওয়ায় এ সমস্যা। তিনি জানান, তার প্রতিষ্ঠানে সমাজ বিজ্ঞানের শূন্য পদ নেই।

তবে এ বিষয়ে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (শিক্ষাতথ্য ও শিক্ষামান) তৌহিদুর রহমান বলেন, কেউ যদি ভুল আবেদন করে এর দায় তাকেই নিতে হবে। তবে যেহেতু সফটওয়ারের মাধ্যমে এ কাজটি করা হয়েছে এবং এটা প্রথমবার। এ কারণে সফটওয়ারেও ভুল হতে পারে। এমন অভিযোগ আরো এসেছে। এ সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

রফিকুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, কেউ যদি ভুলক্রমে অন্য বিষয়ে আবেদন করে থাকেন তাকে কেন নিয়োগ দেওয়া হবে। এনটিআরসিএ’র কাছেও শিক্ষকদের নিবন্ধনের সব তথ্য রয়েছে। এ ছাড়া এক বিষয়ে নিবন্ধন পাওয়া শিক্ষকের অন্য বিষয়ে আবেদন করার সুযোগও কেন রাখা হয়েছে প্রশ্ন করেন তিনি।

আমিনুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষক নিবন্ধন নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনা। কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। নিবন্ধন অফিসের কারো সঙ্গে যোগাযোগ বা দেখা করার সুযোগ নেই। ফলে বিপাকে পড়তে হয় প্রার্থীদের।

নজরুল ইসলাম নামে এক প্রার্থী বলেন, অনেকেই আছেন যারা পড়াশুনা করেছেন বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা অন্য কোনো শাখার বিষয়ে। তবে তারা তাদের অন্য কোনো বিষয়ে নিয়োগ পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। যেমন বিজ্ঞান শাখার উদ্ভিদ বিজ্ঞান, প্রাণিবিজ্ঞান, রসায়ন, পদার্থ, জীববিজ্ঞান এবং মানবিক শাখার অর্থনীতি, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ের বহু প্রার্থী কম্পিউটার এবং কৃষি শিক্ষা বিষয়ে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণও করেছেন।

প্রার্থীদের বক্তব্য অনুযায়ী, এসব আবেদন যদি বৈধই না হবে তাহলে কেন প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হলো? নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে শর্ত আছে সে শর্ত পূরণ না হওয়ায় আবেদনের শুরুতেই তাদের বাদ দেওয়া উচিত ছিল। এটা না করে এনটিআরসিএ অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050971508026123