নিবন্ধিত শিক্ষক ছাড়া পাঠদানের অনুমতি নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার পাঠদানের অনুমতি পেতে নিবন্ধনধারীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের শর্ত যুক্ত করা হচ্ছে। সম্প্রতি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এ এমএম আজহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রচলিত বিধান অনুযায়ী নতুন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে প্রথমে স্থাপনের অনুমতি পরে পাঠদান ও একাডেমিক স্বীকৃতি নিতে হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ড কয়েকটি প্রক্রিয়ার পর এই অনুমতিগুলো দিয়ে থাকে।  

দৈনিক শিক্ষার অনসুন্ধানে জানা যায়, পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার প্রণীত কোনো বিধান মানা হয় না। অথচ ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রতিষ্ঠা এবং এ সংক্রান্ত আইন চালুর সময় থেকেই যেকোনও বেসরকারি স্কুল-কলেজ ও মাদরাসায় শিক্ষক নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা হিসেবে নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু  শুধু এমপিওভুক্তি ছাড়া এই বিধান কেউ মানেন না। এমনকি শিক্ষাবোর্ড ও শিক্ষা অধিদপ্তরে নিযুক্ত অনেক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত সরকারি কলেজ ও হাইস্কুল শিক্ষকদের এ বিধানটি সম্পর্কে ষ্পষ্ট ধারণা নেই। শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদেরও এ সম্পর্কে ধারণা অস্পষ্ট। শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেন, শুধু এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে নিবন্ধনসনদ। এই সুযোগে প্রতিবছর হাজার হাজার নিবন্ধনবিহীন ব্যক্তি শিক্ষকতা পেশায় ঢুকে পড়ছেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।  

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের একজন উপপরিচালক দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘খণ্ডকালীন’ পরিচয়ে হাজার হাজার কম যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি শিক্ষকতা পেশায় ঢুকছেন নানাভাবে। প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ এইসব বেকার যুবকদের অজুহাত তারা তো এমপিওভুক্ত হবেন না বা সুযোগ পাবেন না। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও একই অজুহাত দেখিয়ে তাদের নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন। বিনিময়ে টুপাইসও কামাচ্ছেন। 

উদাহরণ হিসেবে অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড কলেজ। ব্রিটিশ কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসেবে এই প্রতিষ্ঠানটির সুনাম ছিল। পরে ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি ভার্সন ও বাংলা মাধ্যমে অসংখ্য শাখা ও শিফট খুলে যোগ্য-অযোগ্য নানা ধরণের শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সুনাম নষ্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ২০০৩-২০০৪ খ্রিস্টাব্দে। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই বাংলা মাধ্যমের একটি শাখা খুলে এই প্রতিষ্ঠানে ১৫৩ জন নিবন্ধনবিহীন ব্যক্তিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। পুরো শাখাই অবৈধ, কম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের নিয়োগও অবৈধ। এদেরই একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক এ এইচ এম সায়েদুজ্জামান। যোগ্যতা নয়, তদবিরে যার নিয়োগ। শুদ্ধভাবে এক পৃষ্ঠা বাংলাই লিখতে পারেন না। অথচ এই সায়েদুজ্জামান  পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের শিক্ষক হিসেবে!      

উপপরিচালক আরো বলেন, শুধু উইলস নয়, মতিঝিল মডেল, আইডিয়ালসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই সায়েদুজ্জামানের মতো হাজার হাজার শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে চলছে। অথচ নিবন্ধনধারী বেকার রয়েছেন লাখ লাখ। এতে পড়াশোনার মান নিম্নমুখী হচ্ছে। এসব রোধ করতেই নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার পূর্বশর্ত পাঠদানের অনুমতি পেতে নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ বাধ্যতামূলক করার।  

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মতিঝিল মডেল স্কুলের একজন শিক্ষক তদবিরের ্জন্য একটি আবেদন নিয়ে এসেছেন মন্ত্রণালয়ে যেখান আটটি বানান ভুল। ভুলগুলো মার্ক করে ওই শিক্ষককে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, তার নিবন্ধন সনদ নেই। কুষ্টিয়ার বেসরকারি স্কুল-কলেজে ও রাজশাহীর একটি বেসরকারি কলেজ থেকে এমএ ডিগ্রি নিয়ে রাজধানীর মডেল স্কুলে চাকরি পেয়েছেন টাকার জোরে। এসবের অবসান জরুরি। 

জানতে চাইলে এনটিআরসিএর একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ২৯ জুলাই কর্তৃপক্ষের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, এনটিআরসিএ কর্তৃক শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এমন শর্ত সাপেক্ষে পাঠদানের অনুমতি দেয়ার প্রথা চালু করতে হবে। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এনটিআরসিএ। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই প্রজ্ঞাপন জারি হবে। 

আরও পড়ুন :  ৬৮ শতাংশ শিক্ষক ফেল কেন!


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052430629730225