নিয়োগ-ভর্তিতে জালিয়াতি চক্রের এক সদস্য আটক

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

রাজশাহীতে বিভিন্ন নিয়োগ ও ভর্তি পরীক্ষার জাল প্রশ্নপত্র ও প্রবেশপত্র তৈরি করে ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেয়া চক্রের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন কার্ড, পরীক্ষার প্রবেশপত্র, জীবন বৃত্তান্ত, নাগরিক সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। 

গ্রেফতারকৃতের নাম নয়ন ইসলাম (২৫)। তিনি রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার অচিনঘাট এলাকার আজগর হোসেন মন্ডলের ছেলে। নয়ন রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকায় বসবাস করতেন। গত ৬ মার্চ বেনাপোল থেকে নয়নকে গ্রেফতার করা হয়। সেখান থেকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের কাছে এ চক্রের মূল হোতা নয়নকে হস্তান্তর করে বেনাপোল থানা পুলিশ।

বুধবার (৮ মার্চ) দুপুরে রাজশাহী মহানগর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক এ তথ্য জানান।  

তিনি জানান,  দেশব্যাপী আসন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ করে দেয়া ও বিভিন্ন চাকরির প্রলোভন দিয়ে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু এবং চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এ চক্রের সদস্যরা নগরীর বোয়ালিয়া থানার নিউমার্কেট সংলগ্ন পিজি টাওয়ার বিল্ডিংয়ের ১০ম তলায়  অবস্থান করে এ কাজ করছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। 

অভিযোগ এখান থেকেই তারা নগরীর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের মালিকদের সহযোগিতায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ও চাকরি প্রত্যাশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রের কপি এবং চুক্তি মোতাবেক অর্থের বিনিময়ে তাদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার মূল সনদপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড সংগ্রহসহ প্রাথমিক খরচ বিকাশ, রকেট এবং নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নগদ টাকা সংগ্রহ করে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আল মামুনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) আব্দুল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক মশিয়ার রহমান, এসআই আশরাফুল ইসলাম ও তার টিম জালিয়াত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেন।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম নগরীর পিজি টাওয়ারের ১০ম তলায় অভিযান করলে জালিয়াত চক্রের সদস্যরা গোয়েন্দা পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালিয়ে যায়। পরে ভবনের মালিকের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পারে, ভাড়াটিয়ার নাম  নয়ন ইসলাম। তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে তার অন্যান্য সহযোগীদের নিয়ে বসবাস করতো। বাড়ির মালিক আরও জানায় নয়ন নিজেকে কখনও ডাক্তার, কখনও সরকারি কর্মকর্তা বা এনজিও কর্মী পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন চাকরি প্রার্থী ও ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অনেকে এখানে আশা যাওয়া করে।

পরে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাক সহ গোয়েন্দা পুলিশ প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেন। এ চক্রের সদস্যরা যেন  বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দেশের সব বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরসমূহে বিশেষ চিঠি দেন। কিন্তু তার পূর্বেই প্রতারক নয়ন ভারতে পালিয়ে যায়।

পরবর্তীতে নয়ন গত ৬ মার্চ বিকেলে যশোর জেলার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সময় অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বেনাপোল ইমিগেশন পুলিশ তাকে আটক করে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করেন। পরে এ বিষয়টি  অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস)কে জানান।

গত ৭ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫ পুলিশ কমিশনার নির্দেশক্রমে গোয়েন্দা পুলিশের ওই টিম যশোর জেলার বেনাপোল পোর্ট থানায় গিয়ে নয়নকে নিয়ে আসে।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, তিনি ও তার সহযোগী পলাতক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলর বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ছাত্র সনেট এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন সহযোগী পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে চাকরি প্রার্থী ও বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইল ফোনের অ্যাপস (হোয়াটস অ্যাপস, ভাইবার, টেলিগ্রাম) এর মাধ্যমে যোগাযোগ করে তাদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে।  বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দিবে মর্মে আশ্বাস দিয়ে ডিজাটাল ডিভাইস (মোবাইল ফোন) ব্যাবহার করে মোবাইল ফিন্যান্স (বিকাশ, রকেট, নগদ) অ্যাকাউন্ট এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়।

পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। গ্রেফতারকৃত আসামি সহ পলাতক আসামিদের বিরুদ্ধে বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পেনাল কোডে একটি মামলা দায়ের করা করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027480125427246