নিষেধাজ্ঞা এলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে খাদ্য নিরাপত্তা: বিআইডিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক |

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ হলে তা বাংলাদেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এ ছাড়া বৈশ্বিক অর্থনীতির নিম্ন প্রবৃদ্ধি দেশের আরও ৫০ হাজার মানুষকে এ বছর দারিদ্র্যসীমায় ঠেলে দিতে পারে। একই সঙ্গে বাড়বে অপুষ্টির হার। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) তিন দিনের বার্ষিক সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

তারা বলেন, করোনা মহামারী বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারাকে নেতিবাচক পর্যায়ে নামিয়ে এনেছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অর্ধেকের কম প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০টির বেশি উয়ন্নয়নশীল দেশে, যা দারিদ্র্যের হারকে উসকে দিয়েছে। করোনা মহামারীর প্রভাবে গত বছর বাংলাদেশের ২৮ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির এই নিম্ন প্রবৃদ্ধি দেশের আরও ৫০ হাজার মানুষকে এ বছর দারিদ্র্যসীমায় ঠেলে দিতে পারে। একই সঙ্গে বাড়বে অপুষ্টির হার।

বিআইডিএসের এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘উন্নয়ন, ন্যায্যতা এবং স্বাধীনতা’। দ্বিতীয় দিন বৈশ্বিক খাদ্য মূল্যবৃদ্ধি এবং দেশের সার্বিক খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপনের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হয়। ‘২০১৯ থেকে বৈশ্বিক সংকট : বাংলাদেশের কৃষিজ খাদ্যপণ্যের প্রভাব’ শীর্ষক প্রবন্ধটি উপস্থাপন করেন ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) প্রতিনিধি আঙ্গা প্র্যাডেসা।

উপস্থাপিত প্রবন্ধে বলা হয়, বৈশ্বিক নিম্ন প্রবৃদ্ধির হার এ বছর বাংলাদেশে আরও ৫০ হাজার মানুষকে দারিদ্র্যসীমার নিচে ঠেলে দিতে পারে। আর নতুন করে অপুষ্টির শিকার হতে পারে আরও দুই লাখ মানুষ। করোনা মহামারী এবং যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক খাদ্যবাজারে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এর প্রভাবে গত বছর বাংলাদেশে নতুন করে ২৮ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। অর্থাৎ করোনা মহামারীতে প্রায় ১ দশমিক ৭ শতাংশ পর্যন্ত দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধি পেয়েছিল। একই সময় নতুন করে অপুষ্টির শিকার হয়েছে ৩১ লাখ মানুষ, যা এ বছর ৩৩ লাখে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা করছে আইএফপিআরআই।

সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ গবেষক ড্যানিয়েল রেস্নিক বলেন, ‘আগামী বছরের শুরুতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচন ইস্যুতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন যেকোনো নিষেধাজ্ঞা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। দেশের মোট জিডিপির প্রায় ২৪ শতাংশ বা ৮৩ বিলিয়ন ডলারই কৃষিজাত পণ্যের দখলে। আর দেশের মোট কর্মসংস্থানের অর্ধেকও এ খাতেরই। তবে মোট কৃষির মাত্র অর্ধেক অংশ প্রাথমিক কৃষির। আর বাকিটা কৃষি প্রক্রিয়াজাত অংশের। অর্থাৎ ক্ষুদ্র কৃষি থেকে বাণিজ্যিক দিকে যাচ্ছে কৃষি খাত।’

সম্প্রতি বাংলাদেশে দারিদ্র্যসীমার যে হার প্রকাশিত হয়েছে, তা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি কম ছিল বলে মন্তব্য করেন আইএফপিআরআইয়ের পরিচালক জেমস থুরলো। আলোচনায় অংশ নিয়ে সংস্থাটির পরিচালক পাউল দরশ বলেন, ‘ধানের বাইরে বাংলাদেশের অ্যাগ্রিফুড সিস্টেম বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দিনে দিনে বড় হচ্ছে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও তীব্রভাবে পড়বে সামনে, যা কৃষকদের ঝুঁকি বাড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।’

এ সেশনের মুক্ত আলোচনায় বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘এতসব সমস্যার মধ্যেও আমরা মানুষদের আশাবাদী হতে দেখছি। উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও ৩০ জেলার ৮০ শতাংশ মানুষ তাদের ভবিষ্যৎ শিশুদের নিয়ে খুবই আশাবাদ ব্যাক্ত করেছে। তাদের মাত্র ৩০ শতাংশ বলেছে, আগের চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আমাদের একটি সার্ভেতে এমন তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি আমরা সামনে উপস্থাপন করব।’

জবাবে পাউল দরশ বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে ৮০ শতাংশ আশাবাদ ব্যক্ত করাটা সত্যিই আশ্চর্যজনক। অন্য দেশের ক্ষেত্রে এমনটা দেখা যায় না। আর তারা হয়তো তাদের ঝুঁকি না বুঝেই আশাবাদী হচ্ছে।’

সন্ধ্যায় কেয়ার ওয়ার্ক এবং ডমেস্টিক ওয়ার্ক নিয়ে একটি প্রবন্ধ তুলে ধরা হয় সম্মেলনে। বিআইডিএস উপস্থাপিত এ প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীদের গৃহস্থালি কাজের মূল্য জিডিপির প্রায় ১৫ শতাংশ। সম্প্রতি গৃহের অভ্যন্তরীণ অবৈতনিক কাজের মূল্য জিডিপিতে অন্তর্ভুক্তের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রতিবেদনে বলা হয়, গৃহস্থালি ও কেয়ার ওয়ার্ক কাজের মূল্য প্রায় ৭৩ বিলিয়ন ডলার। এ ক্ষেত্রে নারীদের কাজের মূল্য জিডিপির প্রায় ১৪.৮ শতাংশ। আর পুরুষের কাজের মূল্য জিডিপির প্রায় ২.৮ শতাংশ। সম্প্রতি বিবিএসের প্রকাশিত টাইম ইউজ সার্ভের তথ্য নিয়ে এ হিসাবটি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, গৃহকর্মে নারীরা পুরুষের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি কাজ করে। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি - dainik shiksha সব প্রাথমিকে তারুণ্যের উৎসবে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব নিয়ে কর্মসূচি ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি - dainik shiksha ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে দায় নেবে না ইউজিসি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের - dainik shiksha পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তি: কপাল খুললো ভুল চাহিদায় সুপারিশ পাওয়াদের কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি আবেদন শেষ হচ্ছে কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু রোববার অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ - dainik shiksha অনার্স ২য় বর্ষে ফের ফরম পূরণের সুযোগ আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি - dainik shiksha আলামত ধ্বংস বিভাগ থেকে বের হতো প্রশ্ন, কর্মচারী আকরামের স্বীকারোক্তি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028278827667236