সরকারি কর্মচারী নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠনের উদ্যোগে গতি নেই

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নিয়োগ দিলেও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর। আর এখানেই নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। সংবিধান অনুযায়ী পৃথক পিএসসি গঠনের মাধ্যমে নিম্ন শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সে পথে হাঁটছে না সরকার। ফলে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতিও কমছে না। রোববার (২৪ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বাহরাম খান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,  সরকার মাঝে মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই দুই শ্রেণির কর্মচারী বাছাইয়ের নিয়ম করলেও গত মাসে তা বাতিল করা হয়। অর্থ বিভাগ থেকে গত ২৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে বলা হয়, ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের সরকারি কর্মচারী নিয়োগ আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে করা যাবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে দুটি পিএসসি ছিল। পিএসসি-১-এ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী এবং পিএসসি-২-এর মাধ্যমে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ হতো। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ ছিল মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর অধীনে। ১৯৭৭ সালে এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে দুটি পিএসসি বিলুপ্ত করে বর্তমান পিএসসি গঠন করা হয়। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে হলে নিয়োগকেন্দ্রিক দুর্নীতি অনেকটাই দূর হবে। কমে আসবে নিয়োগসংক্রান্ত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা। কিন্তু নিয়োগ-দুর্নীতির পথ খোলা রাখতেই এ বিষয়ে প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের উৎসাহ কম।

সংবিধানের ১৩৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘আইনের দ্বারা বাংলাদেশের জন্য এক বা একাধিক সরকারী কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠার বিধান করা যাইবে এবং একজন সভাপতিকে ও আইনের দ্বারা যেরূপ নির্ধারিত হইবে, সেইরূপ অন্যান্য সদস্যকে লইয়া প্রত্যেক কমিশন গঠিত হইবে।’ বিদ্যমান পিএসসির কর্মচারি নিয়োগের ক্ষেত্রে সুনাম রয়েছে। কারণ সরকারি কর্ম কমিশন প্রতিষ্ঠা, নীতি নির্ধারক নিয়োগ এবং অপসারণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উচ্চপর্যায়ের মান বজায় রাখা হয়। তাই এই ধরনের কমিশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগের বিষয়টি দেখভাল করা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে বহুবিধ জটিলতা রয়েছে। তাই এটা মন্ত্রণালয়গুলোর হাতেই থাকতে পারে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির মতো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে হতে পারে। এ জন্য নতুন পিএসসি গঠন হবে, নাকি বিদ্যমান পিএসসির মাধ্যমেই করা হবে সেটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।

পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিকও এ বিষয়ে দ্বিমত করেননি। তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী একাধিক পিএসসি গঠনের সুযোগ আছে। আবার বর্তমান পিএসসির অধীনেও অন্য শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিধান করা যেতে পারে।’

তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ পিএসসির মাধ্যমে করা যায় কি না তা জানতে চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি পিএসসিকে চিঠি দিয়েছে। এতে বর্তমান পিএসসির সাংগঠনিক কাঠামো ও সামগ্রিক আইনগত কী সংস্কার দরকার তা জানাবে পিএসসি। চিঠি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে ড. সাদিক বলেন, ‘এ বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে মন্তব্য করব না। আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিশন বসে সরকারকে মতামত জানাব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন মন্ত্রিপরিষদসচিব  বলেন, ‘আমার বিভাগে তৃতীয় শ্রেণির ২০টি পদে নিয়োগের জন্য ২৫ জন শীর্ষস্থানীয় জনপ্রতিনিধির সুপারিশ পেয়েছিলাম। এরপর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। পিএসসির আদলে নতুন কমিশন হলে সরকারি নিয়োগ-দুর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।’

পৃথক কমিশনই সমাধান : বর্তমানে রাজস্ব খাতে অনুমোদিত পদের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ। এর মধ্যে সাড়ে ১০ লাখই তৃতীয় শ্রেণির। অর্থাৎ প্রতি ১০০ সরকারি কর্মচারীর মধ্যে তৃতীয় শ্রেণিরই ৬১ জন। এর বাইরে প্রথম শ্রেণির ১২, দ্বিতীয় শ্রেণির ৯ ও চতুর্থ শ্রেণির ১৮ জন।

১৮ লাখ অনুমোদিত পদের মধ্যে প্রায় চার লাখই শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে আবার দুই লাখই তৃতীয় শ্রেণির পদ। তাই তৃতীয় শ্রেণির বিপুলসংখ্যক কর্মচারী নিয়োগে পৃথক কমিশন থাকাই যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন জনপ্রশাসনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।

সূত্র জানায়, বিদ্যমান পিএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি মিলিয়ে চার লাখ পদের বিপরীতে নিয়োগের কাজ করে। আর তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর পদের সংখ্যা এই দুই পদের প্রায় তিন গুণ। তাই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব বিদ্যমান পিএসসির ওপর চাপালে পুরো প্রক্রিয়াই আরো ধীরগতি দেখা দিতে পারে।

আবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে এখন কোটার হিসাব করতে হয় না। এদের কাজের দায়িত্ব-পরিধির বৈচিত্র্যও কম। কিন্তু তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে যোগ্যতা, দায়িত্ব ও শর্তাবলী প্রতিষ্ঠানভেদে বিচিত্র। তাই নতুন পিএসসি গঠনই যৌক্তিক হবে।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সরকারি কর্মচারী নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধে সব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। নিম্ন শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে নতুন পিএসসি করতে হবে, নাকি বিদ্যমান পিএসসির মাধ্যমেই সম্ভব হবে তা খতিয়ে দেখে আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।’

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050301551818848