নিম্নমানের সামগ্রী : দেবে গেল নির্মাণাধীন স্কুল ভবনের ছাদ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি |

গোপালগঞ্জে মুকসুদপুর উপজেলার জলিরপাড়া জেকেএমবি মল্লিক উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ দেবে গেছে। কোনো প্রকৌশলীর ড্রইং, ডিজাইন ও প্ল্যান ছাড়াই ভবন নির্মাণ এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। 

স্কুলের প্রধান শিক্ষক নির্মল সাহা বলেন, স্কুলের নতুন ভবন, গেট নির্মাণ ও অন্যান্য কাজ স্কুল ফান্ডের টাকায় করা হচ্ছে। এখানে ৩৫ লাখের কিছু কম টাকা খরচ হয়েছে। এখন ওই ভবনের ফিনিশিং, দরজা ও জানালর কাজ বাকি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গ্রামের মিস্ত্রি বাসু এ ভবনের কাজ করেছে। আমি তাকে মালামাল কিনে দিয়েছি। সে তার মতো করে ভবন নির্মাণ করেছে। আমার মনে হচ্ছে ভবনের কাজে রড, সিমেন্ট কম ব্যবহার করা হয়েছে। মিস্ত্রির পরামর্শে ছাদে গ্রেড বিম না দিয়ে কনস্যুলেটেড বিম দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ছাদ দেবে গেছে। ভবন রক্ষায় মাঝখানে দেয়াল তোলা হয়েছে। বাঁশ দিয়ে ছাদের ধস ঠেকানো হয়েছে। এ ছাড়া ভবন নির্মাণে কলাম কম দেওয়া হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।

ভবন নির্মাণের প্ল্যান, ড্রইং, ডিজাইন, লে-আউট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো প্রকৌশলী দিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু তিনি সেই প্রকৌশলীর নাম বলতে পারেননি। জলিপাড়া ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, টাকা লুটপাট করতেই প্রধান শিক্ষক এ ভবন নির্মাণ করেছেন। এখানে আমার ছেলে পড়াশোনা করে। স্কুলে এমন ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মিত হলে অভিভাবক হিসেবে ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হবে।

জলিরপাড় বঙ্গবন্ধু ক্লাবের সভাপতি সঞ্জীব বাগচী বলেন, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জেলার ঐতিহ্যবাহী এ স্কুলে এক হাজার ৮০০ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালে নির্মিত ভবনটি খুবই ভালো ছিল। প্রধান শিক্ষক টাকা লুটপাটের জন্য ওই ভবন ভেঙে সেখানে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করছেন। এতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি।

স্কুলের সহকারী শিক্ষক নীল রতন বালা বলেন, প্রধান শিক্ষক নির্মল সাহা নিজেই প্রকৌশলী ও ঠিকাদার। তিনি গ্রামের মিস্ত্রি বাসুকে দিয়ে এ রকম ত্রুটিপূর্ণ ভবন নির্মাণ করেছেন। নির্মাণসামগ্রী থেকে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

ভবন নির্মাণের মিস্ত্রি বাসু বলেন, বিল্ডিংয়ে কলাম কম ব্যবহার করা হয়েছে। ছাদে বিম দেওয়া হয়নি। ইঞ্জিনিয়ারের প্ল্যান ছাড়াই প্রধান শিক্ষক আমাকে যেভাবে বলেছেন, আমি সেভাবেই বিল্ডিং করেছি। বিল্ডিংয়ের কলাম ছাদ ধরে রাখতে পারছে না বলেই দেবে যাচ্ছে। এটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে।

স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সঞ্জীব বাগচী বলেন, গ্রামের রাজমিস্ত্রি বাসুকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক এ ভবন নির্মাণের কাজ করিয়েছেন। নির্মাণ কাজের ত্রুটির কারণে ভবনের ছাদ দেবে গেছে। স্কুল ফান্ডের টাকায় এ কাজ করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকই সব কাজ তদারকি করেন। আমরা এ কাজের কাছে যাই না।

মুকসুদপুরের ইউএনও তাসলিমা আলী বলেন, আপনার মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। আমরা ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেব। এ ব্যাপারে টেকিনিক্যাল কমিটি গঠন করে বিষয়টি তদন্ত করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027258396148682