মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট (বিএফআরআই)-এর বৈজ্ঞানিক কর্মকতা (অস্থায়ী রাজস্ব) পদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও উত্তীর্ণের তালিকায় নাম এসেছে এক শিক্ষার্থীর।
তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই পরীক্ষার্থীর রোল নাম্বার অন্য কেউ অংশ নিয়ে পূরণ করেছিল। যার কারণে ভুলভাবে ওই পরীক্ষার্থীর নাম পাসের তালিকায় চলে এসেছে।
শনিবার (২৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ৪২টি পদের বিপরীতে ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। একই দিন দিবাগত রাত সাড়ে ৪টার দিকে ১২৭ জনের মৌখিক পরীক্ষার জন্য তালিকা প্রকাশ করা হয়।
তালিকায় শামসুন্নাহার (রোল নং ২১৯০) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করলেও তার রোল উত্তীর্ণের তালিকায় আসে। শামসুন্নাহারের বাড়ি বগুড়ায়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ছাত্রী।
শামসু্ন্নাহারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি বগুড়ায় অবস্থান করছেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি।
তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা দিয়ে কোন লাভ হয় না, তাই পরীক্ষা দিতে আসিনি। পরে এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে আমাকে বিএফআরআই থেকে সাইফ নামে এক কর্মকর্তা ফোন দিয়ে রোববার হুমকি দিয়েছেন, যেহেতু আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিইনি, তাই যেন ভাইভা দিতে না আসি।’
জানা যায়, মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৮২০। কিন্তু পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১২১৪ জন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়ে বলেন, বিএফআরআইয়ে ভালো পরীক্ষা দিয়ে লাভ হয় না। পরীক্ষা এখানে শুধু আইওয়াশ। হয় ঘুষ, না হয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদবির ছাড়া চাকরি হয় না। গত কয়েকটি নিয়োগে এমনই হয়েছে। তাই আমরা পরীক্ষা দিতে যাই না।
এক পরীক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, তারা ভালো পরীক্ষা দিয়েও পরীক্ষার ফলাফলের তাদের নাম নেই। এখানে অনেক দুর্নীতি হয়। যাদের নিবে আগে থেকেই ঠিক থাকে, পরীক্ষায় তাদের অসদুপায়ে তালিকাভুক্ত করা হয় টাকার বিনিময়ে। বিএফআরআই নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতির কথা ওপেন সিক্রেট।
পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরীক্ষার খাতায় কোডিং করা হয়। কাজেই খাতা মূল্যায়নের সময় খাতা মূল্যায়নকারর এটা বুঝতে পারেন না খাতাটি কার। তবে তারা বলেন, চাইলে যারা কোডিংয়ের সঙ্গে জড়িত শুধু তারাই পছন্দের প্রার্থীকে শনাক্ত করতে পারেন। সেক্ষেত্রে যাদের পরীক্ষায় ঠেকানো হবে তাদের খাতাগুলো আলাদা করে পছন্দের অথবা অনুগত মূল্যায়নকারীকে দিয়ে খাতাগুলো মূল্যায়ন করিয়ে লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর দিয় দেন অথবা যারা ভাল পরীক্ষা দিয়ছেন তাদের খাতার কভার পৃষ্ঠা ছিঁড়ে পছন্দের প্রার্থীদের খাতায় লাগিয়ে দেন।ফলে অনেকে অনেক ভাল পরীক্ষা দিয়েও চান্স পান না।আবার অনেক অযোগ্যরা টিকে যান।আর এই কাজগুলো করা হয় গভীর রাতে যখন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা পরিচালনা টিম চলে যান।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: এ ব্যাপারে পক্ষ থেকে বিএফআরআই মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, আসলে পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে পাস করার তথ্যটি সঠিক নয়। এটা একজন পরীক্ষার্থী ওই পরীক্ষার্থীর রোল নাম্বার ব্যবহার করেছে। এটা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর কাজ হতে পারে। এ নিয়োগ পরীক্ষাকে বিতর্কিত করার জন্যও কেউ এ কাজটি করতে পারে। হাজার হাজার পরীক্ষার্থীর মধ্যে কেউ যদি রোল নাম্বার ভুল করে তবে সেখানে কর্তৃপক্ষ কীভাবে তা ধরবে। তবে ভাইবার সময় অবশ্যই এসব ধরা পড়বে। ভাইবায় প্রতিটি ডকুমেন্ট চেক করা হয়।