নিয়ন্ত্রণে আনুন নিত্যপণ্যের বাজার

বিপ্লব বড়ুয়া |

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, দেশের সামগ্রীক উন্নয়ন অনেক করেছেন এবার একটু দম নিন। দেশের উন্নয়নে জনগণ খুব খুশি। আপাতত বছরতিনেক বৃহৎ কোনো প্রজেক্ট থেকে বিরত থাকুন। এখন দেশে সীমাহীনভাবে চোরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। এদের চোর বলে সম্মানিত করতে চাই না, এরা হচ্ছে ডাকাত কিংবা ডাকাতের চেয়ে ভয়ংকর কিছু দস্যু-জানোয়ার। এদের কারণে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। খাদ্যের দাম নিয়ে দেশের মানুষ কষ্টে আছে। যেকোনো উপায়ে কমাতে হবে। যে দেশের মানুষ শিষ্টাচার, নৈতিকতা কী জিনিস বোঝে না, যে দেশে খেতে দিলে গ্লাস, থালাবাসন চুরি করে, ওয়াসরুমে হাত-মুখ ধৌত করতে গিয়ে সাবান, টিস্যু চুরি করে পকেটে ভরে সে দেশকে অল্প কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী সোনার হরিণ বানিয়েছেন। উন্নয়ন অর্থনীতিতে এনেছেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এতো কিছুর পরও অধিকাংশ মানুষের চরিত্র বিন্দুমাত্র বদলায়নি। অফিসের বড় বড় কর্তাদের (তবে সব নয়) দেখলে চোর চোর মনে হয়। যে দেশে এককাপ চা পান করে অপরের গিবত করতে বুকে বাধে না, সে দেশের আদম সন্তানরা মানুষ হবে কবে?

চোরেরা দেশটাকে গিলে ফেলেছে। হজমের পর এখন কারো কারো বদহজমও হচ্ছে দেখি! এভাবে দেশটাকে লুটেপুটে খেয়ে একেকজন পালাচ্ছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আপনার পিতা বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন করে কেউ কেউ সোনার খনি পায়, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। গভীরভারে চিন্তা করতে গেলে দেখা যাবে এ দেশটা আসলে চোরদের স্বর্গরাজ্য। আমার মনে হয় দেশটাকে স্বাধীন করে জাতির পিতা বুঝেছিলেন তিনি কতো বড় ভুল করেছিলেন। তিনি যদি আগে বুঝতে পারতেন, তাহলে এই মহাভুলটি অন্তত করতেন না! দেশে এতো এতো দুর্নীতি বেড়েছে, প্রধানমন্ত্রী আপনিও এখন আপনার পিতার মতো বলতে পারবেন সে কথা। আপনার আশেপাশে চোরের এতো বেশি উৎপাত বেড়েছে। যদি সামাল দিতে না পারেন তাহলে পুরো দেশটারে এরা গিলে খেয়ে ফেলবে। ব্যাংক, বীমা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ভূমি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, কাষ্টমস এছাড়া অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান সবখানে সেবাপ্রার্থী মানুষরা সীমাহীন হয়রানির শিকার হচ্ছে। চোরের দল সাধারণ মানুষের রক্তচুষে খেলেও তৃষ্ণা নিবারণ হবে না। অতএব, প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কৌশলে সাবধান হতে হবে। এতোদিন আপনার আশেপাশে যেসব চোর ওঠাবসা করেছে তারা শুধু ছোটখাটো চোর নয়, একেকজন মস্তবড় ডাকাত। দেখতে পাচ্ছি, আপনি এখন ওই চোরদের প্রধান টার্গেটে পরিণত হতে চলেছেন। গাছখেকো, বাঁশখেকো, ভূমিখেকোরা এখন আপনার ওপর পুরোদমে নাখোশ। এই সব ডাকাতের দল আপনার ওপর বেজার হয়ে দেশে আবোল তাবোল বলে গণ্ডগোল পাকাতে চায়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এ দেশের তথাকথিত সুশিক্ষিতরা যদি এভাবে লুটেপুটে খেয়ে সাবাড় করে তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়! সাধারণ মানুষরা কাগজে কলমের চরি কীভাবে হয় জানে না, বোঝে না। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ঘাম ঝড়ানো শ্রমের অর্থ ওরা লুটেপুটে খেয়ে নিচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের সম্পদ জব্দ করুন। দেশের কিছু উচ্চ বিলাসী মানুষের কারণে পুরোদেশ আজ কলঙ্কিত।  প্রশাসনে অরো নজরদারি বাড়ান, তাদের সম্পদের খোঁজ নিন। একজন পিয়ন কীভাবে ৪০০ কোটি টাকার মালিক হন, একজন ড্রাইবার কীভাবে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। দুর্নীতির লম্বা ফিরিস্তি লিখে শেষ হবে না। এদের শেকড় বহু বিস্তৃত। বাংলাদেশে সবচেয়ে নাকি দুর্নীতি হয় ভূমি, বিদ্যুৎ, ওয়াসার অফিসগুলোতে। এদের বিরুদ্ধে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করুন। এতো এতো বেতন দিয়ে দুর্নীতিবাজদের চাকরিতে রেখে লাভ নেই। প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রতিটি সেক্টরে চলছে হরিলুট। দুর্নীতিবাজদের ধরে ধরে খাঁচায় ঢোকানোর ব্যবস্থা করুন। এই দেশে যাতে আর কোনো বেনজীর, আজিজ, ছাগল কাণ্ডের মতিউরের জন্ম না হয়। এরা দেশের শত্রু, গণ-দুশমন! 

মাননীয় প্রানমন্ত্রী, দেশের মানুষ খুব কষ্টে দিনযাপন করছে। মধ্যবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্তদের পরিবার পরিজন নিয়ে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এই শ্রেণির মানুষগুলো কাউকে মুখ ফুটে কোনো কথা বলতে পারছে না। কাঁচাবাজার থেকে নিত্য প্রযোজনীয় দ্রব্য-সামগ্রীর দাম লাগামহীনভাবে হু হু করে বেড়ে চলেছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। চড়া দামের কারণে মানুষ ঠিমতো খেতে পারছে না। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে দেশের মানুষ আজ সর্বশান্ত। সন্তানদের পড়ালেখার ব্যয় বেড়েছে কয়েকগুণ। সে হিসেবে আয় বাড়েনি। বিগত একবছর ধরে বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন। সাধারণ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষরা আয়-ব্যয়ের হিসেব মিলাতে পারছে না। সন্তানদের স্কুল-কলেজের ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় খাবারের মধ্যে টান পড়েছে। কাঁচা বাজারে পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখে ক্রেতাদের বাজার না করে খালি হাতে ফিরে আসতে হচ্ছে। এ নিয়ে পরিবারে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই আছে। যে আলু ২৫ থেকে ৩০ টাকায় পাওয়া যেতো সে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বেগুন, কাকরল কিংবা করলা। কোনো কোনো সময় ১৩০ থেকে ১৫০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে। চিনি, পেঁয়াজ, চাল, ডাল, বিস্কুটসামগ্রী সেই কবে যে নাগালের বাইরে চলে গেছে তা কমার কোনো লক্ষণ নেই। বাজারে নজরদারিও নেই। এ পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষরা কীভাবে পরিবারের মা-বাবা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেবেন।

পুষ্টিকর খাবার এখন মানুষের জন্য স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎ, গ্যাস, ওয়াসার প্রি-পেইড মিটারের নামে মানুষের পকেট কাটছে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার কারণে মুহূর্তে টাকা নাই হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। মোবাইল কোম্পানিগুলোতেও কোনোরকম তদারকি নেই। যেমন খুশি তেমন করে টাকা কেটে নিচ্ছে। দুর্নীতি যে কী পরিমাণে বেড়েছে তার ইয়ত্তা নেই। গত কয়েকমাসে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া কিছু দুর্নীতিবাজদের আসল রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। প্রসাশনিক পর্যায়ের এ করম আরো বহু দুর্নীতিবাজ ধরাছোঁয়ার বাইরে আছে তাদেরকে আইনের আওয়াতায় না আনা পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব নয়। 

প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রান্তিক চাষিদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। বীজ থেকে সার কৃষির সব ধরনের প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম কমিয়ে আনতে হবে। কৃষি উপকরণের উচ্চ মূল্যের ভয়ে কৃষকরা চাষ করতে সাহস পাচ্ছেন না। শ্রমিকদের দিনমজুরি দিতে গিয়ে লোকসানে তারা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। কৃষিকাজে কৃষকরা নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণে দেশে দিন দিন খাদ্যসংকট বেড়ে চলেছে। এজন্য বললাম, এখন আর উন্নয়ন নয়, খাদ্য শষ্যে মানুষকে বাঁচার সুযোগ করে দিন। আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ জনশক্তি আছে, এই জনশক্তিকে যদি বিভিন্ন প্রণোদনার মধ্যে দিয়ে কাজে লাগানো যায় তাহলে বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতে খাদ্য সংকট ঘুছে যাবে। মধ্যপ্রাচ্যসহ তৃতীয় বিশ্বে যুদ্ধের দামামায় খাদ্য সংকটে হাহাকার চলছে এর থেকে উত্তোরণ ঘটাতে হলে কৃষিকাজে বিপ্লব ঘটনা ছাড়া বিকল্প পথ খোলা নেই।

লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067470073699951