মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজনিয়ম অগ্রাহ্য করেই বাড়ছে টিউশন ফি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি বাড়াতে হলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধান মেনে চূড়ান্ত অনুমোদনের পরই তা কার্যকর করা যায়। কিন্তু কোনো নিয়মের তোয়াক্কাই করছে না রাজধানীর মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ আগামী বছর থেকে বেতন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে বিরাজ করছে ব্যাপক ক্ষোভ। তবে সন্তানের সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় সরাসরি মুখ খুলছেন না কেউ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক টিউশন ফি ২০০ টাকা হারে বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। আগামী বছরের জানুয়ারি মাস থেকে তা কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  শরীফুল আলম সুমন।

প্রতিষ্ঠানটির নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমার ছেলের মাসে বেতন এক হাজার ৫৫০ টাকা। এখন আবার ২০০ টাকা বাড়ানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলে তো খুব একটা পড়ালেখা হয় না। প্রাইভেট-কোচিংয়ের পেছনেই সারা দিন দৌড়াতে হয়। নতুন কোনো পে স্কেলও হয়নি। তাহলে টিউশন ফি কোন যুক্তিতে বাড়াতে হবে?’

জানা যায়, বর্তমানে মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ক্যাম্পাস আছে পাঁচটি। এতে পড়ালেখা করছে প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষার্থী। প্রত্যেক শিক্ষার্থী মাসে ২০০ টাকা করে বেশি ফি দিলে বছরে আট কোটি ৮৮ লাখ টাকা বেশি আয় করতে পারবে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।

টিউশন ফি বৃদ্ধিসংক্রান্ত একটি পরিপত্র রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। তাতে বলা হয়েছে, শুধু ঘাটতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান ঘাটতি মেটাতে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বাড়িয়ে ওই ঘাটতি মেটাতে পারবে। এই অর্থ আদায়ের প্রস্তাব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশসহ অধ্যক্ষ বা প্রধান শিক্ষককে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা প্রস্তাবটি পরীক্ষা করে তা যথাযথ প্রতীয়মান হলে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (শিক্ষা) কাছে উপস্থাপন করবেন। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক অনুমোদন করলে ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।

তবে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বৃদ্ধিসংক্রান্ত কোনো আবেদন তাদের কাছে যায়নি।

এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয়ে কোনো ঘাটতি নেই। বরং প্রতি মাসে কয়েক কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের বেতন ৮০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে শ্রেণিভেদে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আছে। গড়ে এক হাজার ২০০ টাকা হিসাবে মাসিক বেতন ধরলে ৩৭ হাজার শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মাসে আদায় করা হয় চার কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ইংরেজি ভার্সনের বেতন বেশি হওয়ায় তাদের ধরলে আয় আরো বেশি। আর পাঁচটি ক্যাম্পাসে প্রায় ৭৫০ জন শিক্ষকের গড়ে ৪০ হাজার টাকা বেতন ধরলে ওই খাতে মাসিক ব্যয় দাঁড়ায় তিন কোটি টাকা। আর ২০০ কর্মচারীর মাসে গড়ে ২০ হাজার টাকা করে বেতন ধরলে দাঁড়ায় ৪০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া একজন শিক্ষার্থীকে বছরে ছয়বার পরীক্ষার ফি দিতে হয়। ওই খাতে বছরে আয় হয় ছয় কোটি ৬৬ লাখ টাকা। সেই খাত থেকে মাসে আয় প্রায় ৫৫ লাখ টাকা। আর ক্যাম্পাসগুলো নিজস্ব হওয়ায় বিদ্যুৎ, পানির বিল ছাড়া অন্য কোনো বড় খরচ নেই। মাসে বর্তমান বেতনেই পাঁচ কোটি টাকার বেশি আয় হলেও সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশি খরচ হয় না। ফলে কোনোভাবেই এই প্রতিষ্ঠানের আয়ে ঘাটতি থাকার কথা নয়। এর পরও জানুয়ারি থেকে মাসে ২০০ টাকা করে টিউশন ফি বাড়ালে বছরে আয় আরো প্রায় ৯ কোটি টাকা বাড়বে।

তবে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসাইন বলেন, ‘গভর্নিং বডির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীপ্রতি ২০০ টাকা হারে বেতন বাড়ানো হচ্ছে। তবে আমরা কয়েক মাস আগেই জানিয়ে দিচ্ছি, যাতে কারো সমস্যা না হয়। চার বছর ধরে আমাদের স্কুলে বেতন বাড়ানো হয় না। তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানে বিশুদ্ধ পানি, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমসহ নানা সুবিধা বাড়ছে। আর আশপাশের প্রতিষ্ঠানগুলোর বেতনও আমাদের চেয়ে বেশি। আমাদের স্কুলের এমপিও আমরা সারেন্ডার করেছি। ফলে সরকারের কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেই না, তাই বেতন বাড়াতে হচ্ছে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটি এখনো এমপিওভুক্ত হিসেবেই আছে। তবে বর্তমানে সরকারি অনুদানের টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা হয় না।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির যেসব এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন, তাঁদের কাছ থেকে সাদা কাগজে এমপিও ‘সারেন্ডারের’ একটি আবেদন নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানটি একটি ফাউন্ডেশনের আওতায় নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হাজি নূর মোহাম্মদ হওয়ায় বর্তমান গভর্নিং বডির অধীনে ফাউন্ডেশনের অনুমতি এবং এমপিও বাতিলে রাজি হয়নি মন্ত্রণালয়।

এ ছাড়া স্কুলটি নিয়ে আছে নানা অভিযোগ। মাউশি অধিদপ্তরের রেকর্ড অনুযায়ী, ফরহাদ হোসাইন সহকারী শিক্ষক হলেও তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকদের নির্ধারিত সময়ের বেশি ডিউটি করানো হয়। প্রভাতি শাখায় শিক্ষকদের থাকার কথা সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত, অথচ শিক্ষকদের থাকতে হয় ২টা পর্যন্ত। আর দিবা শাখায় শিক্ষকদের দায়িত্ব দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হলেও শিক্ষকদের যেতে হয় সকাল ১০টায়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান বলেন, ‘সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিয়মের মধ্যে থেকেই চলতে হবে। এর ব্যত্যয় হলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036499500274658