নিয়োগে মেধাই হোক প্রধান বিবেচ্য

তন্ময় কুমার হীরা |
সরকারি চাকরি, বিশেষ করে প্রথম শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি আরোপের সবচেয়ে বড় ভুল, সমস্যা ও আপত্তি হচ্ছে যে, এখানে জন্মগত, সামাজিক সীমাবদ্ধতা ও সুবিধা মেধার বিকল্প হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে। কিন্তু মেধার কোনো বিকল্প নেই। মেধার অবমূল্যায়নে সমতা প্রতিষ্ঠিত হয় না বরং অসমতাই প্রতিষ্ঠিত হয়।
 
মেধার ওপর কোনো সংরক্ষণ থাকা উচিত নয়। মেধাকে মুক্ত করা উচিত। যারা প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োজিত বা রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকে, তাদের অবশ্যই দক্ষ, যোগ্য ও মেধাবী হতে হয়। অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের সেবাদানকারী কর্মকর্তা বাছাই মানে মেধা বাছাই। দুঃখের বিষয়, মেধা বাছাইকর্মে এখন মাত্র ৪৪ শতাংশ মেধা বাছাই করা হচ্ছে। মেধাবীরা মাত্র ৪৪ শতাংশ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এর চেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় পরাজয় আর হয় না। মেধাই যদি প্রতিযোগিতা করতে না পারে, তবে রাষ্ট্র কীভাবে মাথা তুলে দাঁড়াবে? 
 
অবিকশিত মেধাকে রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োগ দিলে তাতে তাদের অগ্রসরতার সুযোগ সৃষ্টি হয় না। তা আপাতদৃষ্টিতে অগ্রসরতার সুযোগ বলে মনে হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে অগ্রসরতার সুযোগ নয়। অগ্রসরতার সুযোগ মেধা বিকাশের সুযোগ এবং আর্থিক সহায়তা। অবিকশিত মেধা নিয়োগে যেমন রাষ্ট্রীয় ক্ষতি হয়, তেমনি অনগ্রসরদেরও স্থায়ী অগ্রসরতার এবং টেকসই উন্নয়নের কোনো সুযোগ সৃষ্টি হয় না। মেধাকে বিকশিত করতেই হয়। অবিকশিত মেধা নিয়োগ কোনো অর্থেই কল্যাণকর নয়। ওটা লোক দেখানো কল্যাণ হতে পারে; প্রকৃত কল্যাণ নয়। মেধা অবিকশিত অবস্থায় রাষ্ট্রের সেবায় কাউকে নিয়োগ দিলে তাতে তাদের শ্রদ্ধা করা হয় না বরং অশ্রদ্ধাই করা হয়। এতে তাদের মেধার বিকাশগত সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়। আবার একে ঠিক সুযোগও বলা যায় না। বরং তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ দিলে এবং মেধাকে বিকশিত করে রাষ্ট্রীয় কাজে প্রবেশের সুযোগ দিলে তাকে সত্যিকার সুযোগ বলে।
 
মানুষ ব্যতীত অন্য কোনো প্রাণীর মেধা ও সৃজনশীলতা নেই। তাই তারা সভ্যতা নির্মাণ করতে পারে না। সভ্যতা বলতে মানব সভ্যতাকেই বোঝায়। যে মেধার বদৌলতে সভ্যতা নির্মিত হয়, সে মেধাকে নিরুৎসাহিত করা সভ্যতা ধ্বংসকারী আচরণ ও নীতি। রাষ্ট্রের কাছ থেকে সে আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না। একটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মেধা বিকাশের সবরকম সুবিধা প্রদান করবে। রাষ্ট্র পরিচালিত হবে মেধাবীদের দ্বারা। মেধার কোনো বিকল্প নেই। মেধার সঙ্গে কোনো কিছুই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। দেশ কীভাবে এগোবে, যদি মেধার মূল্য না দেওয়া হয়? অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, মোটেই না। দেশ প্রায় মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু সমাজ কতটা সভ্য হয়েছে? মানুষ কতটা নিরাপদ হয়েছে? মানুষের মর্যাদা কতটা নিশ্চিত হয়েছে? এখন কেউ কাউকে শ্রদ্ধা করে না। অর্থাৎ মনুষ্যত্ব বিলুপ্তপ্রায়। কারণ, মেধা ও মননের চর্চা হচ্ছে না। শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। ফি বছর প্রায় প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। এসবই মেধা ও মননকে নিরুৎসাহিত করার এবং মেধার অবমাননা ও অনুপস্থিতির ফসল। প্রজাতন্ত্রের সেবায় নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি আরোপের ফলে মেধাকে চরম অবমাননা করা হচ্ছে। যারা মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করবেন, তারা এখন মানুষের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করায় ব্যস্ত। কারণ এরা মেধাহীন। এই কোটা পদ্ধতি তৈরিতে যুক্তির চেয়ে আবেগকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। নিছক আবেগ। কোটায় নিয়োগ মেধায় নিয়োগকে নিশ্চিত করে না, বরং মেধাহীনতার নিয়োগকেই নিশ্চিত করে।
 
শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050191879272461