নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও আফগান মেয়েরা ‘গোপনে’ পড়াশোনা চালাচ্ছেন

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

তিন বছর আগে তালেবানরা যখন কাবুলের ক্ষমতা দখল করে নেয়, তখন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ১৯ বছরের তরুণী খাওয়ার (ছদ্মনাম)। ওই বছর ক্ষমতায় বসার পর ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়েদের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তালেবান। ফলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় খাওয়ারের। এরপর ওই তরুণীর দিন শুরু হতো ভোর ৪টার নামাজ পড়ার পর রান্না–বান্না ও সংসারের কাজ দিয়ে।

সম্প্রতি এই তরুণী মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে ছদ্মনাম ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়ে সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমার দিনগুলো এখন আগের চেয়ে অনেক আলাদা। আমি আশা করি একদিন সবকিছু বদলে যাবে।’

খাওয়ার জানান, তিনি এখন ইউনিভার্সিটি অব দ্য পিপল এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে ডিগ্রির জন্য গোপনে পড়ালেখা করেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি অলাভজনক অনলাইন বিশ্ববিদ্যালয়, যেটি বিশ্বব্যাপী শরণার্থীদের এবং খাওয়ারের মতো সুবিধাবঞ্চিতদের বিনা পয়সায় পড়ালেখার সুযোগ করে দেয়।

আফগানিস্তানে এরকম আরো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা অনলাইনে, ফোনে এবং টেলিভিশন ও রেডিওর মাধ্যমেও অতিগোপনে নারীদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে।

২০২১ খ্রিষ্টাব্দে অস্থিরতার মধ্যে দেশ ত্যাগ করে অস্ট্রেলিয়ায় যান আফগান তরুণ এরফানুল্লাহ আবিদি। দেশে থাকার সময় তিনি কাজ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীতে অনুবাদক ও সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা হিসেবে। পরে অস্ট্রেলিয়ায় পালিয়ে গিয়ে তিনি দেশে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মেয়েদের পড়ালেখার জন্য গোপনে শিক্ষক নিয়োগ দেন। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাদের প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন গোপন জায়গায় তাদের ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে।

এরফানুল্লাহ আবিদি বলেন, ‘ক্লাসগুলো মুখোমুখি নেওয়া হয়। তবে আগ্রহীদের সকলকে ক্লাসে জায়গা দেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীদের চার বা পাঁচজন করে বিভিন্ন দলে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি দল থেকে একজনকে ক্লাসে রাখা হয়। ওই একজন পরে বাকিদের গিয়ে পড়ায়। নিরাপত্তার কারণে এই কৌশলে আমরা শিক্ষাকার্যক্রম চালাচ্ছি।’

স্বপ্নবাজ এই তরুণ বলেন, ‘তালেবানরা নারীদের অশিক্ষিত রাখতে চায়। কারণ এই নারীরা যখন মা হবে, তখন তাদের প্রজন্মকে যেন নিজেদের সন্ত্রাসী মতাদর্শে কাজে লাগানো যায়।’
 
২০২১ খ্রিষ্টাব্দে আফগানিস্তান ছেড়ে রুয়ান্ডা পালিয়ে যান স্কুল অব লিডারশিপ আফগানিস্তানের (এসওএলএ) প্রতিষ্ঠাতা শাবানা বাসিজ-রাসিক। সেখান থেকেই আফগান মেয়েদের শিক্ষার জন্য প্রতি বছর সীমিত সংখ্যক স্কলারশিপ দিতে শুরু করেন তিনি। গত মার্চে তিনি একটি অনলাইন স্কুল চালু করেছেন। 

অনলাইন স্কুলটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা মাতি আমিন নিএনএনকে বলেন, ‘আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশে আমাদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।’

প্রযুক্তি কোম্পানি মেটার সহায়তায় হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ইংরেজি, পশতু ও দারি ভাষায় ৩০ মিনিটের ক্লাস করানো হয়। মেটা স্কুলটিকে বিনামূল্যে তাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) ব্যবহার করার সুযোগ দিচ্ছে বলেও জানান মাতি আমিন। তিনি বলেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপ এই মেয়েদের কাছে পৌঁছানোর সেরা উপায়। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের কাছে ১ হাজারের বেশি পাঠের অনুরোধ এসেছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ - dainik shiksha একাদশ-দ্বাদশ বাংলা-ইংরেজির সিলেবাস প্রকাশ ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা - dainik shiksha ঠুঁটো জগন্নাথ অধ্যাপকের পকেটে ৬০ লাখ টাকা সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু - dainik shiksha সব কয়টারে গু*লি কইরা মা*রমু স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা - dainik shiksha স্কুলে ভর্তি: সরকারিতে জোয়ার, বেসরকারিতে ভাটা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা - dainik shiksha স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা জাতীয়করণের দাবি যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028119087219238